আত্মঘাতী কনস্টেবল
পারিবারিক অশান্তি চলছিল বেশ কিছু দিন ধরে। কিন্তু শনিবার ভোরে বড় ছেলে যে নিজের ‘সার্ভিস’ রিভলভার থেকে ছোট ছেলেকে গুলি করবে, তা ভাবতে পারেননি হুগলির জনাইয়ের ঘোষপাড়ার বাসিন্দা প্রতিভা রায়। বাধা দিতে গিয়ে তিনিও গুলিতে জখম হন। শেষমেশ প্রতিভাদেবীর সামনেই নিজের মাথায় গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন তাঁর বড় ছেলে, কলকাতা পুলিশের ৭ নম্বর ব্যাটালিয়নের কনস্টেবল অনুপ রায় (৩৮) ওরফে অপু। তিনি বিদ্যুৎমন্ত্রী মনীশ গুপ্তের বাড়ির নিরাপত্তা রক্ষীর কাজ করতেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গুরুতর জখম প্রতিভাদেবী ও তাঁর ছোট ছেলে বিদেশকে প্রথমে চণ্ডীতলা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে স্থানান্তরিত করানো হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদেশের ঘাড়ে ও গলায় তিনটি গুলি ঢুকে আটকে রয়েছে। তাঁর অস্ত্রোপচার দরকার। প্রতিভাদেবীর বাঁ হাতের কব্জির উপরের দিকে গুলি লেগে বেরিয়ে যায়। প্রাথমিক তদন্তের পরে জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, “ওই
অনুপ রায়।
পরিবারে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে গোলমাল চলছিল। তার জেরেই ওই ঘটনা।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অপু ও বিদেশ দুই ভাই বিবাহিত। অপুর ৬ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। বিদেশ কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থার পদস্থ কর্মী। বেশ কিছু দিন ধরেই দুই ভাইয়ের বনিবনা হচ্ছিল না। দুই ভাইয়ের স্ত্রী-ই কিছু দিন আগে বাপেরবাড়িতে চলে যান। শুক্রবার সন্ধ্যায় কাজ থেকে ফেরার পরে বিদেশের সঙ্গে অপুর বচসা হয়। রাত পৌনে ১২টা নাগাদ অপু নিজের মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে যান। ভাইয়ের বিরুদ্ধে চণ্ডীতলা থানায় হুমকির ডায়েরি করেন। তার পরে রাতে আর বাড়ি ফেরেননি। শনিবার ভোর ৬টা নাগাদ ফিরে মোবাইলে বাবা সুধাকর রায়কে ডেকে দরজা খোলান। তার পরে নিজের ‘সার্ভিস’ রিভলভার নিয়ে সোজা ঢুকে যান ভাইয়ের ঘরে। ওই ঘরে প্রতিভাদেবীও ছিলেন। বড় ছেলেকে ওই অবস্থায় দেখে তিনি বাধা দিতে যান। তার পরেই ওই ঘটনা।
গুলির শব্দে প্রতিবেশীরা চলে আসেন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় অপুর। পুলিশ এসে দেহটি উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে পাঠায়। তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা জানান, তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে বিদেশের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল বলে সন্দেহ করতেন অপু। তা থেকেই দুই ভাইয়ের বিবাদ। ‘সার্ভিস’ রিভলভার কর্মস্থলে জমা দিয়ে আসা নিয়ম হলেও অপু তা করেননি। সব ক’টি গুলিই তিনি খরচ করেন। তাঁর পকেট থেকে আরও ৬টি গুলি মেলে। ঘর থেকে রিভলভারটি উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সম্প্রতি বেশ কিছু টাকা ধারও হয়ে গিয়েছিল অপুর। কী কারণে তাঁর টাকার প্রয়োজন হচ্ছিল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে তাঁরা জানান। হুগলি জেলা পুলিশের থেকে ঘটনার কথা জানতে পেরে দুপুরেই ঘটনাস্থলে আসে কলকাতা পুলিশের একটি দল।
হাসপাতালে প্রতিভাদেবী।
তবে, প্রতিবেশীরা ঘটনার কারণ নিয়ে ধন্দে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটি ‘সিল’ করে দিয়েছে পুলিশ। দরজা, দেওয়ালের গায়ে রক্তের দাগ। রাস্তার কয়েকটি জায়গায় প্রতিবেশীদের জটলা। সুধাকরবাবু সকালেই হাসপাতালে চলে যান। প্রতিবেশী অলোক ঘোষ বলেন, “অপু ভাল ছেলে ছিল। কেন এমন করল বলতে পারব না। গুলির আওয়াজ শুনে এসে দেখি ধস্তাধস্তি হচ্ছে। কিন্তু দরজা বন্ধ থাকায় প্রথমে ঢুকতে পারিনি।” একই বক্তব্য আর এক প্রতিবেশী বীরেন্দ্রনাথ হালদারেরও।
এ দিন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিল্ডিংয়ে গিয়ে দেখা যায় শয্যায় শুয়ে বিদেশ। পুরোপুরি জ্ঞান হারাননি, তবে ঘোরের মধ্যে রয়েছেন। গোঙানির আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। শূন্য দৃষ্টিতে বসেছিলেন প্রতিভাদেবী। জানালেন, বেশ কিছু দিন ধরেই বড় ছেলে কথায় কথায় রেগে যাচ্ছিল। চিৎকার করত, স্ত্রীকে মারধরও করেছে কয়েকবার। তাঁরা তটস্থ থাকতেন। অনেক বার চেঁচামেচি সামলাতে প্রতিবেশীরাও আসেন। প্রচণ্ড সন্দেহবাতিকও ছিল। সব সময় মনে করত, ওর বিরুদ্ধে সবাই ষড়যন্ত্র করছে। এই আচরণের জন্য দিন পনেরো আগে অপুর স্ত্রী মুনমুন মেয়ে অভীপ্সাকে নিয়ে অন্ডালে বাপেরবাড়ি চলে যান। হাসপাতালে একই কথা জানান সুধাকরবাবুও। বড় ছেলের টাকা ধারের কথাও তিনি স্বীকার করেছেন।
শনিবার ভোরের ঘটনার ব্যাপারে প্রতিভাদেবীর দাবি, “মোটরবাইক রাখা নিয়ে বিদেশের সঙ্গে ঝগড়া হয় অপুর। আমি ছুটে গিয়ে দেখি, অপু রিভলভার বার করে গুলি করে দেবে বলে শাসাচ্ছে। আমি বাধা দিতে যাই। সেই সময়েই ও গুলি চালায়, পর পর বেশ কয়েক বার। আমি ও বিদেশ পড়ে যাই। তখন অপু নিজেকেই নিজে গুলি করে।” ওয়ালশ হাসপাতালে এসে মুনমুন অবশ্য এই ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

ছবি: প্রকাশ পাল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.