ঠাকুর গগনেন্দ্রনাথ
অদেখা ৩৭
ছরভর এ শহরে রবিপুজো চলে, এ বার সার্ধশতবর্ষে দিকে বিদিকে শুধুই তিনি। কিন্তু আরও যাঁরা জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির কৃতী সন্তান, তাঁদের কথা তেমন করে কেউ বলেন না। অন্তত ছবির জগতে গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬৭-১৯৩৮) কীর্তির কতটুকু যথাযথ মর্যাদায় সংরক্ষণ করেছি আমরা? ১৯০৫ সালে বড় ছেলে গেহেন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরে গুণেন্দ্রনাথ ও সৌদামিনী দেবীর জ্যেষ্ঠপুত্র গগনেন্দ্রনাথ ছবি আঁকা শুরু করেন, তখন তাঁর বয়স চল্লিশ ছুঁইছুঁই। তার পরে মৃত্যু পর্যন্ত যে তিন দশক চিত্রচর্চা করেছেন, তা ছিল বিবিধ নিরীক্ষায় পূর্ণ। ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব ওরিয়েন্টাল আর্ট ও বেঙ্গল হোম ইন্ডাস্ট্রিজ-এর প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য ছিলেন। ছোটদের জন্য লিখেওছেন, একটিমাত্র বই ভোঁদড় বাহাদুর। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে গগনেন্দ্রনাথের সম্পর্কটি ছিল আত্মীয়তার অতিরিক্ত কিছু। উইলিয়ম রোদেনস্টাইনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন গগনেন্দ্রনাথই।
যে বিশেষ ধরনের জোব্বা ও টুপিতে রবীন্দ্রনাথকে অনেক বার দেখা গিয়েছে সেটি গগনেন্দ্রনাথেরই উদ্ভাবিত নকশা-মাফিক তৈরি করা হত। তার আগে ঠাকুর পরিবারের বাইরে যাওয়ার পোশাক ছিল লম্বা কোট আর পিরালি পাগড়ি। সে পোশাক একেবারেই পছন্দ করতেন না গগনেন্দ্রনাথ। জোড়াসাঁকোয় আসা জাপানি শিল্পীদের ঝোলা পোশাক দেখে তিনি ফতেউল্লা নামে এক ওস্তাগরের সাহায্যে নিজের নকশায় ওই পোশাক তৈরি করান। ব্যঙ্গচিত্রশিল্পী হিসেবেও গগনেন্দ্রনাথ বিশেষ পরিচিত। তাঁর আঁকা ব্যঙ্গচিত্রের সংকলন— বিরূপ বজ্র ও অদ্ভুত লোক। দুটিই তাঁর নিজের উদ্যোগে নিজের লিথোপ্রেস থেকে ১৯১৭ সালে প্রকাশিত হয়। পরে থ্যাকার স্পিঙ্ক থেকে প্রকাশিত হয় আর একটি সংকলন নব হুল্লোড়। এহেন গগনেন্দ্রনাথের বহু পেন্টিং এত কাল ছিল রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির সংগ্রহে। সেই সংগ্রহ এ বার লিজ দেওয়া হয়েছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালকে। সেখানেই এখন চলছে গগনেন্দ্রনাথের ১০৮টি পেন্টিং নিয়ে স্মরণীয় একটি প্রদর্শনী। প্রকাশিত হয়েছে তার একটি ক্যাটালগও, রতন পারিমুর ভূমিকা-সহ।

তারাদের কথা
শিশুবেলাতেই মধুবালার প্রেমে পড়েন ভাইচাঁদ পটেল, আর তাঁর বাবা ছিলেন জুবেইদা-র ভক্ত। ভাইচাঁদ ভাবতেন ‘আলম আরা’-র (১৯৩১) নায়িকা জুবেইদা সুন্দরী বলে বাবা তাঁর ‘ফ্যান’, পরে বুঝেছেন, জুবেইদা কোনও এক নবাবের অস্বীকৃত কন্যাও বটে, তাঁর প্রতি বাবার সম্মোহনের কারণ সেখানেও। এ ভাবে গল্পচ্ছলেই নিজের বেড়ে ওঠার সঙ্গে বলিউডের সম্পর্ক নিয়ে ভূমিকা লিখেছেন ভাইচাঁদ তাঁর সম্পাদিত বলিউডস টপ টোয়েন্টি/ সুপারস্টারস অব ইন্ডিয়ান সিনেমা-য় (পেঙ্গুইন/ভাইকিং, ৫৯৯.০০)। সদ্য প্রকাশিত বইটির সঙ্গে একটি এমপিথ্রি অডিয়ো সিডি-ও, ৫০টি গান আছে তাতে ‘অল-টাইম ফেভারিট’। তালিকায় কে এল সায়গল থেকে করিনা কপূর যেমন আছেন, তেমন নেইও অনেকে। তার কৈফিয়তও তৈরি সম্পাদকের। অন্য দিকে, দুই তারকা দেব আনন্দ আর শাম্মী কপূরকে নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করেছে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ। আজ ৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে চারটেয় নন্দন-২-এ ওই তারকাদ্বয়কে নিয়ে বলবেন শঙ্করলাল ভট্টাচার্য, থাকবেন হরনাথ চক্রবর্তী ও নন্দন-অধিকর্তা যাদব মণ্ডল। সেমিনারের শেষে দেখানো হবে ‘গাইড’।

আদরের ছেলে
‘আমি (গ্রন্থকার) কোন সুবর্ণ ব্যবসায়ী সুবর্ণবণিকের গৃহে জন্ম গ্রহণ করি। আমি, পিতা মাতার একমাত্র সন্তান, ভাইও নাই ভগ্নীও নাই; সুতরাং, যারপরনাই আদরের ছেলে ছিলাম।’ লেখকের নাম জহরলাল ধর। উনিশ শতকের উত্তর কলকাতার আরও অনেক আদরের ছেলের মতো উচ্ছন্নে যাননি। পুস্তকব্যবসায়ী শ্বশুরের কল্যাণে বইয়ের নেশা। ম্যাজিক থেকে ক্রমে বিজ্ঞানের ভক্ত। হাওড়া ব্রিজের বিদ্যুদয়নের কাজে যোগ দিলেন। ‘সেফটি ডোর লক’ উদ্ভাবন করেছিলেন। ছিল লেখালিখির অভ্যাস। বিজ্ঞানের বই, নাটকের বইও। আর লিখেছিলেন ‘সচিত্র কলিকাতা রহস্য’। ১৩০৩ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত দুষ্প্রাপ্য বইটি ‘আবিষ্কার’ করেছেন বারিদবরণ ঘোষ। তাঁর সম্পাদনায় এ বই নতুন করে প্রকাশ করল পরশপাথর। কলকাতার বাবু এবং বাবু কলকাতার নানা ছবি। হুতোমের ছায়া, তবে ভঙ্গিটি নিজস্ব। একটা নমুনা: “দেখতে দেখতে ক্রমে বেলা হ’লো। গঙ্গার ঘাটে অনেক লোক জড় হ’তে লাগ্লো। কাজেই হেমলতা ও সুরেশ বাবু অধিক কথা কইতে সুবিধা পেলেন না। সুরেশ বাবু বল্লেন “এখন থাক থিয়েটারে দেখা হ’বে।” এই বলে সুরেশ বাবু ও হেমলতা চলে গেলেন।’

সম্ভাবনা
‘ইনফিনিট হিউম্যান পসিবিলিটিস ফোকাসিং উইমেন’। এই শিরোনামে একটি আলোচনাচক্রের আয়োজন করেছেন শ্রীসারদা মঠের সাংস্কৃতিক শাখা রসিক ভিটা। ১১ ফেব্রুয়ারি, শনিবার বালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছে চৌধুরী হাউস-এ সারা দিনের এই সেমিনার ও আলোচনা শুরু হবে সকাল সওয়া ন’টায়। প্রারম্ভিক অনুষ্ঠানে আশীর্বাণী দেবেন শ্রীসারদা মঠ ও রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের প্রেসিডেন্ট প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণা মাতাজি।

আপরেম
উনিশ বছর বয়সে কলকাতায় বসিয়েছিলেন প্রথম আবৃত্তির আসর। অতঃপর, সেই উদ্যোগ নানা ভাবে পল্লবিত হয়েছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। হোতা ছিলেন যিনি, সেই আবৃত্তিকার ও লোকসংস্কৃতি গবেষক দীপঙ্কর মজুমদার ১৯৭৬ সালে তৈরি করেন ‘আকাদেমি ফর পারফর্মিং অ্যান্ড রিপ্রোডাকশনাল মিডিয়া’, সংক্ষেপে আপরেম। কীর্তন-কথকতার প্রসারে এই সংস্থা কাজ করছে প্রত্যন্ত গ্রামে। সম্প্রতি আপরেম-এর জন্মদিনে জীবনানন্দ সভাঘরে ছিল অম্লান দত্ত ও দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতা। ছিলেন অধ্যাপক হোসেনুর রহমান, পবিত্র মুখোপাধ্যায় ও মেয়র শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।

জরুরি
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসকে সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দেখার আগ্রহ ইদানীং বেড়েছে। কী রোগ দেখা দিচ্ছে, তার মোকাবিলা হচ্ছে কী করে, রোগ প্রতিরোধের নীতি কেমন নেওয়া হচ্ছে, কী ধরনের গুজব-আতঙ্ক-বিতর্ক ছড়াচ্ছে রোগকে ঘিরে, ঐতিহাসিক থেকে জনস্বাস্থ্যের গবেষক, সকলে তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন। ১৮৯৮ সালে রাধাগোবিন্দ করের লেখা প্লেগ (২০০.০০) বইটির পুনর্মুদ্রণ করে একটা দরকারি কাজ করল ‘সূত্রধর’ প্রকাশন। সুবীরকুমার চট্টোপাধ্যায় তথ্যনিষ্ঠ ভূমিকা, এবং পরিশিষ্টে রাধাগোবিন্দ করের সংক্ষিপ্ত জীবনী লিখেছেন। মূল বইটি রোগনির্ণয়, চিকিৎসা, প্রতিরোধের ব্যবস্থা, এবং প্লেগ বিষয়ে নানা সরকারি বিজ্ঞপ্তি বা বক্তব্যের একটি সংকলন। বিজ্ঞানীর কলমে আবেগবর্জিত, তথ্যনিষ্ঠ লেখা। মানবসংকটের দিকটা পাওয়া যাবে এই সংকলনের ভগিনী নিবেদিতার লেখা সংক্ষিপ্ত নিবন্ধে। একটি জরুরি বই।

সীতা
আগামী ৯ এবং ১০ ফেব্রুয়ারি ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট-এর প্রেক্ষাগৃহে ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র কলেজের বাংলা, ইংরাজি, ইতিহাস ও দর্শন বিভাগ এবং আই এস আই-এর লিঙ্গুইস্টিক রিসার্চ ইউনিট-এর যৌথ উদ্যোগে দু’দিনের জাতীয় আলোচনাচক্রে রি-রাইটিং কালচার, রি-টেলিং ন্যারেটিভ্স: জেন্ডার অ্যান্ড দ্য পলিটিক্স অব রিপ্রেজেন্টেশন। একুশ শতকের নারীদের কাছে রামায়ণ এবং সীতার মতো একটি পৌরাণিক চরিত্র কী ভাবে গৃহীত হয়েছে, শ্যাম বেনেগালের ‘ভূমিকা’ এবং অপর্ণা সেনের ‘ইতি মৃণালিনী’-র সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য, বাংলার পটচিত্রে মহিলা, বিশেষত গণিকাদের বিদ্রূপাত্মক ভঙ্গিতে পেশ করায় চিত্রশিল্পে যে নতুন ধারার জন্ম হয়েছিল, লিঙ্গসাম্যের দৃষ্টিকোণ থেকে তার নানা দিক নিয়ে আলোচনা সহ নানা বিষয়ে বলবেন সোমদত্তা মণ্ডল, রত্নাবলী চট্টোপাধ্যায়, অমিতাভ নাগ, যশোধরা বাগচী, নীলাদ্রি রঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, উমা চক্রবর্তী, সুপর্ণা গুপ্তু, শমিতা সেন প্রমুখ বক্তা।

প্রণব রায়
বাংলা গানের স্বর্ণযুগের কারিগর প্রণব রায়ের অসামান্য কাজ মনে রেখেছেন অনেকেই। প্রায় সকলেরই অলক্ষ্যে পেরিয়ে গেল সুরলোকের এই ব্যক্তিত্বের জন্মশতবর্ষ। বড়িশার বড় বাড়িতে সাবর্ণ সংগ্রহশালা ওঁকে মনে রেখে সাজিয়েছে নতুন একটি গ্যালারি। প্রণব রায়ের স্মরণে এই ফিরে দেখা বিভাগে রেখেছে বিভিন্ন আলোকচিত্র, রেকর্ড, এবং ১৯০৪ -এর একটি গ্রামোফোন। স্থায়ী এই গ্যালারিটির উদ্বোধন হল গতকাল। উপস্থিত ছিলেন চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ। প্রদর্শনীর ‘অগ্নিযুগ বিভাগ’-এ রয়েছে টিপু সুলতানের পিস্তল, ১৮৫৭-র বিদ্রোহে ব্যবহৃত তলোয়ার, লর্ড কার্জনের চায়ের কাপ এবং স্বাধীনতা দিবসের আনন্দবাজার পত্রিকা। রয়েছে ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে ডাকটিকিট এবং ১৮৩০ থেকে ১৯৪৭-এর মুদ্রা সংগ্রহের প্রদর্শনী। ‘পুরনো সেই দিনের কথা’ শীর্ষক এই প্রদর্শনী চলবে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতি দিন সকাল দশটা থেকে রাত ন’টা।

তবু আলপনা
আলপনা এখন প্লাস্টিকের স্টিকারে পরিণত। তবু আশার কথা, অনেকেই আলপনার ঐতিহ্য নিয়ে চর্চা করছেন। জোকার গুরুসদয় সংগ্রহশালার পঞ্চাশতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এ বার বিষয় আলপনা। আগামী বুধবার সকাল দশটায় ব্রতচারী গ্রামে উদ্বোধন হচ্ছে ‘বাংলার ব্রতের আলপনা’ প্রদর্শনী। এটি চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, ১১-৫টা। বিধান বিশ্বাসের পরিচালনায় হবে আলপনার কর্মশিবির ১১ তারিখ পর্যন্ত, এবং একটি সেমিনার, ‘আলপনা অব বেঙ্গল: ট্রাডিশন, মর্ডানিটি অ্যান্ড বিয়ন্ড’। আলপনা চিত্রণের নানা দিক নিয়ে সেই আলোচনাসভায় আলপনার সেকাল-এ কাল নিয়ে কথা বলবেন দিব্যজ্যোতি মজুমদার, অভিজিৎ দাস, শ্রীকান্ত গৌর, দেবাশীষ মহলানবিশ, অম্বরীশ নন্দন, সুমহান বন্দ্যোপাধ্যায়, সুছন্দা ভট্টাচার্য ও সুভাষ রায়। ভবিষ্যতে এমন আয়োজন আরও করা হবে, জানালেন সংগ্রহশালার কিউরেটর বিজনকুমার মণ্ডল। ছবিতে দশ পুতুলের আলপনা (নদিয়া)।

রুশ ভারত
রাশিয়ার শিল্পী ইভান শিরকিনকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সম্প্রতি গোর্কি সদনে শুরু হয়েছে ইমেজ ইন্ডিয়া শীর্ষক এক চিত্র ভাস্কর প্রদর্শনী। ভারতীয় চিত্রশৈলীতে ১৬ জন চিত্রী-ভাস্কর অংশগ্রহণ করছেন এখানে। ৩১ জানুয়ারি এর উদ্বোধন করেন রুশ সংস্কৃতি কেন্দ্রের আলেকজান্ডার ভি মাজিরকা এবং প্রবীণ শিল্পী ধীরেন্দ্রনাথ ব্রহ্ম। এটি চলবে আগামী বুধবার পর্যন্ত, ৪-৭টা।

সরাসরি
ছবি: গোপী দে সরকার
বই পড়ার ঝোঁক ছোটবেলাতেই। পবিত্র সেনগুপ্ত কাজের সূত্রে প্রায় ছ’বছর ছিলেন জেনিভাতে। এ সময়ই রাতের ক্লাসে ফরাসি শেখা। জেনেছেন ওঁদের জীবন ও সংস্কৃতি। আকৃষ্ট হন আলব্যের কামুর সাহিত্যে। ফরাসি থেকে বাংলায় অনুবাদ শুরু করেন। কামুর বিশ্বখ্যাত উপন্যাস ‘লেত্রাঁজের’র অনুবাদ দেখে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এবং প্যারিস থেকে ফ্রাঁস ভট্টাচার্য। ‘অপরিচিত’ নামে সে বই প্রকাশ পায় ২০০৭-এ। এ বারের কলকাতা বইমেলায় কামুর ‘লা পেস্ত’-এর অনুবাদ প্রকাশিত হল ‘প্লেগ’ (এবং মুশায়েরা)। এই বইটির প্রকাশ উপলক্ষে তিনি এখন এ শহরে। জানালেন, ‘দীর্ঘ দিন ও দেশের সমাজজীবনকে কাছ থেকে দেখেছি বলেই অনেক সোজা হয়েছে কাজটি, প্রয়োজন হয়নি ইংরেজির মতো কোনও লিঙ্ক ল্যাঙ্গুয়েজ’।

তরুণ রাগী
ছবি: হীরক সেন
স্নিগ্ধ একটা বকুনিই দিলেন বেনেগাল, বললেন ‘ভ্যালু জাজমেন্ট-এর আপনি-আমি কে?’ কলকাতায় ‘সত্যজিৎ রায় স্মৃতি বক্তৃতা’ দিচ্ছিলেন শ্যাম বেনেগাল, সরস্বতী পুজোর দিন। শেষ হওয়ার পর প্রশ্নোত্তর পর্বে যথারীতি কোনও-কোনও বাঙালি তৎপর হয়ে উঠলেন নিজের মত প্রকাশে, বিশেষত নতুনদের সিনেমা যে ‘কিস্যু হচ্ছে না’ তা নিয়ে। ঠিক তখনই ঈষৎ বিরক্তি তাঁর মুখে, তার পর ওই মন্তব্য। নতুন প্রজন্ম যে তাড়াতাড়ি সিনেমা বানাতে শিখছে জানালেন সে কথা। রে সোসাইটি আর হারপার কলিন্স-এর প্রকাশনা ডিপ ফোকাস/ রিফ্লেকশনস অন সিনেমা; সত্যজিতের নতুন বইটি তাদেরই উদ্যোগে সে দিন আই সি সি আর-এর প্রেক্ষাগৃহে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করে হাতে তুলে দিলেন সন্দীপের। শ্যাম তাঁর বক্তব্যে দু’ভাগে ভাগ করেন ভারতীয় ছবিকে: ‘বিফোর রে’ আর ‘আফটার রে’। বেনেগালের বক্তৃতার পর শুরু হল সত্যজিৎকে নিয়ে ’৮৩-তে তোলা তাঁর আড়াই ঘণ্টার ছবি। কে জানে, বেনেগাল বলেই বোধহয় অত অনায়াস অনর্গল কথালাপে মেতেছিলেন সত্যজিৎ। ছবিতে বেনেগালের ফেলে-আসা বয়সটা দেখতে-দেখতে মনে পড়ল, তাঁর হাতেই হিন্দি ছবির ধমনীতে তরুণ রাগী রক্ত উজিয়ে ছিল সত্তর দশকে।

নতুন করে
নিজস্বতার সন্ধানে কেটেছে জীবন, এবং অবশ্যই শিল্প। তাঁর ক্ষেত্রে এই দু’টি বিষয়কে আলাদা করা কঠিন, কারণ বিচিত্র এক শিল্পিত জীবনই যাপন করেছেন তিনি। রেবা হোর। কুলদাচরণ দাশগুপ্ত এবং সুপ্রভা দাশগুপ্তের কন্যা পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হলেন সোমনাথ হোরের সঙ্গে। সেই শুরু জীবন ও শিল্পের গাঁটছড়া। অতঃপর, তীব্র আত্মচেতনা তাঁর সঙ্গী আমৃত্যু। দেশ-বন্দিত স্বামীর পাশাপাশি নিজের মতো করে চালিয়েছিলেন শিল্পসাধনা। বিভিন্ন মাধ্যমে। তাতে ভাষা দিয়েছেন নিজস্ব রূপকল্পকে, আবার সেই শিল্পকাজই তাঁকে এনে দিয়েছে খ্যাতি, অর্থ, এক ধরনের স্বাধীনতা। সবই তাঁর নিজের মতো করে। স্কুলে যাননি কখনও, কিন্তু ম্যাট্রিকে ফল হল চমকপ্রদ। বা, একই সঙ্গে আর্ট কলেজে শিল্প-শিক্ষা ক্যাজুয়াল শিক্ষার্থী হয়ে, অন্য দিকে এম এ পরীক্ষার প্রস্তুতি। শেষটায় জীবন তাঁকে টেনে নিল শিল্পেরই দিকে। মেয়ের সংকল্প দেখে পিতা শিল্পশিক্ষায় মত দিলেন বটে, শর্ত থাকল, ‘মাস্টারপিস’ আঁকতে হবে। আত্মকথায় রেবার সবিনয় মন্তব্য, সেই ছবিটি আর আঁকা হয়ে ওঠেনি। বিয়াল্লিশের উত্তাল আন্দোলন থেকে মন্বন্তর, কী দেখেননি তিনি? গৃহকর্ম সামলানোর পাশাপাশি কাজ করে চললেন, অংশ নিলেন বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে। প্রয়াণ ২০০৯-এ, কিন্তু রেবা হোরের স্মৃতি এখনও জীবন্ত। তাঁরই জলরঙ, তেলরঙ, টেরাকোটা এবং ব্রোঞ্জে করা কিছু নির্বাচিত কাজ নিয়ে কলকাতায় শুরু হয়েছে একটি প্রদর্শনী। স্থান, দ্য সিগাল ফাউন্ডেশন ফর দ্য আর্টস। সূচনা ছিল ২৪ জানুয়ারি, চলবে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত (সকাল ১১টা - রাত্রি ৮টা)। সঙ্গে কন্যা চন্দনা হোরের সৌজন্যে প্রাপ্ত ছবিতে সোমনাথ হোরের ক্যামেরায় তরুণী রেবা।
   


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.