গাছটির নাম শমী। নিবাস: হরিরামপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর। গাছটিকে ঘিরে নানা লোকগাথা। দেবতাজ্ঞানে পুজো করা হয়। কেউ বলেন, এর বয়েস হাজার হাজার বছর, কারও মতে এই গাছেই নাকি অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছিলেন অর্জুন। স্থানীয় জনগণের বক্তব্য, এই গাছ ভারতে একটিই আছে। গাছটিকে ঘিরে প্রতি বছর নববর্ষে মেলা বসে। কিন্তু আগাছা-পরগাছা ঘিরে ধরায় বর্তমানে শোচনীয় অবস্থা গাছটির। স্থানীয় এক যুবক গাছটি সম্বন্ধে খোঁজ শুরু করেন। যোগাযোগ করেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্স-এ (আইইউসিএন)। গাছটিকে আইইউসিএন-এর গ্লোবাল ট্রি ক্যাম্পেন-এ অন্তর্ভুক্ত করার আর্জিও জানানো হয়। অনেক সন্ধানের পর জানা যায়, এই গাছটি ভারতে একমাত্র নয়। গাছটি আসলে কর্ডিয়া মাইক্সা (cordia myxa) প্রজাতির। মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বাঁকুড়ায় অনেক আছে এই গাছ। তবে স্থানীয় নাম ভিন্ন ভিন্ন। পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে, হরিরামপুরের গাছটি প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো। হাজার বছর বয়স না হলেও পরিবেশ রক্ষায় এই গাছটির ভূমিকাও অনস্বীকার্য। তাই গাছটির সংরক্ষণের আশায় দিন গুণছেন দিনাজপুরের স্থানীয় বাসিন্দারা। |
সেই শিল্পেরই মূল্য আছে, যা মানুষকে একতাসূত্রে বাঁধে। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই কোচবিহারের রূপ-কথা নাট্যগোষ্ঠীর নতুন দু’খানি প্রযোজনা ‘না পাঠানো চিঠি’ এবং ‘অ্যালঝাইমার’। সম্প্রতি নাটক দু’টি মঞ্চস্থ হয়ে গেল কোচবিহার রবীন্দ্রভবনে। দু’টি নাটকেই ছিল জীবনযন্ত্রণার কথা। অভাবের তাড়নায় বাবা মেয়েকে বেচে দেয় নিষিদ্ধ পল্লিতে। মেয়ে অভিমানে চিঠি লেখে মা’কে, যা পাঠানো হয় না কোনও দিন। সংসারে একটা মেয়ের জন্য কত খরচ, তার থেকে একটা গোরু অনেক ভাল। ঘরে দু’টো পয়সা আসে। রঙিন টিভি, খাট-বিছানা, থরে থরে কাঁচের গ্লাসে সাজানো ড্রেসিং টেবিলের আড়ালে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে মেয়েটির স্বপ্নের রঙ-পেন্সিল। মা-বাবা-ভাই-বোনকে এক বার দেখবার জন্য তার বুকফাটা আর্তি এই হল ‘না পাঠানো চিঠি’। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘না পাঠানো চিঠি’ কবিতাটি অবলম্বনে উত্তীয় দে’র নির্দেশনায় ‘রূপ-কথা’র এই সৃজনে যৌনকর্মীদের রঙ-রোশনাইয়ের আড়ালে থাকা সেই না-বলা জীবনের করুণ কাহিনিকে তুলে ধরা হল। উত্তীয় দে’র রচনা-নির্দেশনায় দ্বিতীয় প্রযোজনা ছিল ‘অ্যালঝাইমার’। এ-ও এক শিকড় উপরানো মুসলিম মেয়ের বেঁচে থাকার গল্প। ২০০২-এর গুজরাতের দাঙ্গার প্রেক্ষিতে রচিত এই নাটক। যাতে বলা হয়েছে দু’টো ভিন্ন মানুষের অন্য রকম বাঁচার লড়াইয়ের কথা। যে কোনও রক্তপাতই আসলে প্রাণের টিকে থাকার বিপরীতে অবস্থান করে, তার যে কোনও বিশ্লেষণ হয় না সে কথাই বলে গেল রূপ-কথার দ্বিতীয় নাটকটি। |
প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের বিকল্প হিসেবে বর্তমানে এস টি কাপড়ের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে। পরিবেশ বন্ধু হিসেবে এ রকম ব্যাগের চাহিদা সর্বত্র। এই ব্যাগ তৈরি করে অর্থ উপার্জনের পথ তৈরি করেছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ভলান্টারি হেলথ অ্যাসোসিয়েশন। সংস্থার পক্ষ থেকে ‘পিপলস লিভিং উইথ এইচআইভি এডস’ প্রকল্পে ৪ জন এডস আক্রান্তকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্যাগ তৈরি করানো হচ্ছে। এঁদের সঙ্গে অন্যরাও ব্যাগ তৈরি করছেন। এডস আক্রান্তদের পরিবারের আর্থিক সমস্যা কিছুটা দূর করার জন্যই এই প্রচেষ্টা। এঁদের পক্ষে শক্ত কাজ করা সম্ভব নয়। সেই জন্য ব্যাগ সেলাইয়ের মতো হালকা কাজ দিয়ে ওঁদের আর্থিক সাহায্য করা হচ্ছে। এ জন্য দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। |
সম্প্রতি জলপাইগুড়ির আর্ট কমপ্লেক্স প্রেক্ষাগৃহে ‘থিয়েটারের ভাষা’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন নাট্য নির্দেশক ও পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়। দু’ঘণ্টার বক্তৃতায় ছুঁয়ে গেলেন তাঁর সৃজন-পর্বের নানা মুহূর্ত। জানালেন, নাট্যভাষা নির্দিষ্ট করা যায় না। সমাজ বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হতে থাকে নাটকের ভাষা। ইতিহাস বা রাজনীতিবোধ প্ররোচিত করে নাট্যভাষা নির্মাণে। কুয়াশা জড়ানো শীতের সকালে লেপের আরাম ছেড়ে জড়ো হয়েছিলেন শহরের নাট্যপ্রেমীরা। আয়োজক ছিল চিত্তপট নাট্যসংস্থা। আলোচনায় উঠে এসেছিল ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’র নির্মাণপর্বের কথা। যখন নির্দেশক খুঁজে চলেছেন ‘অব্যর্থ নাট্যভাষা’। হিরণ মিত্রের সঙ্গে আলোচনার পর্ব, মঞ্চে লোহার তৈরি প্ল্যাটফর্ম। যা অনবরত স্থান পরিবর্তন করে ছড়িয়ে দেয় ছন্দোময় ধাতব শব্দ। রচিত হয় চলমান তিস্তাপারের জীবন। কিন্তু নির্দেশকের মনে অনুভূত হয় কীসের অভাব। মঞ্চে পড়ে থাকে জ্যামিতিক ফাঁদ। উইংসের পাশে ঝুলছে যে দড়ি, তাই নিয়ে আসে নির্দেশকের প্রার্থিত ‘অব্যর্থ নাট্যভাষা’। দর্শক দেখেন, সেই ঝুলন্ত দড়ি কী ভাবে তৈরি করে মঞ্চ মায়া, তিস্তার বান, বাঘারুর নদী পারাপার, তিস্তার বহমানতা। আলোচনায় উদাহরণ হয়ে আসে ‘বিসর্জন’, ‘কিং লিয়র’, ‘শূন্য শুধুই শূন্য নয়’, ‘মারীচ সংবাদ’-এর কথাও। তুলে ধরেন থিয়েটার ও চলচ্চিত্র এই দুই মাধ্যমের ভাষাগত মিল-অমিল, সুবিধে-অসুবিধে। শেক্সপিয়র, রবীন্দ্রনাথ, ব্রেশট, বার্গমান, ইবসেন থেকে উৎপল দত্ত, চার্লি চ্যাপলিন, কুরোসাওয়া, সত্যজিৎ, ঋত্বিক, মৃণাল ঘুরে ফিরে তাঁর আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। বক্তব্য শেষে শ্রোতাদের নানা কৌতূহল, প্রশ্নের সহজ উত্তর যখন দিচ্ছেন সুমন, তখন চত্বর জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে রোদমাখা নরম আলো।
|
উত্তরের কড়চা বিভাগে ছবি ও লেখা দিলে পুরো নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করবেন।
উত্তরের কড়চা এ বি পি প্রাঃ লিমিটেড
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড শিলিগুড়ি ৭৩৪৪০১ |
|