|
|
|
|
এখনও জেলেই সুশান্ত |
সংবর্ধনার কথা বলেও পিছু হটলেন রবীন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা ও মেদিনীপুর |
জামিন পেয়ে জেল থেকে বেরোনর পর সুশান্ত ঘোষকে ‘সংবর্ধনা’ দেওয়ার কথা বলেও পিছু হঠলেন সিপিএমের রাজ্য
নেতা রবীন দেব। তাঁর পিছু হঠার কারণ ঘরে বাইরে ‘বিরূপ প্রতিক্রিয়া’।
শনিবার কলকাতা জেলা পার্টি অফিসে এক সাংবাদিক বৈঠকে রবীনবাবুকে প্রশ্ন করা হয়, সুশান্তবাবু কি তাঁদের ব্রিগেড সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন? জবাবে রবীনবাবু বলেন, “নিশ্চয়ই থাকবেন।” সুশান্তবাবু জেল থেকে মুক্তি পেলে কি তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে? রবীনবাবু বলেন, “মিথ্যা মামলায় সুশান্তকে ১৭৮ দিন জেলে থাকতে হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে শর্ত সাপেক্ষে জামিন দিয়েছে। উনি যে দিন জেল থেকে বেরোবেন, ইচ্ছা তাঁকে ওই দিন সংবর্ধনা জানাব। যেখানে তাঁকে মুক্ত করা হবে, আমরা কলকাতা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার নেতারা সেখানে তাঁকে রিসিভ করব।”
রবীনবাবু ওই কথা বলার সময় রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী অনাদি সাহু-সহ কলকাতা জেলার বেশ কয়েক জন নেতা তাঁর পাশেই বসেছিলেন। সাংবাদিক বৈঠক শেষ হওয়ার পরেই সুশান্তবাবুকে ‘সংবর্ধনা’ দেওয়া নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। কারণ, সুশান্তবাবু আপাতত ‘শর্তাধীনে’ জামিন পাচ্ছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কিন্তু ফৌজদারি মামলাগুলি চলছে। সেগুলি চলতেও থাকবে। তাতে দোষী প্রমাণিত হলে সিপিএমের ওই প্রাক্তন মন্ত্রীর সাজাও হবে। সেই প্রেক্ষিতে রবীনবাবু যে ভাবে আগ বাড়িয়ে জামিন পাওয়াতেই সুশান্তবাবুকে ‘সংবর্ধনা’ দেওয়ার কথা বলেছেন, তাতে বিতর্ক তৈরির অবকাশ ছিল। রবীনবাবু নিজেও সম্ভবত বিষয়টি বুঝতে পারেন। কারণ, তাঁর বক্তব্যের অব্যবহিত পরেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “সুশান্তকে সংবর্ধনা দেওয়াটা তো সিপিএমের পবিত্র চিন্তা! সিপিএম অনেক দিন ধরে দলে শুদ্ধিকরণের কাজ শুরু করেছিল। সুশান্তকে সাদরে গ্রহণ করে সংবর্ধনা দিলে সেই শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে!” রাজ্য-রাজনীতিতে তাঁর ‘সংবর্ধনা’ কোলাহল তুলেছে দেখে নিজের বক্তব্য থেকে দ্রুত সরে এসে রবীনবাবু বলেন, “আমি নিজে থেকে সংবর্ধনা শব্দটি বলিনি। সংবর্ধনা দেওয়া হবে কিনা, তা নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন। আমি বলেছি, ওঁকে রিসিভ করা হবে। সুশান্ত ছাড়া পাওয়ার সময়ে আমরা কিছু নেতা জেল গেটে যাব। তাঁকে রিসিভ করব। সংবর্ধনার কথা তুলে অহেতুক বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে!” তার আগে অবশ্য রবীনবাবুই বলেছিলেন, তাঁর সুশান্তবাবুকে সংবর্ধনা দেওয়ার ‘ইচ্ছা’ রয়েছে।
সিপিএম সূত্রের খবর, রবীনবাবু প্রকাশ্যে সংবর্ধনার কথা বলার পরেই দলের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ফলে শেষপর্যন্ত আলিমুদ্দিনের নির্দেশেই রবীনবাবুকে পিছু হঠতে হয়। দলের নেতাদের একাংশ মনে করেন, সিপিএম যতই সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’র অভিযোগ তুলুক, তিনি অভিযোগ থেকে মুক্ত হওয়ার আগে স্রেফ জামিন পেলেই তাঁকে সংবর্ধনা দিলে জনমনে তার ‘বিরূপ প্রতিক্রিয়া’ হবে।
সুশান্তবাবু অভিযোগ থেকে মুক্ত হলে দল কি তাঁকে প্রচারে নামাবে? রবীনবাবু বলেন, “উনি মুক্ত হলে নিষেধাজ্ঞা মেনে যা যা করার করব। সুশান্তকে নিয়ে তো আমরা চুপ করে বসে থাকব না! প্রায় ছ’মাস
জেল খেটে বেরোনর পর ওর
শারীরিক অবস্থা কেমন থাকবে, দেখেই যা যা করার করা হবে।” সুশান্তবাবুকে যে ব্রিগেড সমাবেশে হাজির করানো হবে, শুক্রবারই সিপিএম তা জানিয়েছিল। এ দিনও রবীনবাবু বলেন, “দলের সব রাজ্য নেতাই ব্রিগেডে উপস্থিত থাকবেন। সুশান্তও থাকবে। রাজ্য সম্মেলনেও থাকবে।” সুশান্তবাবু জামিন পেলেও লক্ষ্মণ শেঠ, তরুণ রায়ের মত রাজ্য নেতারা এখনও পলাতক। সিআইডি তাঁদের খুঁজছে। দল কি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে? রবীনবাবু বলেন, “বিষয়টি বিচারাধীন। তাই এ নিয়ে মন্তব্য করব না।”
সুশান্তবাবুর জামিন সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের ‘সার্টিফায়েড কপি’ এ দিনও মেদিনীপুর আদালতে পৌঁছোয়নি। ফলে এ দিনও কারামুক্তি হল না গড়বেতার সিপিএম বিধায়ক সুশান্তবাবুর।
মেদিনীপুরে সুশান্তবাবুর আইনজীবী বিশ্বনাথ ঘোষ
জানান, নিয়ম অনুযায়ী যে আদালতে বিচার চলছে (ট্রায়াল কোর্ট) প্রথমে সেখানে উচ্চ আদালতের জামিনের নির্দেশের ‘সার্টিফায়েড কপি’ জমা দিতে হয়। ট্রায়াল কোর্টের অনুমোদনপত্র নিয়ে জেলে
জমা দেওয়ার পরেই ছাড়া পেতে পারেন কোনও বন্দি। ওই
অনুমোদন পেতে পেতে সোমবার হয়ে যাবে বলেই আইনজীবীর বক্তব্য।
তার পর আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে মুক্তি পাবেন সুশান্তবাবু। তবে, রবিবার সার্টিফায়েড কপি হাতে এলে ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও ওই বিষয়ে বিশেষ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হতে পারে বলে আইনজীবী জানিয়েছেন। জামিনের খবরে আশ্বস্ত সুশান্তবাবুর পরিবারে অবশ্য এ দিনই একটি দুঃখজনক ঘটেছে। দীর্ঘদিন অসুস্থ সুশান্তবাবুর অশীতিপর শাশুড়ি সাবিত্রী বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন সকালে মেদিনীপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গিয়েছেন। |
|
|
|
|
|