ফের স্বনির্ভর দলের বাধায় আটকে গেল স্কুলের মিড-ডে মিল রান্না। দেড় বছর পরে মিড-ডে মিল রান্না চালু হতে গিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হতাশ স্কুলের পড়ুয়ারা। পঞ্চম শ্রেণির রানি মাড্ডি, ষষ্ঠ শ্রেণির অষ্টমী সোরেনদের কথায়, “সোমবার আমাদের থালা আনতে বলা হয়েছিল। কিন্তু খাওয়া আর হল না! খালা নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হয়।” সমস্যাটি দুবরাজপুরের পদুমা পঞ্চায়েতের কুমারশীর্ষা মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের।
স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কে রান্না করবে, এই নিয়ে কাজিয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ ছিল কুমারশীর্ষা মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের মিডডেমিল রান্না। প্রশাসন, পঞ্চায়েত, স্কুল পরিচালন সমিতি সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে একটা সমাধান সূত্র বের করেছিল দিন-দশেক আগেই। তা সত্ত্বেও রান্না বন্ধ থাকায় পড়ুয়াদের পাশাপাশি হতাশ অভিভাবক এবং শিক্ষকেরা।
সমস্যা আসলে কী? ওই স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৩ সালে স্থাপিত ওই স্কুলে বর্তমানে ২০৬ জন পড়ুয়া ও ৬ জন শিক্ষক আছেন। এই স্কুলের উপরে নির্ভর করে আছে কুমারশীর্ষা, কল্যাণপুর, কাঞ্চননগর, কুলতোড়, কড়কড়ি-সহ ১০-১২টি গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা। ২০০৬ সালে ডিসেম্বর মাসে অন্যান্য স্কুলের মতো এই স্কুলেও শুরু হয় মিড-ডে মিল। স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রদাস চক্রবর্তী বলেন, “স্কুলে রান্না করার জন্য প্রথমে এলাকার মোট ১৮টি স্বনির্ভর দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও মাত্র দু’টি স্বনির্ভর দল তাতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু তারাও আর রান্না করতে পারবে না বলে মাস দু’তিন পরে জানিয়ে দেয়। এ ব্যাপারে বিডিও-র সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল। তাঁর নির্দেশ মতো স্কুলের পাশে দুই মহিলা উত্তরা বাগদি ও কবিতা বাগদির সঙ্গে মিড-ডে মিল রান্না করে দেওয়ার চুক্তি করে স্কুল। এ ভাবেই তিন বছর রান্না হয়েছে।” প্রধান শিক্ষক জানান, ২০১০ সালে ব্লক থেকে নির্দেশ আসে, স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের হাতে রান্নার দায়িত্ব তুলে দিতে হবে। এ ব্যাপারে ব্লকে আবেদন জানায় স্বনির্ভরদলগুলি। কিন্তু দীর্ঘদিন রান্নার দায়িত্ব সামলে আসা উত্তরা বাগদি ও কবিতা বাগদিরা সেই প্রস্তাব মেনে নেননি।”
|
সমস্যা শুরু সেখান থেকে। এই টানাপোড়েনে দীর্ঘদিন রান্না বন্ধ থাকে। এর পরে একাধিকবার বিডিও, স্কুল পরিচালন সমিতি, অভিভাবক এবং এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোনও সমাধান সূত্র মেলেনি। তাই সমস্যা সমাধানের জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েতকে দায়িত্ব নেওয়ার নির্দেশ দেন বিডিও। কারা রান্না করতে ইচ্ছুক ফের নতুন করে স্বনির্ভর দলগুলিকে আবেদন করতে বলা হয় এবং সেই সঙ্গে রান্নার কাজে তাঁদের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকতে পারে না ওই দুই মহিলাকেও বোঝানো হয়। এর পরে ৫টি স্বনির্ভর দল প্রতিমা, বাসিন্তীমাতা, মন্দিরা, নবজাগরণ ও বিধাতা নামে পুনরায় আবেদন করে। ছুটিছাটা বাদ দিয়ে বছরে দশ মাস স্কুল হয়। ঠিক হয় স্বনির্ভর দল সাত মাস এবং বাকি তিন মাস রান্না করতে পারবেন ওই দুই মহিলা। সেই মতো বিডিওর কাছ থেকে লিখিত নির্দেশ আসে স্কুলে।
স্কুলের শিক্ষকেরা এবং ওই দুই মহিলার জানান, সোমবার তাঁরা রান্নার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সেই সময় স্বনির্ভর দলের কিছু সদস্য এসে জোর করে বাসনপত্র স্টোররুমে ঢুকিয়ে তালা দিয়ে দেন। ওই দুই মহিলার ক্ষোভ, “এত দিন পরে স্কুলের ছেলেমেয়েরা খেতে পেত। ওদের বাধায় আর হল না। কী ভাবে সমস্যা মিটবে জানি না।” অন্য দিকে, যাঁরা এ দিন রান্নার কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন বাসন্তীমাতা স্বনির্ভর দলের জ্যোৎস্না বাগদি, আশালতা বাগদি, নবজাগরণ দলের কল্যাণী বাগদিরা বলেন, “বিডিও-র কাছ থেকে শুনেছিলাম স্বনির্ভর দলের সদস্যরা রান্নার সুযোগ পাবেন। কিন্তুু তারা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে আমাদের না জানিয়ে ওই মহিলা দু’জনকে দিয়ে রান্না করানোয় বাধা দিয়েছি।” বৈঠকের সিদ্ধান্তের কথা জানতেন কি না সেই প্রশ্নের উত্তরে তাঁরা বলেন, “সেটা জানলে বাধা দিতাম না।” তারামাতা স্বনির্ভর দলের নেত্রী তথা স্বনির্ভর দল সঙ্ঘের কোষাধ্যক্ষ শান্তিরানি ঘোষ বলেন, “আমরা চাই না রান্না বন্ধ থাকুক। তাই নির্দেশ মতো রান্না করার জন্য নতুন করে আবেদন জানানো হয়েছিল। বৈঠকে আমাদের ডাকা হয়নি। তাই স্কুলের উচিত ছিল দলগুলিতে সেই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া।” প্রধান শিক্ষক বলেন, “এ ব্যাপারে স্কুল পরিচালন সমিতি, অভিভাবক, পঞ্চায়েত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক নকুল ঘোষ বলেন, “ঘটা করে সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়নি ঠিকই। কিন্তু সিদ্ধান্তের কথা সবাই জানেন।” তাঁর দাবি, “বিশৃঙ্খলা তৈরি করার জন্য তাঁরা এ কাজ করেছেন।” যুগ্ম বিডিও মানিক সিংহমহাপাত্র বলেন, “বিষয়টির কথা শুনেছি। আশাকরি সমাধান সূত্র বেরবে।” |