সুকৌশলে হাতিদের ছোট দলটিকে ‘ব্যারিকেড’ করে রেখে বড় দলটিকে দ্বারকেশ্বর নদ পার করালেন বন কর্মীরা। মঙ্গলবার রাতে বাঁকুড়া (উত্তর) ও বিষ্ণুপুর বন বিভাগের কর্মীরা হাতিদের দুই দলের মুখোমুখি হওয়া আটকাতে হিমশিম খান। দু’টি দল কয়েক দিন ধরে দ্বারকেশ্বর নদের দুই পাড়ে জড়ো হওয়ায় তাদের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা করছিলেন বন কর্তারা।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক দিন ধরে দ্বারকেশ্বর নদের দক্ষিণ পাড়ে লতিহিরে জড়ো হয়েছিল পুরুলিয়া থেকে আসা প্রায় ২৫টি হাতির পাল। নদের উত্তরপাড়ে সাতগাছিয়ায় চলে আসে দলমার প্রায় ১১০টি হাতি। দু’টি দল মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় প্রমাদ গুনছিল বন দফতর। দু’টি দল যাতে কোনও ভাবে মুখোমুখি না হয়, সে জন্য তৎপর হয়ে উঠেছিলেন বনকর্মীরা। তা রুখতেই নদীর পাড় থেকে ছোট দলটিকে বিষ্ণুপুর শহরের কাছে পানশিউলির জঙ্গলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। হুলাপার্টি ও বনকর্মীরা তাদের ‘ব্যারিকেড’ করে রাখেন। এই অবস্থায় সেখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে মঙ্গলবার রাতেই বিষ্ণুপুর বনবিভাগের হাতগাড়ার জঙ্গলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় বড় দলটিকে। বুধবার বড় দলটিকে তাড়া করে বাঁকাদহের পাশ দিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার জঙ্গলে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। |
হস্তিযূথ: বাঁকাদহ-জয়রামবাটী রাস্তায়। বুধবার শুভ্র মিত্রর তোলা ছবি। |
ডিএফও (বিষ্ণুপুর) বিদ্যুৎ সরকার বলেন, “ওই দলটিকে পশ্চিম মেদিনীপুরের দিকে এগিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত ছোট দলটিকে ‘ব্যারিকেড’ করে রাখা হয়েছে। বুধবার রাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের দিকে পাঠানোর চেষ্টা করা হবে।” তিনি জানান, বড় দলটি চলে গেলে বৃহস্পতিবার ছোট দলটিকে কড়রা ও ঢাঙাশোলের জঙ্গলের উপর দিয়ে রাইপুর হয়ে পুরুলিয়ার জঙ্গলে পাঠানোর চেষ্টা করা হবে। বনকর্মীরা জানান, ছোট দলটি পুরুলিয়ার দিক থেকে ঢুকেছে। ওই দলের আরও প্রায় ২৫টি হাতি বিচ্ছিন্ন হয়ে আমাদের এলাকারই বাঁকাদহ রেঞ্জের কলাবাগান, পিয়ারডোবার দিকে রয়েছে। তাদের এক সঙ্গে জড়ো করে বৃহস্পতিবারই খেদানো অভিযানে নামার চেষ্টা করা হচ্ছে। ডিএফও বলেন, “সংঘর্ষের আশঙ্কা এখন অনেকটাই কমে গিয়েছে। বহু দিন বাঁকুড়ায় থাকা দলমার হাতির এই বড় দলটির গতিপথ এখন পশ্চিম মেদিনীপুরের দিকে। আশা করছি বড় কোনও সমস্যা আর তৈরি হবে না।” সোনামুখী-পাত্রসায়র থেকে বড় দলটিকে নদী পার করে বিষ্ণুপুরের দিকে পাঠাতে পেরে স্বভাবতই হাঁফ ছেড়েছেন বাঁকুড়া (উত্তর) বনবিভাগের বনকর্মীরা। ডিএফও (বাঁকুড়া উত্তর) এস কুলন ডেইভাল বলেন, “নদীর দু’পাড়ে দু’টি দল থাকায় আমরা বেশ চিন্তায় ছিলাম। বিষ্ণুপুর বন বিভাগের ছোট দলটিকে ‘ব্যারিকেড’ করে রাখায় হাতিদের দু’টি দলের সংঘর্ষ ঠেকানো গেল।”
তাঁর বক্তব্য, “এক টানা ৩৪ দিন বড়জোড়া, বেলিয়াতোড়, সোনামুখী, পাত্রসায়র ও রাধানগর রেঞ্জের জঙ্গলে থাকা ১১০টি হাতি দু’জন মানুষকে মেরেছে। আট জনকে জখম করেছেন। আটটি গোবাদি পশুকে মেরেছে হাতিগুলি। প্রায় ১০০টি মাটির ঘর ভেঙেছে। প্রায় ৬০০ হেক্টর জমির ধান-সব্জি হাতিরা নষ্ট করেছে।” তিনি জানান, হাতির দলের অত্যাচারে বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। |