পুরপ্রধান তাঁর ছ’জন অনুগামীকে নিয়ে দলত্যাগ করায় মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা পুরসভা কংগ্রেসের হাতছাড়া হল। এর ফলে ওই জেলায় এই প্রথম একটি পুরসভা তৃণমূলের দখলে যাওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না-করলেও দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরপ্রধান অনুপমা সরকার তাঁর অনুগামী ছয় কাউন্সিলরকে নিয়ে তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন। শেষ পর্যন্ত ওই কাউন্সিলররা তৃণমূলে যোগ দিলে এবং পুরসভা তৃণমূলের দখলে গেলে তা নিশ্চিত ভাবেই মুর্শিদাবাদের দাপুটে কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীর পক্ষে ‘বিড়ম্বনা’র হবে। পক্ষান্তরে, তৃণমূল মুর্শিদাবাদের মতো কংগ্রেসের ‘শক্তি ঘাঁটি’তে খাতা খুলবে।
২০১০ সালে বেলডাঙা পুরসভার ১৪টি আসনের ১০টিতেই জয়ী হয় কংগ্রেস। কিন্তু তার পরেই দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। যার পরিণতি ছয় অনুগামী নিয়ে পুরপ্রধানের দলত্যাগ। এই সিদ্ধান্তের কথা তাঁরা ইতিমধ্যেই দলের জেলা ও ব্লক সভাপতিকে জানিয়ে দিয়েছেন বলে অনুপমাদেবীর দাবি। তবে জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীরবাবু দিল্লি থেকে ফোনে জানান, ওই কাউন্সিলরেরা তাঁকে কিছু জানাননি। অধীরবাবু বলেন, “বিরোধের জেরে কেউ দল ছাড়লে তাঁকে জবরদস্তি করে আটকানোর মানে হয় না। তবে তাঁদের মনে রাখতে হবে, মানুষ ভোট দিয়ে কোনও ব্যক্তি নয়, কংগ্রেস প্রার্থীদের জিতিয়ে এনেছিলেন।”
রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি সুব্রত সাহা বলেন, “বেলডাঙা পুরসভার ওই কাউন্সিলররা তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য এখনও পর্যন্ত আমাদের কাছে লিখিত আবেদন করেনি। তবে আসতে চাইলে দরজা খোলা আছে।” তৃণমূল যুব কংগ্রেসের বেলডাঙা ব্লক সভাপতি গণেশ দাস অবশ্য স্পষ্টই বলেন, “ওই কাউন্সিলরেরা অপমানিত হয়ে কংগ্রেস ছেড়েছেন। আমরা ওঁদের দলে নেব।”
ওই পুরসভায় অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ নিয়ে দলের মধ্যে পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছিল কিছু দিন ধরেই। সংগঠনের বেলডাঙা ১ নম্বর ব্লক সভাপতি হাসিবুর চৌধুরী এ দিন বলেন, “পুরসভায় চার কর্মীর নিয়োগ-দুর্নীতির পিছনে রয়েছেন পুরপ্রধান নিজেই।” অন্য দিকে অনুপমাদেবী সরাসরি দায়ী করেছেন উপ-পুরপ্রধান ভরত ঝাওরকে। তিনি বলেন, “উপপ্রধান ষড়যন্ত্র করে আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বদনাম রটাচ্ছেন। এই অপমানের জবাব দিতেই দলত্যাগ করেছি।” ভরতবাবু অবশ্য পাল্টা বলেন, “প্রথম থেকেই পুরসভাকে স্বচ্ছ ও সক্রিয় করতে চেষ্টা করে ছিলাম। কিন্তু প্রধানের সহযোগিতা পাইনি। চার মাস ধরে তাই পুরসভাতেই যাচ্ছি না।” |