মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকে উত্তরবঙ্গের ছয় সভাধিপতিকে কেন ডাকা হল না, সেই প্রশ্ন তুলে রাজ্য সরকারের সমালোচনা করলেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা জিটিএ-র বাস্তবায়নে মোর্চা নেতৃত্ব আন্দোলনের যে হুমকি দিচ্ছেন, তা আসলে ‘গটআপ’ বলেও দাবি করেছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী।
রবিবার দুপুরে শিলিগুড়ির অনিল বিশ্বাস ভবনে এক সাংবাদিক বৈঠকে করেন সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোকবাবু বলেন, “১৮ জন মন্ত্রী, উত্তরবঙ্গের প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে ৬০ জন ভিআইপি ছাড়াও উত্তরবঙ্গের প্রশাসনিক আধিকারিকরা ছিলেন। কিন্তু উত্তরবঙ্গের পাঁচটি জেলা পরিষদ ও শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ মিলিয়ে ছ’জন সভাধিপতিকেই ডাকা হয়নি। এটা কী করে হয়?” তাঁর আরও বক্তব্য, “স্টেডিয়ামের মঞ্চ থেকেই জলপাইগুড়িতে পঞ্চায়েত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হল। অথচ সেখানেও শিলিগুড়ির সভাধিপতিকে ডাকা হয়নি। এটা কি গণতন্ত্র? সভাধিপতিরা কেউ তৃণমূলের নন বলেই তাঁদের ডাকা হয়নি।” |
অশোকবাবুর এই অভিযোগকে অবশ্য গুরুত্ব দিতে চাননি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “প্রশাসনিক বৈঠক ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কাকে ডাকবেন, তিনিই ঠিক করবেন। সেটা কি অশোকবাবুরা ঠিক করে দেবেন? আসলে জনগণ ওঁদের বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। প্রচারে থাকার জন্য মাঝে মধ্যে দু-একটা মনগড়া অভিযোগ করছেন।”
প্রাক্তন পুরমন্ত্রীর আরও দাবি, “বিমল গুরুঙ্গ এক দিকে জিটিএ চুক্তিপত্র পোড়ানোর হুমকি দিচ্ছেন, অন্য দিকে মুখ্যমন্ত্রী সভায় গিয়ে মোর্চার প্রতিনিধিরা বসে আছেন। এটা থেকেই পরিষ্কার সব গটআপ!” গৌতমবাবুর পাল্টা বক্তব্য, “অশোকবাবুর অভিযোগ মিথ্যা। জিটিএ নিয়ে কোনও রকম গটআপ হয়নি। একটা চুক্তি হয়েছে। যে চুক্তির কথা সকলেই জানেন। মুখ্যমন্ত্রীও শীঘ্রই পাহাড়ে যাচ্ছেন।” বরং বাম-আমলে সুবাস ঘিসিংয়ের সঙ্গেই সরকারের ‘গটআপ’ ছিল বলে অভিযোগ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর।
অশোকবাবু অভিযোগ করেছেন, উত্তরবঙ্গের উৎসবের নামে সরকারি অর্থের ‘অপচয়’ করা হয়েছে। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার বলছে, তাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ। আগের সরকার টাকা রেখে যায়নি বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না। তা হলে উৎসবের টাকা কোথা থেকে আসছে? কৃষকেরা আত্মহত্যা করছেন, পরিবহণ শ্রমিকরা আত্মহত্যা করছেন। এই অবস্থায় লক্ষ লক্ষ টাকা ক্লাবগুলিকে দেওয়া হচ্ছে। বঙ্গসম্মানের নামে টাকা দেওয়া হচ্ছে। এ সব মানা যায় না।”
তাঁর আরও প্রশ্ন, “চারটি নতুন তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্রের কাজ শেষ না করে রাজ্য সরকার কী করে আরেকটি কেন্দ্রের কথা ঘোষণা করে?” মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সফরে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা, হিমুল, চা শ্রমিকদের সমস্যা বা কোচবিহার বিমানবন্দর নিয়ে কিছু বলেননি কেন, সে প্রশ্নও তোলেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী। তাঁর কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়িতে নতুন সংস্কৃতির আমদানি করেছেন। উত্তরবঙ্গ উৎসবের মঞ্চে তিনি জেলাশাসক, পুলিশ সুপারকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করছেন। কমিশনারেট ঘোষণার আগেই পুলিশ সুপারের পিঠ চাপড়ে তাঁকেই কমিশনার ঘোষণা করছেন।”
এ দিনই ধূপগুড়িতে সিটুর পুরকর্মী সংগঠনের উত্তরবঙ্গের প্রতিনিধিদের কনভেনশনে অশোকবাবু অভিযোগ করেন, “বাম আমলেইপুরকর্মীদের বেতন নিশ্চিত হয়েছে। এখন ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারে আক্রমণ করছে তৃণমূল। রাজ্য সরকার পুরসভাগুলির ক্ষেত্রে দলবাজি করছে।” |