চা-বাগান, অরণ্য, পাহাড়-পর্বত, বিভিন্ন ধরনের পশুপাখি মানেই উত্তরবঙ্গ। কিন্তু এখানকার একটি জেলা হয়েও দক্ষিণ দিনাজপুরে এ সবের কানাকড়িও নেই। জেলার সীমিত কয়েকটি জায়গায় বিক্ষিপ্ত ভাবে গড়ে ওঠা প্রাচীন বনভূমিতে (অধিকাংশই শালবাগান) এক সময় খটাশ, শেয়াল, বনবিড়াল, বেজি, বাঁদর, কাঠবেড়ালি, সাপ, টিয়া, চন্দনা, ময়না, কাকাতুয়া প্রভৃতি পশুপাখি ও নানা রকম সরীসৃপ আশ্রয় নিত। কিন্তু জনসংখ্যার চাপে ধ্বংস হয়েছে বনভূমি। |
ধীরে ধীরে পশুপাখির সংখ্যাও কমেছে। মাঝে বেশ কয়েক বছর গৃহস্থের ছাগল শেয়ালে ধরে নিয়ে যায়নি। খটাশের অত্যাচারে হাঁস-মুরগি পাহারা দিতে হয়নি। তবে গত তিন বছর ধরে সন্ধেবেলা আবার শেয়ালের ডাক শোনা যাচ্ছে। রাতে রাস্তাঘাটে প্রায়ই শেয়াল চোখে পড়ছে। কিন্তু জনজাতি সম্প্রদায়ের কিছু লোকজন দিনের বেলা শেয়াল, বনবিড়াল দেখতে পেলেই তাড়া করছে। তিরধনুক, লাঠিসোটা দিয়ে মেরেও ফেলে। তার পর সেই মরা শেয়াল-বনবিড়ালের মাংস খায়। গত তিন বছরে কুশ্মণ্ডি ব্লকের ৮নং মালিগাঁও গ্রাম পঞ্চায়েতের মালিগাঁও, মহবুল্যাপুর, ডিকুল প্রভৃতি গ্রামে কম করেও ২৫ টি শেয়ালকে এ ভাবে মারা হয়েছে। প্রশাসন ও বনদপ্তর বিষয়টি নিয়ে ভাববেন কি? উত্তরবঙ্গে থেকেও আমরা এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে সাত যোজন দূরে।
বিপ্লবকুমার রায়। দক্ষিণ দিনাজপুর
|
আগে সন্ধে হলেই শেয়ালের ডাক শোনা যেত। ছোটবেলায় বন্ধুবান্ধব মিলে ঘাস কাটতে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে শেয়ালের গর্ত দেখতে পেতাম। শুকনো লঙ্কা পুড়িয়ে গর্তের ভেতর ঢুকিয়ে দিতাম। ঝাঁঝালো গন্ধে ভেতর থেকে শেয়াল বেরিয়ে ছুট দিত। আমরাও পেছন পেছন ছুটতাম। কিন্তু এদের আর দেখা যায় না। শেয়াল পণ্ডিতরা কোথায় গেল? এ নিয়ে তো কারোও কোনও মাথা ব্যথা নেই?
গ্রামগঞ্জে ঝোপের আনাচেকানাচে এক মিটারের মতো গর্ত করে সেখানেই থাকত শেয়ালরা। জনসংখ্যা বাড়ার ফলে বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হয় তারা। কিছু লোক এদের অবৈধভাবে শিকার করে মাংসের লোভে। এ ভাবেই শেয়াল ও পাতিশেয়াল বিলুপ্তির পথে। প্রতি বছর ১৪-৩০ জানুয়ারি ‘পশু কল্যাণ পক্ষ’ উদ্যাপিত হয়। কিন্তু পশু কল্যাণ পক্ষ শেষ হলেই আর কেউ এদের নিয়ে ভাবেন না। পশুহত্যা বন্ধের জন্য বিভিন্ন সময়ে আইন জারি করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, এ সব আইন শুধু বই-পুস্তকে ছাপার হরফে সাজান থাকে। আমরা ভাবি শেয়াল প্রজাতির প্রাণিটির কী দরকার? এরা বেশির ভাগই অপকার করে। পরোক্ষভাবে এরাও কিন্তু সমাজের উপকার করে। পৃথিবী থেকে একটি প্রাণী বিলুপ্ত হওয়া মানে জৈব বৈচিত্র নষ্ট হওয়া। আর এর প্রভাব পড়বে মানুষের ওপর। মনে রাখা দরকার, পৃথিবীটা শুধু মানুষের জন্য নয়।
অশোক সূত্রধর। ফালাকাটা
|
পাখিদের ডাকে আজ আর ঘুম ভাঙে না। এক সময় পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ পাখি দেখা যেত উত্তরে। কিন্তু এই সংখ্যাটা ক্রমশ কমছে। এর বেশ কয়েকটি কারণ আছে। জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করায় মাটির পোকারা মারা যাচ্ছে। মাটি হয়ে যাচ্ছে বিষাক্ত। কমে যাচ্ছে পাখির খাবার। খেতের কীটনাশক বৃষ্টির জলে ধুয়ে জলাশয়ে পড়ছে। জল বিষাক্ত হয়ে মাছ সহ অন্যান্য জলচর প্রাণীরা মরছে। তাতেও পাখির খাবার কমছে। মাইকের দাপটেও পাখিরা অস্থির। গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় পাখি বাসা বাঁধার উপযুক্ত স্থান পাচ্ছে না। কমছে বিদেশি পাখির সংখ্যাও। কোচবিহারের সাগরদিঘিতে আগে অনেক পরিযায়ী পাখি আসত। কিন্তু সাগরদিঘি আজ দূষিত। তাই পরিযায়ীরা আর আসে না। পাখিদের প্রজননেও দূষণের প্রভাব পড়ছে। ডিমের খোসা পাতলা হচ্ছে। ডিম ফুটে বেরোনোর আগেই খোসা ফেটে বাচ্চার মৃত্যু হচ্ছে। পাখিদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে হবে। প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগাতে হবে। সরকার এ ব্যাপারে উপযুক্ত পরিকল্পনা নিলে ভাল হয়। আর বনাঞ্চলে পিকনিক করতে গিয়ে জোরে মাইক চালানো বন্ধ করতে হবে। পাখিদের যাতে অসুবিধে না হয় সে ভাবে চলাটাই কাম্য। আবদুল জলিল সরকার। হলদিবাড়ি।
|
উত্তরের চিঠি।
এ বি পি প্রাঃ লিঃ,
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড,
শিলিগুড়ি ৭৩৪৪০১ |
|