পূর্ব রেলের শিয়ালদহ শাখায় নিত্যযাত্রীর চাপ বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তায় রেল প্রশাসন। এই সমস্যার মোকাবিলায় রেল মন্ত্রক হাওড়া, শিয়ালদহের মতো নতুন একটি জংশন টার্মিনাস গড়তে চাইছে। এবং তার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে ব্যারাকপুর স্টেশনকে। নয়া জংশন টার্মিনাস সেখানেই গড়ে তোলা হবে বলে রবিবার ব্যারাকপুরে পূর্ব রেলের একটি অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী নিজেই ঘোষণা করেছেন।
আসন্ন রেল বাজেটে আমজনতার উপরে কোনও রকম চাপ দেওয়া হবে না বলেও এ দিন ইঙ্গিত দেন রেলমন্ত্রী। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমজনতার দুঃখ নিয়ে ভাবেন। তাই রেলও আমজনতার অসুবিধা করবে না।” উল্টে সাধারণ মানুষের অনেক প্রত্যাশা পূরণ হতে পারেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন ত্রিবেদী।
বছর দুয়েক ধরেই তো রেলে আর্থিক সঙ্কট চলছে। তা হলে এই প্রত্যাশা পূরণ করা হবে কী ভাবে? |
রেলমন্ত্রী জানান, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি মডেলকে আরও জনপ্রিয় করে তোলা হবে। বড় বড় স্টেশনকে সাজিয়েগুছিয়ে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করার ব্যবস্থা হচ্ছে। এই খাতে অর্থ বরাদ্দ করা হবে সাধারণ বাজেট থেকেও।
আমজনতার সুবিধার প্রসঙ্গেই নয়া জংশন গড়ে তোলার কথা জানান রেলমন্ত্রী। গত পাঁচ বছরে শিয়ালদহ ডিভিশনের মেন, বনগাঁ, ডানকুনি এবং দক্ষিণ শাখায় যাত্রীর চাপ হুহু করে বেড়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সব লোকাল ট্রেনেই থিকথিক করছে ভিড়। অথচ পর্যাপ্ত ট্রেন নেই। সময়সূচি মেনে ট্রেন চলে না বলে প্রায় নিত্যদিনের অভিযোগ। এই ‘দুরবস্থা’র প্রতিবাদে দীর্ঘদিন ধরেই সরব হয়েছেন যাত্রীরা। এ দিন সেই নিত্য ভোগান্তির সুরাহার আশ্বাস দিয়েছেন খোদ রেলমন্ত্রীই। তিনি বলেন, “ব্যারাকপুর থেকে যাতে অন্যান্য ট্রেন চালানো যায়, সেই জন্য এই স্টেশনকে জংশন করা হবে।” অনুষ্ঠানস্থলে দাঁড়িয়েই পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজারকে এ ব্যাপারে সমীক্ষার নির্দেশ দেন ত্রিবেদী। রেল সূত্রের খবর, ব্যারাকপুরকে জংশন করার সঙ্গে সঙ্গে ব্যারাকপুর-বারাসত ট্রেন চালানোর কথাও ভাবা হচ্ছে।
যাত্রীদের সুবিধার জন্য শিয়ালদহের বিভিন্ন শাখায় ট্রেন বাড়ানো হবে বলেও জানান রেলমন্ত্রী। তিনি বলেন, “প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগে ৩২ জোড়া নতুন লোকাল ট্রেন চালু করেছিলেন। তাঁর সময়েই আরও কয়েকটি ট্রেন চালু করার কথা বলা হয়েছিল। এ বার সেগুলি চালু করা হবে।”
এ দিন সেই ধরনেরই এক জোড়া ব্যারাকপুর-শিয়ালদহ লোকাল ট্রেনের যাত্রার সূচনা করেন রেলমন্ত্রী।
ত্রিবেদী এ দিন একই সঙ্গে দূরনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতির সাহায্যে শিয়ালদহ-পুরী দুরন্ত এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করেন। গত বছর মমতার সময়েই রেল বাজেটে এই ট্রেন চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। রেল জানিয়েছে, এই প্রথম দু’টি জোনাল রেলের (পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব) সমন্বয়ে ট্রেন চালানো হবে। পূর্ব রেলের শিয়ালদহ থেকে ওই দুরন্ত এক্সপ্রেস রওনা হয়ে ডানকুনি ছুঁয়ে সেটি দক্ষিণ-পূর্ব রেলের লাইনে যাবে। রেল সূত্রের খবর, শিয়ালদহ থেকে সরাসরি পুরী যাওয়ার ট্রেন না-থাকায় যাত্রীদের পক্ষ থেকে তৎকালীন রেলমন্ত্রীকে একটা ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করা হয়েছিল। এত দিনে সেই অভাব পূরণ হল।
এ দিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায়, কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সৌগত রায় এবং স্থানীয় বিধায়ক, পুর চেয়ারম্যানেরা। পরে নৈহাটি রেলমাঠে দীনেশ ত্রিবেদী একাদশ এবং নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক একাদশের প্রদর্শনী ফুটবল ম্যাচে রেলমন্ত্রীও খেলেন। |