আমাদের চিঠি

হারিয়ে গেছে বর্ধমানের ছুরি-কাঁচি
বর্ধমানের ছুরি-কাঁচি শিল্প এক সময় ছিল জগৎ বিখ্যাত। এই শিল্প সম্পর্কে প্রথম জানা যায় ঊনবিংশ শতাব্দীর আশির দশকের একটি লেখায়। সেখানে বলা হয়েছিল, ‘সম্প্রতি কাঞ্চননগরের জনৈক প্রেমচাঁদ মিস্ত্রি ভাল ছুরি ও অন্যান্য জিনিস তৈরিতে সফল হয়েছে।’ অন্য একটি লেখায় জানা যায়, ‘কাঞ্চননগরের জনৈক প্রেমচাঁদ মিস্ত্রি সম্প্রতি ইউরোপীয় নির্মাতাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুরি-কাঁচি তৈরি করছেন।’ প্রেমচাঁদ মিস্ত্রির পুত্র গদাধর এখানে ছুরি-কাঁচি শিল্পের আরও উন্নতি করেন। তাঁর কারখানায় ২০-২৫ জন কারিগর কাজ করতেন বলে জানা যায়। সে সব জিনিস উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, ঢাকা, ইংল্যান্ড ও জার্মানিতে রপ্তানি হত। সে সময় কাঞ্চননগর একটি অন্যতম কুটির শিল্পাঞ্চল হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিল। পরে এই কারখানার শ্রমিকরা আলাদা আলাদা কারখানা খোলেন। আর কারিগরের অভাবে বন্ধ হয়ে যায় গদাই কারিগরের কারখানা।
১৯৫৪-তে গড়ে ওঠে ‘কাঞ্চননগর কাটলারি কো-অপারেটিভ সোসাইটি’। এই সোসাইটির তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠে একটি সমবায় কারখানা। একশো জনের বেশি শিল্পী এই সমবায়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে ম্যানেজার ও শেয়ার হোল্ডারদের মতপার্থক্য দেখা দেওয়ায় সমবায় কারখানাটি ১৯৬৩-তে বন্ধ হয়ে যায়।
বন্ধ হয়ে যাওয়া ছুরি-কাঁচির কারখানায় বৃদ্ধ কারিগর অধিরকুমার দে
তখন এই কারখানায় কারিগরের সংখ্যা ছিল ৭০-৭৫ জন। বর্তমানে এই কারখানাটি ভগ্নপ্রায় অবস্থায় পড়ে আছে। কারা যেন দরজা-জানলা খুলে নিয়ে গেছে। চার পাশ গভীর জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। প্রবীণ যে সব কারিগর এখনও রয়েছেন, তাঁরা আশা নিয়ে বেঁচে আছেন। সরকারি সাহায্য পাওয়া গেলে আরও এক বার চেষ্টা করতেন কাঞ্চননগরের বিখ্যাত ছুরি-কাঁচি তৈরি করার। কিন্তু বৃথা আশা। এই ভাবেই কি কাঞ্চননগরের ঐতিহ্যময় ছুরি-কাঁচি ইতিহাসে পরিণত হয়ে যাবে?
কাঁসা-পিতল শিল্পের দুর্গতি
কাঁসা-পিতল বাসন শিল্পের জন্য মুর্শিদাবাদ জেলার খাগড়া অঞ্চল ছিল প্রসিদ্ধ। নবাবি আমলে এখানকার বাসনের সুনাম ছিল। সে সময় খাগড়া অঞ্চল দিয়ে গেলে প্রায় প্রতিটি ঘর থেকে ভেসে আসত ঠুংঠাং আওয়াজ, হাপরের শব্দ। খাগড়ার একটি পাড়ার নামই ছিল ‘কাঁসারি পট্টি’।
ভৌগলিক কারণেই মুর্শিদাবাদ জেলা প্রসিদ্ধ ছিল তামা-পিতল-কাঁসার বাসনের জন্য। কাঠ আসত গড় জঙ্গল থেকে। এই কাঠের আগুনেই পিতল গলানো হত। এখন হ্যান্ড ব্লোয়ার ফ্যান ব্যবহার করা হয়। গোটা শিল্পটাই কঠোর পরিশ্রমের। বিশেষত মুর্শিদাবাদ জেলায় জলন্ত আগুনের সামনে সারা দিন কাজ করা অত্যন্ত কষ্টকর।
তবে নবাবি আমলের প্রাচীন শিল্পটি এখন অতীত হতে চলেছে। দারিদ্রের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখাই দায় হয়ে পড়েছে। অনেকে পেটের তাগিদে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের বাসনও এই শিল্পের বাজারে অনেকটাই ভাটা ফেলেছে। তবে কিছু পরিবার তাঁদের বংশগত এই পরম্পরাকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। সমস্যা প্রচুর। কাঁচামাল, পুঁজি, বাজার সবেতেই।
এই মুহূর্তে দরকার নতুন নতুন নকশা ও প্রযুক্তির সাহায্যে এই শিল্পের পুনর্জীবন। ব্যাঙ্কের মাধ্যমে সুলভ ঋণের ব্যবস্থাও একান্ত প্রয়োজন। সর্বোপরি এই হারিয়ে যাওয়া শিল্পের প্রতি সরকারের কুটির শিল্প বিভাগেরও নজর দেওয়া দরকার। এই সব প্রাচীন শিল্পের উত্থান অত্যন্ত জরুরি। কারণ মুর্শিদাবাদ জেলার অর্থনীতি অনেকটাই নির্ভর করছে এই ধরনের ইতিহাস প্রসিদ্ধ শিল্পের ওপর।
টাঙ্গাইল শাড়ির সমস্যা
পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার সমুদ্রগড়, ধাত্রীগ্রাম টাঙ্গাইল শাড়ি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। বর্তমানে এই টাঙ্গাইল শাড়ি শিল্প ধ্বংসের মুখে। প্রথমত শাড়ি তৈরির প্রয়োজনীয় কাঁচামালের দাম অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে মূল কারণটি হল বাংলাদেশ থেকে শাড়ি আমদানি। যার ফলে এই শিল্পের প্রভূত ক্ষতি হচ্ছে।
প্রায় প্রতি দিনই ট্রাক বোঝাই করে বাংলাদেশের শাড়ি সমুদ্রগড়, ধাত্রীগ্রামে আসছে এবং বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। দামে কম হওয়ায় বাংলাদেশি শাড়ির চাহিদাও প্রচুর। এর ফলে মুষ্টিমেয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মুনাফা করছে। আর স্থানীয় তাঁতিদের তৈরি টাঙ্গাইল শাড়ির চাহিদা ক্রমশ কমছে। কয়েক লক্ষ তাঁতির ভবিষ্যত বর্তমানে সংকটে। শুধুমাত্র বাংলাদেশ থেকে শাড়ি আমদানি করার জন্য। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁতিদের এই সংকটের কথা তুলে ধরে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।
আর এক বার ভাবুন
কিছু দিন আগে আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে জানতে পারলাম সিঙ্গুরে তাপসী মালিকের মূর্তি প্রতিষ্ঠা হবে। তাপসী মালিকের মৃত্যুতে আমরা লজ্জিত, দুঃখিত। মূর্তি উন্মোচনের পর সেটি দেখিয়ে বাচ্চারা যখন জিজ্ঞাসা করবে উনি কেন বিখ্যাত? উত্তরে বলব, উনি জমি আন্দোলনের জন্য ধর্ষিতা হয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন। আবার যখন জিজ্ঞাসা করবে ধর্ষিতা কারা হয়? তখন কী উত্তর দেব সেটা যদি উদ্যোক্তারা বলে দেন, তা হলে বলব, ঘটা করে তাপসী মালিকের মূর্তি উন্মোচন করুন। মূর্তি বসানো মানে শুকিয়ে যাওয়া ক্ষতকে খোঁচানো নয় কি?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.