দলের ‘খারাপ’ লোককে বোঝাতে নির্দেশ মমতার
তাঁদের দলে ‘এক-দেড় শতাংশ’ খারাপ লোক রয়েছেন বলে দলীয় বৈঠকে জানালেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। তবে তাঁর মতে, সেই পরিমাণ ধর্তব্যের মধ্যে নয় (নেগলিজেব্ল)।
এবং তাদের দল থেকে ছেঁটে না-ফেলে আড়ালেই রাখতে চান তিনি। আড়ালে রেখে বোঝাতে চান। ‘সংশোধনে’র সুযোগ দিতে চান। সেই মর্মেই দলের নেতা-মন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। শনিবার তৃণমূল ভবনে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি, হাওড়া চার জেলার নেতা-সদস্য-সহ রাজ্য ও কেন্দ্রের দলীয় মন্ত্রীদের নিয়ে এক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ওই নির্দেশ দিয়েছেন।
সংখ্যায় ‘নগণ্য’ ওই ‘অসৎ’ সদস্যদের নিয়ে দল কী সিদ্ধান্ত নেবে, তারও পথ বাতলে দিয়ে মমতা বলেছেন, দলের কেউ বদনাম করছে, এমন অভিযোগ পেলেই তাকে দল থেকে বার করে যেন না-দেওয়া হয়। পারলে তাকে বোঝান। কারণ, দলে সকলে মিলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর ওই ‘আড়ালে রাখা’র নির্দেশকে তৃণমূল শিবিরের একাংশ ‘শুদ্ধিকরণ’ বলেই ব্যাখ্যা করছেন। কিন্তু অন্য একাংশের মতে, ‘অসৎ এবং অভিযুক্ত’ সদস্যদের দল থেকে ছেঁটে না-ফেললে ‘শুদ্ধিকরণ’ সম্ভব নয়।
প্রসঙ্গত, এই বিষয়ে শাসক এবং বিরোধীদলের মধ্যে একটা ‘মিল’ই দেখছেন অন্য রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব। এক বামদলের নেতার কথায়, “শুদ্ধিকরণের কথা মুখে বলেও তা করে উঠতে পারেনি সিপিএম। এখন দেখা যাচ্ছে, শাসকদলের সর্বময় নেত্রীও সেই রাস্তাতেই হাঁটছেন। এর ফলে তো দলের যত অসাধু লোক রয়েছে, সে তারা সংখ্যায় যত নগণ্যই হোক না কেন, প্রশ্রয় পেয়ে যাবে!”
দলীয় নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, সিন্ডিকেট-ব্যবসা নিয়ে লাগাতার যে অভিযোগ উঠছে, তার প্রেক্ষিতেই মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের নির্দেশ বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতারা। যদিও বৈঠকে তিনি সিন্ডিকেট নিয়ে কোনও কথাই বলেননি। তবে দলের কোনও নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে কোথায় জানাতে হবে, তা-ও জানিয়ে দিয়েছেন দলনেত্রী। বলেছেন, দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এবং খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কাছে এসএমএস করে নেতা-কর্মীরা অভিযোগের কথা জানাতে পারেন। সেই অভিযোগ তাঁর কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। সিন্ডিকেট-ব্যবসা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে দলের যে নেতাদের বিরুদ্ধে, তাঁদের মধ্যে শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু ও দলের শ্রমিক সংগঠনের নেত্রী দোলা সেন বৈঠকে ছিলেন।
এ দিনের বৈঠকে মমতা আবার ‘উষ্মা’ প্রকাশ করেছেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের প্রতি। তিনি অবশ্য দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি হিসেবেই বৈঠকে আমন্ত্রিত ছিলেন। তবে মেয়রকে বৈঠকের মঞ্চে না-ডাকায় উপস্থিত নেতা-মন্ত্রীরা কিঞ্চিৎ ‘বিস্মিত’ই হন। শোভনের কাজকর্মে যে তিনি ‘সন্তুষ্ট’ নন, তা আরও একবার প্রকাশ্যেই বলেন মমতা। তাঁর নেতৃত্বাধীন জেলা থেকে বেশ কিছু দলীয় পদাধিকারী বৈঠকে না-আসাতেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তৃণমূল নেত্রী। তবে পাশাপাশিই মমতা বৈঠকে বলেন, তাঁর ‘ছেলেদের’ তিনি বকুনি দিতেই পারেন।
মূলত পঞ্চায়েত ভোটের দিকে লক্ষ্য রেখেই মমতা ওই বৃহদাকার বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন তৃণমূল ভবনে (ঠিক একবছর পর তৃণমূল ভবনে গেলেন মমতা)। পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলকে সাংগঠনিক ‘দিশা’ দেখাতে বিগত ৮ মাসের সরকারি উন্নয়নমূলক কাজের খতিয়ান সম্বলিত ‘কিছু কথা কিছু কাজ’ একটি পুস্তিকা তুলে দেওয়া হয় বৈঠকে হাজির দলীয় নেতা-সদস্যদের হাতে। ওই পুস্তিকার বক্তব্য ব্লক স্তর পর্যন্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। একইসঙ্গে, সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের ধারাকে অব্যাহত রাখতে মন্ত্রীদের পাশাপাশি বিধায়ক, জেলা নেতৃত্বকেও আরও বেশি ‘তৎপর’ হতে হবে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন দলনেত্রী। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, মমতা এ দিন বলেছেন, মন্ত্রীরা প্রাণপণ খেটে উন্নয়নের কাজ করছেন। কিন্তু বিধায়কদের আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে। মানুষের সমস্যা নিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে হবে। কৃষকদের স্বার্থে রাজ্য সরকার যে সব প্রকল্প চালু করেছে, সেগুলির বাস্তবায়ণ যাতে ঠিকমতো হয়, সে দিকেও জনপ্রতিনিধিদের খেয়াল রাখতে বলেছেন মমতা।
সম্প্রতি রাজ্যে কৃষক-মৃত্যু, শিশু-মৃত্যু নিয়ে সরকারের বিরোধিতায় সবর হয়েছে জোট শরিক কংগ্রেস-সহ বিরোধী সিপিএম। সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেস-সিপিএমের এই ‘অপপ্রচার’কে গুরুত্ব না দিয়ে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করতে বলেছেন দলনেত্রী। তাঁর বক্তব্য, সংবাদমাধ্যমের একাংশ এবং সিপিএম ও কংগ্রেস একসঙ্গে সরকারের বিরুদ্ধে এই অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাকে গুরুত্ব না দিয়ে কৃষকস্বার্থে ও শিশুমৃত্যু ঠেকাতে রাজ্য সরকার যে কাজ করছে, সেগুলিই জেলায় জেলায় প্রচারে তুলে ধরতে হবে।
জেলাওয়াড়ি পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতির রূপরেখা আগেই স্থির করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কী ভাবে কোন কোন জেলায় সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে হবে, তারও পথনির্দেশ দিয়েছিলেন। কোন কোন জেলা বা পঞ্চায়েত ভাল কাজ করছে, তা দলীয় নেতৃত্বের কাছে সরাসরি জানাতে হবে বলে জানিয়েছিলেন। বৈঠকে তা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি ফের বলেছেন, পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তূতি দলগত ভাবে কেমন হচ্ছে, তা জানিয়ে রিপোর্ট দিতে হবে বরাহনগরের বিধায়ক তাপস রায়ের কাছে। আর জেলায় জেলায় সরকারি ভাবে গ্রামোন্নয়নের কাজ কতটা হয়েছে, কী অভাব রয়েছে, তার খতিয়ান দিতে হবে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কাছে। বিধানসভা এলাকাভিত্তিক উন্নয়নের কাজ কতটা হয়েছে, তারও খতিয়ান দলীয় নেতৃত্বের কাছে বিধায়কদের দিতে হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় (বৈঠকে শোভনদেববাবু আসেননি। মমতা নিজেই জানান, কলকাতা জেলাকে বৈঠকে ডাকা হয়নি বলেই শোভনদেববাবু আসেননি। দলের একাংশের মতে, শোভনদেববাবুকে নিয়ে সম্প্রতি যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তার প্রেক্ষিতেই মমতার ওই ব্যাখ্যা) ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কাছে বিধায়করা উন্নয়নের খতিয়ান দেওয়ার পাশাপাশি এলাকার অসুবিধার কথাও জানাতে পারবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।
চলতি বছরের শেষে পঞ্চায়েত ভোট করার লক্ষ্য নিয়ে দলকে সাংগঠনিক দিশা দেখাতে মুখ্যমন্ত্রী এমন বৈঠকে আরও করবেন বলেই তৃণমূল সূত্রের খবর। তিন মাস পর আবার এই চার জেলা নিয়ে বৈঠক করবেন মমতা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.