সম্পাদকীয় ১...
সত্যমেব
ন্যায়বিচার শব্দটিতেই ন্যায়ের ধারণা নিহিত। ন্যায় হইতে বিযুক্ত হইলে বিচারের অর্থ থাকে না। ন্যায় কী, ন্যায় কাহাকে বলে, তাহা লইয়া বিস্তর তর্ক আছে, থাকিবে, কিন্তু একটি বিষয়ে কোনও তর্ক নাই। ন্যায়ের মাধ্যমে সত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া জরুরি। সত্যের স্বরূপ অবশ্যই প্রায়শ জটিল, অনেক সত্যই এক এক দিক হইতে এক এক রূপে প্রতিভাত হয় আকিরা কুরোসাওয়া পরিচালিত ‘রশোমন’ চলচ্চিত্র স্মরণীয়। কিন্তু সত্য যখন এক এবং অদ্বিতীয়? অন্তত তাহার নির্দিষ্টতা সম্পর্কে যখন কাহারও কোনও সংশয় নাই? যথা, ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল বিজয়কুমার সিংহের জন্মসাল। তিনি যে ১৯৫১ সালে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন, তাহা কেহ অস্বীকার করে নাই, সুপ্রিম কোর্টও নহে। কিন্তু তাঁহার চাকুরির ক্ষেত্রে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দই তাঁহার জন্মসাল হিসাবে নথিভুক্ত হইয়াছে এবং সুপ্রিম কোর্ট তাহাই বহাল রাখিয়াছে। বহাল রাখা অযৌক্তিক নহে, সম্প্রতি এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলিবার আগে অবধি সেনাপ্রধান নিজেও ওই বছরটিকেই আপন জন্মসাল হিসাবে মানিয়া লইয়াছিলেন। যাহা এত দিন মানিয়াছেন, তাহা এখন অমান্য করিতে পারেন না ‘এস্টোপেল’ নামে অভিহিত এই আইনি যুক্তিতেই সুপ্রিম কোর্ট সেনাপ্রধানের জন্মসাল সংশোধনের আবেদন খারিজ করিয়া দিয়াছে। ইহাতে সরকার বনাম সেনাপ্রধান দ্বৈরথের অবাঞ্ছিত পর্বটি আর বেশি দূর গড়াইতে পারে নাই। তাহা স্বস্তিকর। কিন্তু সত্যের মূল্যে সেই স্বস্তি সংগ্রহ করিতে হইল না কি? সেনাপ্রধানের জন্মসাল হিসাবে যে বছরটি নথিভুক্ত তথা আইনত স্বীকৃত থাকিয়া গেল, তাহা তো তাঁহার প্রকৃত জন্মসাল নহে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারের পরে সেই ভুল তারিখটিই প্রামাণ্য বলিয়া গণ্য হইতেছে এবং হইবে। ইহা কি ন্যায়ের পরিপন্থী নহে? বিচার যদি পদ্ধতি তথা আইনি খুঁটিনাটির ঊর্ধ্বে উঠিয়া বৃহত্তর সত্য তথা ন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করিতে না পারে, তাহা হইলে ন্যায়বিচার কথাটির মর্যাদা থাকে কি?
অনুমান করা অসঙ্গত বা অযৌক্তিক হইবে না যে, সেনাপ্রধানের বয়স সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্ট জল আর গড়াইতে দিতে চাহে নাই। বিশেষত, সেনাপ্রধানের ‘যথার্থ’ বয়স কী, তাহা বিচার করিবার ভার অন্য আদালত বা ট্রাইবুনালের উপর দিতে হইত, সুপ্রিম কোর্ট তাহা করে নাই। একটি দেশের সেনাপ্রধানের বয়স কী, তাহা লইয়া আদালতে বা ট্রাইবুনালে বিচার চলিবে, ইহা নিশ্চয়ই কাম্য নহে। আবার, সেই অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি এড়াইতে গিয়া সত্যপ্রতিষ্ঠায় বিরত থাকাও ন্যায়ের সহিত সঙ্গত নহে। এই উভয়সঙ্কটের মীমাংসা কী? অন্য ভাবে বলিলে, এই মামলার শ্রেষ্ঠ সমাধান কী হইতে পারিত? তাহার সদুত্তর স্পষ্ট এই মামলা হওয়াই উচিত ছিল না। সাধারণ বুদ্ধিই বলিয়া দেয় যে, এই মামলাটি সেনাপ্রধান এবং সরকার কাহারও শ্লাঘার কারণ হয় নাই, ইহা আদালত অবধি না গড়াইলেই শ্রেয় হইত। এবং, এ ক্ষেত্রে দায়ের সিংহভাগ সরকার তথা তাহার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের উপরেই বর্তায়, তাহাও অনস্বীকার্য। এই ধরনের পদ্ধতিগত সমস্যা অনেক আগেই শান্তিপূর্ণ ভাবে মীমাংসা করিয়া লওয়া উচিত ছিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক তাহার জন্য যথেষ্ট উদ্যোগী হইয়াছেন, এমন প্রমাণ নাই। আবার সেনাপ্রধানও এত দিন যে প্রশ্ন তোলেন নাই, আজ তাহা লইয়া সুপ্রিম কোর্ট অবধি চলিয়া গিয়া বিচক্ষণতার পরিচয় দেন নাই। এই ঘটনাচক্র ভারতীয় শাসনতন্ত্রের পক্ষে উদ্বেগজনক। আইন বা সংবিধান শাসনতন্ত্রের কাঠামো গড়িয়া দিতে পারে, ‘নীতি’ স্থির করিয়া দিতে পারে, তন্ত্রটির যথাযথ ব্যবহার নির্ভর করে তান্ত্রিকদের উপর। এ ক্ষেত্রে তান্ত্রিকরা ব্যর্থ হইয়াছেন। ব্যর্থতা হইতে প্রয়োজনীয় শিক্ষা লওয়া অত্যন্ত জরুরি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.