চিকিৎসক-প্রশাসক মিলছে না, সংশয় ‘স্বাস্থ্যজেলা’ নিয়ে
ঠিক এক মাস আগে, গত ১২ জানুয়ারি ঝাড়গ্রামে নতুন ‘স্বাস্থ্যজেলা’ ও ‘জেলা হাসপাতাল’ চালুর ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘জঙ্গলমহল উৎসব’-এর মঞ্চ থেকে দাবি করেছিলেন, ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতালকে জেলা হাসপাতালে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে তাঁর সরকার। মাইক্রোফোন হাতে তুলে দিয়ে মঞ্চে উপস্থিত স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকেও সে সময়ে কিছু বলতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। সঞ্জয়বাবুও তখন জানিয়েছিলেন, স্বাস্থ্যজেলা প্রস্তুত। কাজ শুরু করতে আর কোনও অসুবিধা নেই। পরিকাঠামো তৈরি হয়ে গিয়েছে।
ঠিক এক মাস পরের বাস্তব পরিস্থিতি বলছে, মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যসচিবের মৌখিক প্রতিশ্রুতিই সার। একটি ‘স্বাস্থ্যজেলা’ ও ‘জেলা হাসপাতালে’ যে সংখ্যায় চিকিৎসক-প্রশাসক, অন্য কর্মী কিংবা পরিকাঠামোর প্রয়োজন, তার অর্ধেকও হয়ে ওঠেনি। ফলে ঝাড়গ্রাম স্বাস্থ্যজেলা ও জেলা হাসপাতাল নামে ভারী হলেও প্রয়োজনীয় পরিষেবার প্রায় কিছুই দিতে পারছে না।
এক মাসেও স্বাস্থ্যজেলার স্থায়ী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পর্যন্ত নিয়োগ হননি। নিয়োগ হননি উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কিংবা ডিস্ট্রিক্ট মেটারন্যাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ অফিসারও। স্বাস্থ্যজেলার এত গুরুত্বপূর্ণ পদ খালি থাকলে স্বাস্থ্য পরিষেবার কাজ পরিচালনা, পরিকল্পনা গ্রহণ, তার রূপায়ণ কী করে সম্ভব--তা জানতে চাওয়া হলে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর আশ্বাস, “কিছু দিনের মধ্যেই সব নিয়োগ হয়ে যাবে। অসুবিধা হবে না।” স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র অবশ্য এখন বলছেন, “এক মাসের মধ্যে ম্যাজিকের মতো তো সব তৈরি হতে পারে না। লোক নিয়োগ চলছে। পরিকাঠামো তৈরি চলছে। স্বাস্থ্যজেলার মোবাইল ইউনিটগুলো কাজ শুরু করেছে। সময়মতো সব হয়ে যাবে।”
রাজ্যের একাধিক স্বাস্থ্যকর্তা অবশ্য স্বীকার করছেন, বিষয়টা এত সহজ নয়। কারণ গোটা রাজ্যেই স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সম্প্রতি একটা নতুন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সেটা হল, জেলায় চিকিৎসক-প্রশাসকদের একটু নীচের স্তরে লোক পাওয়া যাচ্ছে না। হয় কেউ যোগ দিতে চাইছেন না, অথবা যাঁরা যোগ দিয়েছেন তাঁরা পরের-স্তরে পদোন্নতির জন্য আবেদন করছেন না। ফলে, ব্লক মেডিক্যাল হেলথ অফিসার (বিএমওএইচ), এসিএমওএইচ এবং ডেপুটি সিএমওএইচ-এর অসংখ্য পদ খালি। চিকিৎসক-প্রশাসক ছাড়া জেলার স্বাস্থ্য পরিষেবার কাজ চালানো এক কথায় অসম্ভব। তার উপরে ঝাড়গ্রাম-সহ সাত-সাতটি স্বাস্থ্যজেলার জন্য কী ভাবে চিকিৎসক-প্রশাসক জোগাড় হবে, তা স্বাস্থ্য দফতরও বুঝতে পারছে না।
স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজ্যে বিএমওএইচ-এর ১৮৩টি পদ খালি! এ দিকে এই বিএমওএইচ-রাই একেবারে তৃণমূল-স্তরে স্বাস্থ্য পরিষেবা বজায় রাখার প্রধান স্তম্ভ। বিএমওএইচ-রাই পদোন্নতি পেয়ে এসিএমওএইচ হন। এই মুহূর্তে এসিএমওএইচ-এর ৬৫টি পদও খালি। কিন্তু বিএমওএইচ-দের মধ্যে মাত্র ১২ জন পদোন্নতির জন্য আবেদন করেছেন। ডেপুটি সিএমওএইচ-এর ৪৫টি পদও খালি। এসিএমওএইচ-রা পদোন্নতি পেয়ে ওই পদে যান। কিন্তু তাঁদের মধ্যেও মোটে ১১ জন আবেদন করেছেন।
কেন চিকিৎসক-প্রশাসক পদে কেউ যোগ দিতে চাইছেন না বা পদোন্নতির জন্য আবেদন করছেন না? উত্তরবঙ্গের এক ডেপুটি সিএমওএইচের কথায়, “প্রশাসনে যাওয়া মানেই ডাক্তারি তো গেলই সেই সঙ্গে হাজারো সমস্যা এসে জুটল। অভাব-অভিযোগ-তদন্ত-ধর্না-নজরদারি, সর্বোপরি এখন কথায় কথায় জবাবদিহি। কেন শুধু শুধু কেউ ঝক্কি নেবেন?” দক্ষিণবঙ্গের এক ব্লক স্বাস্থ্য অধিকর্তার বক্তব্য, “অস্বাভাবিক কাজের চাপ, গ্রামে পড়ে থাকা, সেই তুলনায় লাভ কিছুই নেই। উল্টে পান থেকে চুন খসলে স্বাস্থ্য দফতর থেকে এসে ধরবে। এর থেকে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করা ভাল।” গোটা জেলার যখন এই অবস্থা তখন ঝাড়গ্রাম-সহ সাতটি নতুন স্বাস্থ্যজেলার জন্য চিকিৎসক-প্রশাসক আসবে কোথা থেকে? এক মাস আগে তা হলে কী ভাবে স্বাস্থ্যদফতরের তরফ থেকে ঢাকঢোল পিটিয়ে ‘ঝাড়গ্রাম স্বাস্থ্যজেলা প্রস্তুত’ ঘোষণা করা হল? উত্তর মেলেনি স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.