সামান্য একটা চড়াই পাখি!
মরে পড়েছিল কলকাতা বিমানবন্দরের রানওয়েতে। আর তার জন্যই সময়ে নামতে পারল না দু’-দু’টো বিমান! যতক্ষণ না মৃত চড়াইকে সরানো হল, সেই প্রায় দশ মিনিট তারা চক্কর কাটল আকাশে। বিমানবন্দরের এক অফিসারের ব্যাখ্যা, “রানওয়ে থেকে ওঠা-নামার সময়ে বিমানের যা গতি থাকে, তাতে চাকার তলায় ছোট্ট চড়াই পড়লেও বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা।”
প্রতি পদে যেখানে এত সতর্ক থাকার কথা, যেখানে সামান্য চড়াই পাখিও বিপর্যয় ঘটিয়ে দিতে পারে, বাস্তবে কিন্তু সেখানে দেখা যাচ্ছে শিউরে ওঠার মতো কিছু দৃশ্যও! যেমন?
যেমন, কাউকে কিছু না-জানিয়ে উড়তে ওঠা বিমানের সামনে চলে আসছে জিপ! কখনও যাত্রীবোঝাই বাস সাঁ বেরিয়ে যাচ্ছে পাইলটের নাকের ডগা দিয়ে! কখনও বা কেউ দিব্যি হেলতে-দুলতে হেঁটে পেরোচ্ছেন রানওয়ে! সম্প্রতি একাধিক বিমানের পাইলটের কাছ থেকে এই ধরনের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। বিরোধীদের সমালোচনার প্রত্যুত্তর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মনীষীদের জন্মদিন পালন, রাজ্য জুড়ে নানা উৎসবে তাঁর সামিল হওয়া থেকে শুরু করে সম্প্রতি বিভিন্ন ক্লাবকে সরকারি অর্থ অনুদান দেওয়ার বিরুদ্ধে যে সমালোচনা চলছে, তারই কড়া জবাব দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা বক্তব্য, “কেন উৎসব করব না? দুঃখ-কষ্ট থাকলেও উৎসব থাকবে। নিজেরা উৎসব করে দলীয় ফান্ডে টাকা দিলে কিছু হয় না! আর আমরা ক্লাবগুলিকে আর্থিক সহযোগিতা করলে তা নিয়ে কেন বলা হবে?” |
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিন উপলক্ষে দক্ষিণ কলকাতায় কবির বাড়ির সামনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রবিবার মুখ্যমন্ত্রী ফের অভিযোগ করেছেন, বিরোধীরা ‘নেতিবাচক’ রাজনীতি করছেন। বিরোধীদের প্রতি মমতার কটাক্ষ, “পাঁচটা বছর কাজ করতে দিন না! আট মাসে যে কাজ করেছি, তাতে থুথু দিলে নিজের গায়েই থুতু ফেলবেন!” রাজ্যে তাঁর সরকার যে ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মে’র জন্য ‘উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ’ শুরু করেছে, নানা ভাবে তাতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ফের বলেন, “বন্ধ করে, অবরোধ করে উন্নয়নের কাজ নষ্ট করবেন না।” বিরোধী দলের নাম না-করেই তিনি তাঁদের ‘ইতিবাচক রাজনীতি’ করার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “যারা হিংসুটে, তারাই নেতিবাচক রাজনীতি করে!” ঈষৎ রসিকতার সুরেই মমতার মন্তব্য, “হিংসা করলে শরীর খারাপ হয়!” তাঁর দাবি তিনি ‘ইতিবাচক রাজনীতি’ করেন বলেই উন্নয়নের কাজে কোনও বাধাকেই পরোয়া করেন না।
বামপন্থী বলে পরিচিত প্রয়াত কবি সুভাষবাবুর জন্মদিন এই প্রথম সরকারি ভাবে পালিত হল। তবে তাঁর মৃত্যুর পরে বিরোধী দল হিসাবে তৃণমূলই আনুষ্ঠানিক ভাবে কবির বাড়ির সামনে জন্মদিন পালন করে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ঘোষণা করেন, এখন থেকে রাজ্য সরকারই সুভাষবাবুর জন্মদিন পালন করবে। মুখ্যমন্ত্রী শনিবার উত্তরবঙ্গ সফরে ছিলেন। কিন্তু সরকারের পক্ষে থেকে শনিবার মহাকরণে কবির প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন বিধানসভার সরকারি মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। কবির জন্মদিনের অনুষ্ঠানে এ দিন সেই প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এটা নিয়েও সমালোচনা করা হবে! জন্মদিন প্রতিদিনই পালন করা যায়। রবিবার জন্মদিন পড়ে গেলে মহাকরণে তো ছুটি থাকে। গত ১৫ বছর ধরে আমরা সুভাষদা’র জন্মদিন এই পাড়ায় করি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার আজ থেকে তা করছে।” কবির প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত কবিতার সংকলন তৈরির জন্য জন্য এ দিনের অনুষ্ঠানে কবি জয় গোস্বামী আর্জি জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, “সুভাষদা’র সমস্ত রচনা একসঙ্গে সংকলন করে সরকারের তরফে প্রকাশ করব।”
বস্তুত ‘পদাতিক’ কবির জন্মদিনের অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে বিগত বামফ্রন্ট সরকার এবং সিপিএমের কঠোর সমালোচনায় কেবল মুখ্যমন্ত্রীই নন, রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ‘মমতাপন্থী’ বিশিষ্ট জন চিত্রকর শুভাপ্রসন্নও সরব হয়েছেন। সুব্রতবাবুর অভিযোগ, সুভাষবাবুকে ‘উপেক্ষা করা’ হয়েছে। আরও এক ধাপ এগিয়ে শুভাপ্রসন্ন বলেন, “বিশেষ এক সরকার যারা মুখে সাম্যবাদের কথা বলত, তারা কবিকে খুবই উপেক্ষা করেছে।” সুভাষবাবুকে তাঁদের ‘অভিভাবক’ আখ্যা দিয়ে মমতা বলেন, “পদাতিক কবি যা চেয়েছিলেন, তা হল বাংলার পরিবর্তন ও নবজাগরণ। আমরা তাঁর সেই ইচ্ছা পূরণ করবই।” |