ছ’মাসের শিশুর মাথায় বন্দুক কসবায়
ছ’মাসের শিশুর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে প্রাণে মারার হুমকি দিচ্ছে দুই লুঠেরা। আলমারির চাবি বার করে দিতে বলছে। অসহায় ভাবে সে দিকে তাকিয়ে কাকুতি-মিনতি করছেন দিদিমা ও আয়া। ঠিক এ ভাবেই কসবা রথতলায় এক বাড়িতে ঢুকে বিপুল টাকা ও গয়না হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটল শুক্রবার সন্ধ্যায়।
কলকাতার উপকণ্ঠে গোটা দক্ষিণ শহরতলি জুড়ে এমন অপরাধের ঘটনা পরপর ঘটেই চলেছে। কখনও বিকেলে পার্কে বেড়ানোর সময়ে হার ছিনতাইকারীকে বাধা দিতে গিয়ে গুলিতে জখম হচ্ছেন গৃহবধূ। কখনও বা কাকভোরে লুঠেরার হানায় ঘুম ভাঙছে প্রবীণ দম্পতির। এ ছাড়া ছোটখাটো চুরি-ছিনতাই তো হচ্ছেই। দক্ষিণ কলকাতা ও শহরতলি জুড়ে এই ‘দুষ্কৃতী-রাজ’-এর সাম্প্রতিকতম নমুনা বালিগঞ্জের কাছে কসবা রথতলার এই ঘটনা। পুলিশ কেন পরের পর এমন ঘটনা রুখতে পারছে না? কেন ধরা পড়ছে না দুষ্কৃতীরা? যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিমের জবাব, “দক্ষিণ কলকাতায় লোকাভাবটাই এখনও সমস্যা। তবে কসবার কথা ভেবে ই এম বাইপাসে টহলদারির উপরে জোর দিচ্ছি। এ ছাড়া গোয়েন্দা বিভাগও আলাদা করে এই অঞ্চল নিয়ে ভাবছে।”
কসবা রথতলায় ভরসন্ধেয় যা ঘটেছে, সেটা পুলিশ-কর্তাদের কাছেও বিশেষ উদ্বেগের কারণ। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রৌঢ়া গৃহকর্ত্রী তাপসী বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়ে রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ বাড়ির কাছেই দোকানে গিয়েছিলেন। ছ’মাসের শিশুটির কাছে তখন তার দিদিমা ও আয়া। সন্ধেতেই শহরের ব্যস্ত এলাকার কোনও বাড়িতে যে লুঠেরারা হানা দিতে পারে তা ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি তাপসীদেবী। লুঠের পরে মা-মেয়ে দু’জনেরই এখনও আতঙ্কের ঘোর কাটেনি।
পুলিশ জানায়, দুধের শিশুটিকে মারার ভয় দেখিয়ে তার মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকানোর পরে হতভম্ব দুই মহিলাকে ঝটপট বেঁধে ফেলে দুষ্কৃতীরা। তার পরে আলমারি খুলে গয়না ও নগদ টাকা লুঠ করে পালিয়ে যায় তারা। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশের অনুমান, দুষ্কৃতীরা এলাকারই লোক। কিন্তু শনিবার রাত পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি।
বিভিন্ন থানার ওসি-র সঙ্গে পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দার বৈঠকে ইদানীং বারবারই উঠে আসছে দক্ষিণ শহরতলিতে অপরাধের এই বাড়বাড়ন্তের কথা। কসবার ঘটনাটির পরেও পুলিশ কমিশনার লালবাজারের অন্য কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই এলাকায় লুঠের উৎপাত নিয়ে আলোচনা করেছেন। কিন্তু এখনও এই তল্লাটে সাম্প্রতিক অপরাধের ঘটনাগুলির তদন্তে নেমে কাজের কাজ কিছুই করে উঠতে পারেনি পুলিশ। কসবাতেই মাসখানেক আগে এক বিকেলে গৃহবধূকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল ছিনতাইকারীরা। ওই ঘটনা নিয়ে তদন্তকারীরা এখনও কার্যত অন্ধকারে।
তা হলে কী ভাবে দক্ষিণ শহরতলির এই সমস্যার মোকাবিলা করার কথা ভাবছে পুলিশ? শনিবার পুলিশ কমিশনারকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও সদুত্তর মেলেনি।
অথচ, গত বছর সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ শহরতলির বেশ কিছু এলাকা কলকাতা পুলিশের এলাকাভুক্ত হলে কসবা, যাদবপুর, পাটুলির মতো কয়েকটি অঞ্চলকে নিয়ে একটি পৃথক ডিভিশনই (সাউথ সাবারবান) গড়ে তুলেছিলেন লালবাজারের কর্তারা। আগে ওই এলাকাগুলি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের অধীনে ছিল। কলকাতা পুলিশের আওতাভুক্ত হওয়ার পরে এই তল্লাটে পুলিশি পরিকাঠামো অনেকটাই উন্নত হয়েছে। তবু অপরাধ ঠেকাতে না পারার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে যথেষ্ট পুলিশ কর্মী না থাকাকেই অন্যতম কারণ বলে চিহ্নিত করছেন যুগ্ম কমিশনার শামিম।
লালবাজারের অন্য কর্তাদেরও যুক্তি, এক লাফে কলকাতা পুলিশের এলাকা বেড়ে দ্বিগুণ হলেও পুলিশের লোকবল বেড়েছে যৎসামান্য। দক্ষিণ শহরতলির থানাগুলিতে এখনই আরও পুলিশকর্মীর দরকার। লালবাজারের আর এক কর্তার কথায়, “এলাকা বাড়লেও লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের অবস্থা তো যে কে সেই। গোয়েন্দা অফিসারদের নতুন করে সোর্স-নেটওয়ার্ক বাড়িয়ে সংযুক্ত এলাকা নিয়ে হোমওয়ার্ক করতে হচ্ছে।”
তবে দিনে-রাতের যে কোনও সময় হানা দিয়ে লুঠেরারা যে ভাবে নির্বিঘ্নে ‘কাজ’ সেরে উধাও হয়ে যাচ্ছে, তাতে প্রশ্ন উঠছে, রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ ও লালবাজারের গোয়েন্দারা আদৌ সমন্বয় রক্ষা করে চলছেন কি না। পুলিশকর্তাদের অনেকেরই মত, সিআইডি-র পরামর্শ নিয়ে এই ধরনের অপরাধের তদন্তে সুবিধা হতে পারে লালবাজারের গোয়েন্দাদের। এখনও পর্যন্ত অবশ্য দক্ষিণ শহরতলির অপরাধ ঠেকাতে নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা তৈরি করে উঠতে পারেনি পুলিশ। ঠেকায় পড়ে শহরের উপকণ্ঠে গাড়িতে নজরদারির উপরেই ফের বাড়তি জোর দেওয়ার কথা বলছেন লালবাজারের কর্তারা।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.