ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা জুড়ে পথ অবরোধ আন্দোলনের জেরে অচল হল কোচবিহার। চান্দামারিতে পথসভায় হামলা চালানোর ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মীদের গ্রেফতারের দাবি তুলে বুধবার ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মীরা কোচবিহারের ৩০টি এলাকায় পথ অবরোধ করেন।
সকাল ১০টা থেকে টানা দু’ঘণ্টা অবরোধের জেরে কোচবিহার সদর, দিনহাটা ও মেখলিগঞ্জ মহকুমায় নিত্যযাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নিত্যযাত্রীদের এই দুর্ভোগের জন্যও তৃণমূলকে দায়ী করেছেন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতারা। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করা না-হলে আরও বড় মাপের আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন তাঁরা। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন। তৃণমূলের তরফে অবশ্য ওই অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি, গোলমালের জন্য ফ্রন্টের শরিকি বিবাদকে দায়ী করে তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতেই ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে ফরওয়ার্ড ব্লক সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে কোচবিহার কোতোয়ালি থানার চান্দামারিতে পথসভাকে ঘিরে ফরওয়ার্ড ব্লক-তৃণমূল সংঘর্ষ হয়। পথসভায় মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগে গোলমালের সূত্রপাত। |
ওই ঘটনায় ফরওয়ার্ড ব্লকের ১০ জন জখম হন। জখমদের মধ্যে জেলার সাংসদ নৃপেন রায়ও রয়েছেন। সাংসদ-সহ ৩ জনকে ওই রাতেই কোচবিহার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। আঘাত পান কোচবিহার পশ্চিম কেন্দ্রের বিধায়ক অক্ষয় ঠাকুরও। ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “সাংসদের বুকে চোট লেগেছে। দলের তরফে তাঁকে চিকিৎসার জন্য দিল্লিতে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।”
চেন্নাইয়ে চিকিৎসাধীন ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ এক বিবৃতিতে ‘আক্রমণকারী গুন্ডা’দের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই নৃশংস আক্রমণের ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত। রাজ্যের গণতান্ত্রিক মানুষ ক্রমশ বুঝতে পারছেন যে, রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় আসীন তৃণমূল সারা রাজ্যে ধীরে ধীরে প্রশাসনকে নিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চাইছে।” তাঁর অভিযোগ, জনপ্রতিনিধিদের দেহরক্ষী তুলে নেওয়ায় এই ধরনের আক্রমণের মুখে তাঁরা আরও বিপন্ন হচ্ছেন। পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ উদয়নবাবুর অভিযোগ, “বর্তমান পুলিশ সুপার জেলার দায়িত্ব নেওয়ার পরে দু’বার সাংসদ আক্রান্ত হলেন।” ঘটনার ব্যাপারে তৃণমূলের জেলা ও স্থানীয় নেতাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য দাবি করেন, “ওই এলাকায় ফরওয়ার্ড ব্লক-সিপিএমের তিক্ত সম্পর্কের কথা সকলেই জানেন। তার জেরেই ওই ঘটনা হয়েছে বলে শুনেছি। আমাদের কেউ গোলমালে জড়িত নন। পুলিশ তদন্ত করলেই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।” সুস্থ হয়েও সাংসদ বিছানায় শুয়ে নাটক করছেন বলেও কটাক্ষ করেছেন রবীন্দ্রনাথবাবু। সিপিএমের জেলা সম্পাদক তারিণী রায় বলেন, “এ-সব তামাশা না করে তৃণমূলের নেতাদের ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করা উচিত।” কোচবিহারের পুলিশ সুপার প্রণব দাস বলেন, “চান্দামারির সংঘর্ষের ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হননি। পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবেই কাজ করছে।” |