ফের কেন সরব কংগ্রেস, জল্পনা শুরু
ঠিক বলছেন না অমিত, পাল্টা সিঙ্ঘভির
রাজ্যকে কেন্দ্রের আর্থিক বরাদ্দ নিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূল তরজা থামছে না। যাঁর মন্তব্য ঘিরে এই বিতর্কের সূত্রপাত, সেই কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আজ রাজ্যের অমিত মিত্রের পাল্টা মন্তব্য খারিজ করে দিয়েছেন। সিঙ্ঘভি আজ বলেন, কেন্দ্রের থেকে এক পয়সাও পাননি বলে অমিতবাবু যে মন্তব্য করেছেন, সেটা ঠিক নয়।
খোদ সনিয়া গাঁধীর নির্দেশে যখন প্রদেশ কংগ্রেস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সম্পর্কে কড়া মন্তব্য করা থেকে সরে এসেছে, তখন সিঙ্ঘভির মতো কেন্দ্রীয় নেতা কেন নতুন করে বিতর্কে জড়ালেন, তা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে
অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি
কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। কংগ্রেসের একাংশের মতে, এর পিছনে রয়েছে সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক অঙ্ক। যত দিন যাচ্ছে, তত উত্তরপ্রদেশে ফল ভাল হবে বলে মনে করছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। সে ক্ষেত্রে মুলায়ম সিংহ যাদবকে যদি কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে সরকার গড়তে হয়, তা হলে কেন্দ্রে তিনি ইউপিএ সরকারকে সমর্থন করতে বাধ্য হবেন। রাজ্যে কংগ্রেসের উপর নির্ভরশীল হলে কেন্দ্রেও অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবেন মুলায়ম। তখন কংগ্রেসেরও তৃণমূল-নির্ভরতা কমবে। এই অঙ্ক কষেই কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব কড়া সুর নিচ্ছেন বলে ওই নেতাদের মত।
কংগ্রেসের অন্য মহল অবশ্য এই মতের শরিক নন। তাঁদের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশের ফল কী হবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। ফলে কোনও সম্ভাবনার উপর নির্ভর করে আগ বাড়িয়ে কোনও অবস্থান নেওয়া রাজনৈতিক মুর্খামি। তা ছাড়া, বাজেট অধিবেশন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনেক কারণেই তৃণমূলকে দরকার হবে। এই শিবির সিঙ্ঘভি-অমিত চাপানউতোরকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখছে। এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতি কেন্দ্রের ‘সহৃদয়তার’ উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরছে রাজ্যকে সাহায্য দিতে জয়রাম রমেশের উদ্যোগের বিষয়টিকে। বাঁকুড়ার একটি জল সরবরাহ প্রকল্পের জন্য ১,০১১ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন জয়রাম রমেশ। গত সপ্তাহে রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে জয়রামের সঙ্গে বৈঠক করতে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দিল্লিতে আসার কথা ছিল। সুব্রত না এলেও, পুরুলিয়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় জল সরবরাহ প্রকল্পের জন্য আরও ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করার সুপারিশ করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছেন জয়রাম।
আসলে কেন্দ্র রাজ্যকে আর্থিক সাহায্য করছে না, এই অভিযোগ একতরফা ভাবে মেনে নিতে নারাজ মনমোহন সিংহের সরকার। সিঙ্ঘভি আজ বলেন, কেন্দ্র অনগ্রসর এলাকা তহবিল হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের জন্য ৮,৭৫০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে। তিনি এই অনুমোদনের কথাই শুধু বলেছিলেন। তার মধ্যে কত টাকা রাজ্য পেয়েছে, তা তিনি বলেননি। কিন্তু রাজ্য এক পয়সাও পায়নি, তা-ও ঠিক নয়। কারণ অমিত মিত্রর জমানাতেই রাজ্যকে ২৩,৬৯৫ কোটি দিয়েছে কেন্দ্র। এই অর্থ রাজ্য হাতে পেয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবারই ১,০৪৬ টাকা বরাদ্দ হয়েছে বলেও জানিয়েছেন সিঙ্ঘভি। তাঁর অভিযোগ, “রাজ্যের অর্থমন্ত্রী শুধু ভুল বলেননি, ইচ্ছাকৃত ভাবে সত্যকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। কেন্দ্রের বিষয়টিকেও খাটো করে দেখানো হচ্ছে। কেন এই অদ্ভুত আচরণ, যে কেউ তা অনুমান করতে পারবেন।” সিঙ্ঘভির চ্যালেঞ্জ, কোথায় কোন খাতে কত টাকা দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে তিনি শ্বেতপত্র প্রকাশেও রাজি।
সিঙ্ঘভি এ কথা বললেও রাজ্যের ক্ষোভ কিন্তু বিন্দুমাত্র কমেনি। মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে খবর, মমতা নিজেই আজ প্রণববাবুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। প্রণববাবুকে তিনি বলেন, নতুন সরকারকে বছরে ২২ হাজার কোটি টাকা সুদ মেটাতে হচ্ছে। এই ঋণের বোঝা আগের বাম সরকার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে গিয়েছে। ফলে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ২৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজ্যকে দেওয়া হয়েছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে, অঙ্কের হিসেবে তা কিছুই নয়।
পশ্চিমবঙ্গের জন্য কেন্দ্রীয় সাহায্য নিয়ে এক সময়ে প্রণববাবুর সঙ্গে বাম আমলের অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্রের এই ধরনের বিতর্ক হয়েছিল। এ বারের বিবৃতির লড়াইয়ে অনেকে তারই পুুনরাবৃত্তি খুঁজে পাচ্ছেন। সিঙ্ঘভির দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, ৮,৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্যে ৬,৭৫৪ কোটি টাকার প্রকল্পের প্রস্তাব পশ্চিমবঙ্গের দেওয়ায় যা যোজনা কমিশনের এমপাওয়ার্ড কমিটি অনুমোদন করেছে। গত বছরের ২০ মে নতুন সরকার শপথ নেওয়ার পর অর্থ কমিশনের অনুদান, কেন্দ্রীয় করে রাজ্যের প্রাপ্য, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বরাদ্দ, নিকাশি, একশো দিনের কাজ, গ্রামীণ পানীয় জল প্রকল্প, আবাসন, শিক্ষা ও সাক্ষরতা অভিযানের মতো বিভিন্ন প্রকল্পে ২৩,৬৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
সিঙ্ঘভি আইনজীবী, তা-ই তিনি অর্থনীতি বোঝেন না, অমিতবাবুর এই মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র আজ বলেন, “এটা ঠিক যে আমি অর্থনীতিবিদ নই। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হল, অমিত মিত্রর মতো এক জন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এই সব তথ্য জানেন না। আর আপনি আইনজীবী হোন বা অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিতে থাকুন বা বণিকসভায়, তথ্য অপরিবর্তিত থাকে। রাজনীতিও তাকে বদলাতে পারে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.