সম্পাদকীয় ...
বিচ্ছেদের সন্তান
বিবাহবিচ্ছেদ ক্রমে সমাজমান্য হইয়াছে। অন্য দিকে, সময় ক্রমে জীবনকে জটিলতর করিতেছে, প্রত্যাশার হেরফের ঘটাইতেছে। প্রত্যাশা পূর্ণ না হইলে, অতএব, বিচ্ছেদের রাস্তাটি এখন সহজগম্য হইয়াছে। দুই নর-নারী যদি পরস্পরে সন্তুষ্ট না থাকিতে পারেন, তবে বোঝা-রূপ বিবাহটিকে অহেতুক বহন না করিয়া তাঁহারা বিচ্ছিন্ন হইয়া যাইবেন এই ব্যবস্থাটি তাঁহাদের পক্ষে ভাল। কিন্তু, সন্তানের পক্ষে? শৈশব ও কৈশোরের অনির্দিষ্ট সন্ধিক্ষণে থাকা সন্তানের কি মাত্র এক জনকে পাইলেই চলিবে? নাকি, পিতা ও মাতা, উভয়ের অবিচ্ছিন্ন উপস্থিতিই তাহার পক্ষে আবশ্যক? সেই সন্তানের মুখ চাহিয়া কি বিচ্ছেদোন্মুখ দম্পতির একত্রে থাকাই শ্রেয়? প্রশ্নগুলি জটিল, এবং নির্দিষ্ট উত্তরহীন। সম্প্রতি কলিকাতা হাইকোর্ট এই প্রশ্নগুলির সম্মুখীন হইল। শিক্ষিত, সুউপায়ী এক দম্পতি বিচ্ছেদ চাহেন। তাঁহাদের একমাত্র কন্যার বয়ঃক্রম একাদশ বৎসর। আদালত সেই দম্পতিকে বিচ্ছেদের পথে না হাঁটিতে বলিয়াছে।
কেহ প্রশ্ন করিতে পারেন, এই দম্পতিকে বিচ্ছিন্ন না হইতে পরামর্শ দেওয়া কি আদালতের নির্দিষ্ট সাংবিধানিক গণ্ডির বাহিরে পদার্পণ নহে? শুধু আইনের কথা ভাবিলে, প্রশ্নটিকে অস্বীকার করিবার উপায় নাই। কিন্তু, এইখানেই ন্যায় ও নীতির আদি দ্বন্দ্ব। নীতি বলিবে, অন্য বিবেচনার প্রয়োজন নাই, আদালত দেখুক আইনত এই বিচ্ছেদ সম্ভব কি না। যদি সম্ভব হয়, তবে দম্পতিকে বিচ্ছিন্ন হইবার আদেশ দিক। কিন্তু ন্যায় বলিবে, অন্তত এই ক্ষেত্রে শুধু আইনি ব্যাখ্যাই যথেষ্ট নহে। ভাবিতে হইবে, এই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তের ফল কাহাকে কী ভাবে প্রভাবিত করিবে। বিশেষত কন্যাটিকে, যে তাহার মাতা-পিতার উপর সম্পূর্ণত নির্ভরশীল। আইন যদি এই মেয়েটির কথা ভাবিবার অবকাশ না রাখে, তবুও বৃহত্তর ন্যায়ের স্বার্থে তাহার কথা আদালত ভাবিলে আপত্তি করা কঠিন। হয়তো, আদালতের এই ভাবনার ফলেই মেয়েটির জন্য এমন ব্যবস্থা হইবে, যাহা তাহার পক্ষে অনুকূলতর হইবে।
কিন্তু, বৃহত্তর প্রশ্নটি থাকিয়াই যায়। বিচ্ছিন্ন পরিবারের শিশুদের কী হইবে? পুরানো প্রশ্ন, জীবনে তো বটেই, সাহিত্যে ও চলচ্চিত্রে বহুচর্চিত। (চিত্রে ক্রেমার ভার্সাস ক্রেমার) যে দম্পতি বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত লহেন, তাঁহারা সন্তানের কথা না ভাবিয়া শুধু নিজেদের চিন্তা করিয়াই বিচ্ছিন্ন হইতে চাহেন, এমন ভাবিয়া লওয়া অনুচিত হইবে। যে সম্পর্কে বিচ্ছেদ অনিবার্য, তেমন দম্পতির উচিত, সন্তানকে তাঁহাদের সিদ্ধান্তের অংশী করিয়া লওয়া, তাহাকে পরিস্থিতিটি বুঝাইয়া বলা। সম্পর্কটি না ভাঙিলে যে তাহা আরও বিষময় হইয়া উঠিবে এবং সন্তানের পক্ষে আরও কষ্টকর হইবে, তাহাও বুঝাইয়া বলা প্রয়োজন। তাহাকে আশ্বস্ত করিতে হইবে যে এই বিচ্ছেদের ফলে তাহার প্রতি ভালবাসায় ঘাটতি হইবে না। এবং, প্রতিশ্রুতিটি সত্যই পালন করিতে হইবে। বড়রা যতখানি ভাবেন, শিশুরা তাহার অপেক্ষা ঢের বেশি বোঝে। সম্ভাব্য বিচ্ছেদ তাহাদের জীবনে কী অনিশ্চয়তা আনিতে চলিয়াছে, সেই উদ্বেগ তাহাদের পীড়া দেয়। সন্তানের মুখ চাহিয়া এই উদ্বেগের সুরাহা করা পিতা-মাতার কর্তব্য।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.