চলতি অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধির হার কমার পূর্বাভাসে দুশ্চিন্তায় গাড়ি শিল্প। আর্থিক বৃদ্ধি কমার জেরে গত অর্থবর্ষের তুলনায় এ বার যাত্রিবাহী গাড়ির বিক্রি কমবে বলেই তাদের আশঙ্কা। যা গত দশ বছরে কখনও ঘটেনি।
গাড়ি শিল্পের সংগঠন সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স (সিয়াম) বুধবার জানিয়েছে, পরিস্থিতি যা, তাতে ২০১০-’১১-এর চেয়ে ২০১১-’১২-তে যাত্রিবাহী গাড়ির ব্যবসা বাড়বে তো না, বরং কমতে পারে। যদিও গত মাসেই তারা জানিয়েছিল, যাত্রিবাহী গাড়ির বিক্রি হয় গত বছরের মতোই থাকবে বা দুই শতাংশের মতো বাড়বে। কিন্তু এখন তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ।
সিয়াম-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১১-এর জানুয়ারিতে দেশে ১,৮২,৮৫২টি যাত্রিবাহী গাড়ি বিক্রি হয়েছিল। এ বছর জানুয়ারিতে তা বেড়ে হয়েছে ১,৯৬,০১৩। বস্তুত, ২০১১-র নভেম্বর থেকেই তার আগের বছরের ওই সময়কালের তুলনায় গাড়ি বিক্রি বেড়েছে। কিন্তু ২০১০-র এপ্রিল থেকে ২০১১-র জানুয়ারি পর্যন্ত মোট যত যাত্রিবাহী গাড়ি বিক্রি হয়েছিল, তার তুলনায় ২০১১-র এপ্রিল থেকে ২০১২-র জানুয়ারি পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে প্রায় ১.১৯ শতাংশ কম। সিয়ামের ডিরেক্টর জেনারেল বিষ্ণু মাথুরের বক্তব্য, অর্থবর্ষের শেষ দু’মাসে গাড়ি বিক্রি কমপক্ষে ১০-১২ শতাংশ হারে না বাড়লে পরিস্থিতির উন্নতির কোনও আশা নেই।
গাড়ি শিল্প দেশের আর্থিক উন্নয়নের অন্যতম মাপকাঠি। তবে দামি ও বড় যাত্রিবাহী গাড়ির বিক্রি সার্বিক ভাবে গাড়ি শিল্পের ছবিটা তুলে ধরে না। কারণ সে ধরনের গাড়ি সংখ্যায় অনেক কম বিক্রি হয়। যাঁরা কেনেন, তাঁরা গাড়ি কেনা বা তা চালানোর রোজকার খরচ নিয়ে সে ভাবে মাথা ঘামান না।
কিন্তু কম দামি ও ছোট যাত্রিবাহী গাড়ির ক্ষেত্রে বিষয়টি উল্টো। বাজারও বিরাট। কার্যত যাত্রিবাহী গাড়ি বাজারের সিংহভাগই তাদের দখলে। ক্রেতাও ভিন্ন। সাধারণ ভাবে মধ্যবিত্তরাই এ ধরনের গাড়ি কেনেন। স্বাভাবিক ভাবেই গাড়ি কেনা ও তা চালানোর (অর্থাৎ, জ্বালানি) খরচ তাঁদের কাছে যথেষ্টই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে সেই গাড়ির বিক্রি এক দিকে যেমন গোটা গাড়ি শিল্পকে প্রভাবিত করে, তেমনই সামগ্রিক ভাবে অর্থনৈতিক অবস্থার প্রতিফলন ঘটায়।
মাথুর এবং দেশের বৃহত্তম গাড়ি সংস্থা মারুতি-সুজুকি-র অন্যতম কর্তা শশাঙ্ক শ্রীবাস্তবের মতে, প্রথমত, পেট্রোলের দাম বৃদ্ধির ফলে গাড়ি চালানোর খরচ বেড়েছে। ডিজেল গাড়ির চাহিদা বাড়লেও সেই গাড়ির দামও বেশি। দ্বিতীয়ত, চড়া মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম টানতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বারবার সুদের হার বাড়ানোয় মহার্ঘ হয়ে পড়ে গাড়ির ঋণ। ছোট ও কম দামি গাড়ির ক্রেতারা সাধারণ ভাবে ব্যাঙ্ক থেকে ধার করেই গাড়ি কেনেন। উপরন্তু, চড়া মূল্যবৃদ্ধি তাঁদের গাড়ি কেনার শখ স্থগিত রাখতে বাধ্য করে।
অথচ চলতি অর্থবর্ষের গোড়ায় গাড়ি শিল্পের আশা ছিল, এ বার ব্যবসা বাড়বে প্রায় ১৬-১৮%। কিন্তু ছবিটা বদলে যায় গত জুলাইতে। যাত্রিবাহী গাড়ির বিক্রি কমতে শুরু করে। নভেম্বর থেকে অবশ্য ফের বিক্রি বাড়ে। কিন্তু যতটা আশা করা হয়েছিল, ততটা নয়। মাথুর এ দিন বলেন, “গত তিন মাসে বিক্রি বাড়লেও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। এ রকম চললে যাত্রিবাহী গাড়ি ও তিন চাকার গাড়ির বিক্রি গত বারের তুলনায় কমবে।”
কিন্তু গত মাসেই তো যাত্রিবাহী গাড়ির বিক্রি সামান্য বাড়বে বলে সিয়াম পূর্বাবাস দিয়েছিল! মাথুর বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম সুদের হার কমবে। এবং সাধারণ ভাবে ডিসেম্বরের চেয়ে জানুয়ারিতে গাড়ি বিক্রি বেশি হয়। কিন্তু কোনওটাই হয়নি।” তাঁর দাবি, ক্রেতা টানতে অবিলম্বে সুদের হার কমাতে হবে। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক ডিজেল গাড়ির উপর যে অতিরিক্ত উৎপাদন শুল্ক বসানোর প্রস্তাব দিয়েছে, তারও বিরোধিতা করেছেন মাথুর।
শুধু যাত্রিবাহী গাড়িই নয়, বাণিজ্যিক গাড়ির বিক্রি নিয়েও অশনি সঙ্কেত দেখছে সিয়াম। মাথুরের বক্তব্য, আর্থিক বৃদ্ধির হার কমলে আঘাত আসতে পারে পরিকাঠামো ক্ষেত্রের উপর। সে ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক গাড়ির বিক্রিতেও প্রভাব পড়তে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। |