|
|
|
|
পশ্চিম মেদিনীপুর |
প্রশাসনিক উদাসীনতায় স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর গ্রেডিং আটকে জেলায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, ৬ মাস অন্তর স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর ‘গ্রেডিং’ করার কথা। আর এর উপরেই নির্ভর করে কোন স্বয়ম্ভর-দল সরকারি আর্থিক সহায়তা ও ব্যাঙ্ক ঋণ পাবে। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এমন অনেক গোষ্ঠী রয়েছে যাদের দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে ‘গ্রেডিং’ হয়নি। ফলে গ্রামের গরিব মানুষকে স্বনির্ভর করার লক্ষ্য ধাক্কা খাচ্ছে। কেন গ্রেডিং হয়নি? এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রোজেক্ট ডিরেক্টর অরিন্দম দত্ত বলেন, “মার্চ মাসের মধ্যেই যাতে অন্তত ৫ হাজার স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর গ্রেডিং করা যায়, সে জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যাঙ্কেরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। তাই ব্যাঙ্কগুলি যাতে এ বিষয়ে উদ্যোগী হয় তা-ও জানানো হয়েছে।”
স্বর্ণজয়ন্তী স্বরোজগার যোজনা প্রকল্পে জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতর জেলা জুড়ে স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল। কয়েক বছর আগে এই প্রকল্প শুরু হয়। যে প্রকল্পে জেলা জুড়ে ৩৪ হাজার ৯৬০ গোষ্ঠী তৈরি হয়েছিল। যার মধ্যে কয়েকটি গোষ্ঠী উল্লেখযোগ্য কাজও করেছে। স্বনির্ভরতার পথে অনেকটাই এগিয়েও গিয়েছে। প্রথম দিকে এই প্রকল্পে প্রশাসনিক নজরদারিও ছিল অনেক বেশি। কিন্তু দিনে দিনে কমেছে নজরদারি। অভিযোগ, বিগত এক-দেড় বছর এ নিয়ে সম্পূর্ণ ভাবেই উদাসীন থেকেছে প্রশাসন। তাই ‘গ্রেডিং’ পর্যন্ত হয়নি। প্রথম দিকে বেশ কয়েক হাজার দলের প্রথম ‘গ্রেডিং’ এবং দ্বিতীয় ‘গ্রেডিং’ হলেও প্রায় সাড়ে ৭ হাজার গোষ্ঠীর কোনও ‘গ্রেডিং’ই হয়নি। অথচ, স্বণর্জয়ন্তী স্বরোজগার যোজনা এ বছর থেকেই তুলে দিচ্ছে সরকার। পরিবর্তে অন্য প্রকল্প নিয়ে আসা হয়েছে। শুধু তাই নয়, স্বর্ণজয়ন্তী স্বরোজগার যোজনায় জেলা প্রশাসনের কাছে সাড়ে ৪ কোটি টাকা পড়েও রয়েছে। উদাসীনতার কারণেই প্রকল্পটি ধাক্কা খাচ্ছে বলে অভিযোগ। সরকারি সহায়তা ও ব্যাঙ্ক-ঋণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গোষ্ঠীগুলি।
কেন ‘গ্রেডিং’ প্রয়োজন? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পে যে সমস্ত গোষ্ঠী তৈরি করা হবে সেই গোষ্ঠীগুলিকে একটা সরকারি নিয়ম মেনে চলতে হয়। এক-একটি গোষ্ঠীতে ১০-১২ জন সদস্য থাকেন। গোষ্ঠী করার পরেই তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। প্রতি মাসে নিয়ম করে টাকাও জমা দিতে হয়। আবার ব্যাঙ্কে জমানো সেই টাকা ঋণ নিয়ে কেউ পশুপালন করতে পারেন, কেউ গো-পালন করতে পারেন বা চাষ করতে পারেন। একটি গোষ্ঠী মাসে কত টাকা জমা দিচ্ছে, সেই টাকা কাজে লাগাতে পারছে কি না, নিয়ম মেনে সে সবের নথি রাখছে কি না, নিয়মিত বৈঠক করছে কি না--এ সব দেখেই ‘গ্রেডিং’ হবে। ‘গ্রেডিং’-এ উত্তীর্ণ হলে সরকার সেই গোষ্ঠীকে আবর্তনীয় তহবিল হিসাবে ১০ হাজার টাকা দেবে। সেই সঙ্গে গোষ্ঠী তার নিজের জমানো অর্থের থেকে চারগুণ বা তারও বেশি ব্যাঙ্ক ঋণ পাবে। এ ভাবেই দ্বিতীয় ‘গ্রেডিং’-এ উত্তীর্ণ হলে সরকার আবর্তনীয় তহবিলে ওই গোষ্ঠীকে আরও ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেবে। ব্যাঙ্কও আরও বেশি ঋণ দেবে। যে ঋণের একটা বড় অংশ ছাড় হিসাবেও পাবে দলগুলি। কোনও দল মুরগি খামারের জন্য ২ লক্ষ টাকা ঋণ নিলে ৭৫ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্তও ছাড় পেতে পারে। মূলত, গ্রামের গরিব মহিলাদের জন্যই এই প্রকল্প। সেই প্রকল্পই এখন মার খাচ্ছে প্রশাসনিক উদাসীনতায়। |
|
|
|
|
|