ভারত শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটা জিতল। ভারতীয়রা ইনিংসের প্রথম দিকে স্কোরটা ভাল রেখেছিল আর শেষ দিকে রান তাড়া করার সময় মাথা ঠান্ডাও রেখেছিল। মেরে শুরু করার পরে গৌতম গম্ভীর পরের দিকে শুধু সিঙ্গলসের উপর ভরসা রেখেছিল। তার পর ধোনি ও রায়না নিজেদের খেলাটা খেলে। যত সময় যাচ্ছিল, অস্ট্রেলিয়ার কাজটা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। খুব কম ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়াকে এত অসহায় দেখায়।
তেন্ডুলকরকে বিশ্রাম দেওয়ার সিদ্ধান্তে অনেকেই দুঃখ পেয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ আজ অ্যাডিলেড ওভালে এসেছিলেন সচিনকে দেখতে, কিন্তু সচিনই প্রথম এগারোয় ছিল না! ক্যাপ্টেনের সিদ্ধান্ত হোক বা সচিনের নিজের, মাস্টারকে সবাই ‘মিস’ করছিল। আশার কথা, সচিনের জায়গায় খেলে গম্ভীর মূল্যবান ৯২ করে দিয়েছে এবং ভারত ম্যাচটা জিতেছে। |
অস্ট্রেলিয়ার তরুণ পিটার ফোররেস্টকে খেলানোর সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল। কিন্তু ম্যাথু ওয়েড সাত নম্বরে কেন বুঝিনি। টপ অর্ডারে ওয়েডের জমাট ব্যাটিংয়ের ব্যাপারটা ছিল না। রিকি পন্টিংকে হঠাৎ নতুন ‘রোল’ দেওয়া হচ্ছে, ব্যাপারটা এমন ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল ওয়েড কতটা নমনীয় হতে পারে, দেখে নেওয়া। এতে ওয়েডের লাভ হয়নি, টিমেরও না। আলাদা করে চোখ টেনেছে ফোররেস্ট। বেশির ভাগ বড় হিট স্পিনারদের বিরুদ্ধে। কিন্তু পেসারদের বিরুদ্ধে অস্বস্তিতে ছিল, তা নয়। ওর অধিনায়কের জায়গায় চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ওকে বিন্দুমাত্র আড়ষ্ট লাগেনি। তরুণ ড্যান ক্রিস্টিয়ানকেও বেশ লাগল। ৩৪ বছর বয়সেও ডেভিড হাসির উৎসাহে ও তারুণ্যে কমতি নেই। অস্ট্রেলিয়ার ওয়ান ডে প্ল্যানিংয়ে ও অপরিহার্য। |
গৌতম গম্ভীরকে দেখে ভাল লাগল। পুরনো ক্ষুধার্ত গম্ভীরকে মনে পড়ছিল। যে শুধু ক্ষুধার্ত নয়, হিসেবিও। যখন অস্ট্রেলিয়া গম্ভীরের হিসেবটা বুঝে ম্যাথু ওয়েডকে কিপার হিসেবে এগিয়ে আনল, ততক্ষণে ইনিংসের ভিতটাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ভারতীয় ওপেনার। রোহিত শর্মার সঙ্গে হাফ সেঞ্চুরির জুটিটা ভাল হচ্ছিল, কিন্তু রোহিত আবার একটা সুযোগ হাতে পেয়েও হারাল। স্কোয়ার লেগের উপর দিয়ে মিশেল স্টার্ককে ওই দুর্দান্ত ছয়টা মারার পর ভেবেছিলাম দারুণ একটা ইনিংস আসছে রোহিতের ব্যাট থেকে। সেটা হয়নি এবং আমার খারাপ লাগছে, সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারছে না রোহিত।
এই জয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের নিশ্চয়ই তাতাবে। এ বারের গ্রীষ্মটা যে ভাবে গিয়েছে, তার তুলনায় এই ম্যাচের স্ট্র্যাটেজিতে বেশ পরিণতির ছাপ আছে। বোলিং নিয়ে ভাল কথা বলার আছে, ব্যাটিং নিয়েও। অভিনন্দন ভারত।
|
অ্যাডিলেডে এই নিয়ে ১২ এক দিনের ম্যাচে সাতটা জিতল ভারত। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জয় এই প্রথম। অস্ট্রেলিয়ার মাঠে সর্বাধিক রান তাড়া করে জিতল ভারত। এর আগে ১৯৮৬-তে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২৬০ তাড়া করে জিতেছিল। তেন্ডুলকরকে ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এটা দ্বিতীয় জয়। এর আগে জয় ছিল বিশাখাপত্তনমে, ২০১০ অক্টোবরে। বিদেশের মাঠে শেষ আটটা এক দিনের ম্যাচে ভারত জিতেছে দুটো, হেরেছে চারটে, একটা টাই, একটা পরিত্যক্ত। |
|
অ্যাডিলেড ওয়ান ডে-র স্কোর |
অস্ট্রেলিয়া |
ওয়ার্নার রান আউট ১৮
পন্টিং ক কোহলি বো বিনয় ৬
ক্লার্ক বো উমেশ ৩৮
ফরেস্ট ক বিনয় বো উমেশ ৬৬
হাসি ক সহবাগ বো জাহির ৭২
ক্রিশ্চিয়ান রান আউট ৩৯
ওয়েড বো বিনয় ১৬
হ্যারিস ন.আ. ২
ম্যাককে রান আউট ৩
অতিরিক্ত ৯
মোট ৫০ ওভারে ২৬৯-৮।
পতন: ১৪, ৫৩, ৮১, ১৭৯, ২৩৫, ২৫৪, ২৬৫, ২৬৯।
বোলিং: জাহির ১০-০-৪৬-১, বিনয় ১০-১-৫৮-২, জাডেজা ১০-০-৫০-০
উমেশ ১০-১-৪৯-২, অশ্বিন ৮-০-৪৭-০, রোহিত ২-০-১৫-০।
|
ভারত |
গম্ভীর এলবিডব্লিউ ম্যাককে ৯২
সহবাগ ক হাসি বো ম্যাককে ২০
কোহলি ক ফরেস্ট বো ম্যাককে ১৮
রোহিত ক স্টার্ক বো হ্যারিস ৩৩
রায়না বো ডোহার্টি ৩৮
ধোনি ন.আ. ৪৪
জাডেজা ক পন্টিং বো ডোহার্টি ১২
অশ্বিন ন.আ. ১
অতিরিক্ত ১২
মোট ৪৯.৪ ওভারে ২৭০-৬।
পতন: ৫২, ৯০, ১৬৬, ১৭৮, ২৩৯, ২৫৭।
বোলিং: হ্যারিস ১০-০-৫৭-১, স্টার্ক ৮-০-৪৯-০, ম্যাককে ৯.৪-১-৫৩-৩
ক্রিশ্চিয়ান ১০-০-৪৫-০, হাসি ৩-০-১৩-০, ডোহার্টি ৯-০-৫১-২। |
|
|