|
|
|
|
সঙ্কটে পুণে ওয়ারিয়র্সও |
আবেগের সিদ্ধান্তেও বন্ধ হয়নি আলোচনার দরজা |
গৌতম ভট্টাচার্য • কলকাতা |
মার্চেন্ট ডি ল্যাঞ্জ নামের এক টেস্ট খেলা দক্ষিণ আফ্রিকান পেসারকে নিয়ে বিশাল স্বপ্ন দেখছে কলকাতা নাইট রাইডার্স! শনিবার বেঙ্গালুরুতে যাঁকে তারা নিলামে কিনল। জীবনের প্রথম টেস্টেই আট উইকেট নিয়েছেন ডি ল্যাঞ্জ। আগামী ৫ মে ইডেনে এক প্রান্ত থেকে তিনি। আর এক দিক থেকে অস্ট্রেলিয়ায় সচিনদের জন্য সন্ত্রাস সৃষ্টি করা জেমস প্যাটিনসন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ব্যাট করতে এলে শোনা যাচ্ছে, এটাই হত নাইটদের দিক থেকে সম্ভাব্য গোলাগুলি। অথচ আইপিএলে এখন থেকেই সবচেয়ে ঔৎসুক্য, সাসপেন্স আর উত্তেজনা সৃষ্টিকারী সেই ম্যাচটাই কি না সহারা টিম তুলে নেওয়ায় আর হচ্ছে না। সৌরভের অধিনায়কত্বে পুণে ওয়ারিয়র্স বনাম শাহরুখের মালিকানাধীন কেকেআর। খেলাটা হওয়ার কথা ছিল খোদ কলকাতায়।
ভারতীয় দলের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক দীর্ঘ এগারো বছরের
আর আইপিএলে সবে গত বছর খেলতে এসেছিল, সেই সহারা ইন্ডিয়া পরিবার শনিবার আচমকা যাবতীয় যোগসূত্র ছিন্ন করে দিল ভারতীয় ক্রিকেটের সঙ্গে। এ দিন নিলামের ঠিক এক ঘণ্টা বাকি থাকতে হঠাৎ সৌরভ-সহ কর্তারা হোটেল ছেড়ে চলে যান। বোর্ডকে কিছু না জানালেও সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, তাঁরা প্রতিবাদে নাম তুলে নিচ্ছেন আইপিএল থেকে। আর টিম স্পনসরও থাকবেন না। সিদ্ধান্ত জানাজানি হতে যা প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়, তা ইদানীংকালে ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে নজিরবিহীন। |
|
সাংবাদিক বৈঠকে সুব্রত রায়। ছবি: রয়টার্স |
কিন্তু স্বপ্নের সেই সৌরভ বনাম শাহরুখ আইপিএল ম্যাচ হচ্ছে না-টা কি চূড়ান্ত? এটাও কি চূড়ান্ত যে, সহারা তাদের সিদ্ধান্তে অনড়ই থেকে যাবে?
শনিবার বেশ রাতে মুম্বই থেকে সহারা-র এক কর্তা বললেন, “স্যার চলে গিয়েছেন রীতেশ দেশমুখের বিয়ের রিসেপশনে। ওঁকে ধরা যাচ্ছে না। বোর্ড এ দিকে বেসরকারি ভাবে অনুরোধের পর অনুরোধ পাঠিয়ে যাচ্ছে। কী দাঁড়াবে বলা খুব কঠিন।” অনিশ্চয়তা আরও তৈরি হয় সহারা শীর্ষ কর্তা সুব্রত রায়ের মন্তব্যে যে, “আমরা এখনও আলোচনার দরজা খোলা রেখেছি। আমি একটা ব্যাপারেই চিন্তিত যে আমার প্লেয়াররা যেন খেলতে পারে। টাকাটা সমস্যা নয়।” সুব্রতবাবুর সঙ্গে কথা বলে সৌরভ তাঁর ঘনিষ্ঠদের রাতে জানান, সব আশা শেষ হয়নি। আনন্দবাজারের সাক্ষাৎকারেও একই কথা বলেছেন। শোনা যেতে থাকে, আইপিএল থেকে হুড়মুড় করে দল প্রত্যাহারের নানা রকম আইনি জটিলতাও রয়েছে। রাতারাতি আবেগপ্রবণ সিদ্ধান্ত নিয়ে সেই সিদ্ধান্তে দাঁড়িয়ে থাকা খুব কঠিন। আবার সহারার মধ্যেই অনেকে বলতে থাকেন, “এখন খেলার কোনও মানে হয় না। এখন খেললে আমাদের বেকার দুর্বল দল নিয়ে খেলতে হবে। সবাই টিম সাজিয়ে নিয়েছে।” সহারা যাঁর আমলে প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটে ঢুকেছিল, সেই জগমোহন ডালমিয়ার মতো অনেকেরই মনে হচ্ছে, দু’এক দিন না গেলে এমন ঘোর কুয়াশা পরিষ্কার হবে না। আলোচনার রাস্তা সত্যিই খোলা রয়েছে। কারও কারও আবার মনে হচ্ছে, বোর্ড সামান্য নমনীয় হয়ে যদি বেঙ্গালুরুর শনিবারের নিলামটা স্থগিত রাখত, তা হলে পরিস্থিতি এত জটিল হয়ে পড়ত না। এই মতবাদের অন্যতম প্রবক্তা সুনীল গাওস্কর।
পরিস্থিতি আপাতত কেমন? জনৈক ফ্র্যাঞ্চাইজির ভাষায়, বল বোর্ডের কোর্টে। তাদের উপর নির্ভর করছে কী হবে। তারা কি সরকারি ভাবে নড়েচড়ে বসবে? সহারাকে ছাড় দিতে রাজি হবে? নাকি এ রকমই ঔদ্ধত্যপূর্ণ, অনমনীয় থাকবে?
যদি অবিকল এ রকমই থেকে যায়, ভারতীয় ক্রিকেটের জলবায়ুতে অনেক পরিবর্তন আসন্ন। ক) ঘোর অনিশ্চিত হয়ে পড়বে সৌরভের আইপিএল গ্রহে রাজকীয় প্রত্যাবর্তন। খ) আইপিএল হয়ে যাবে ফের আট দলের। গ) ভারতীয় দল হবে টিম স্পনসরবিহীন।
সচিনদের ০-৮ বিপর্যয়ের দশ দিনের মধ্যে এটা একই রকম বিশালতম ধাক্কা যে, বছর পিছু ১৪০ কোটি টাকার স্পনসর করা সহারা-গোষ্ঠী সরে গেল টিম স্পনসরশিপ থেকে। দেশে ক্রিকেট দেখানোর স্বত্ব যাদের হাতে, সেই নিও স্পোর্টসের সঙ্গে বোর্ডের টিভি চুক্তি এমনিতেই বিপর্যস্ত। এর পর ২০১৩-র ডিসেম্বর পর্যন্ত স্পনসরশিপের দায়িত্বে থাকা সহারার আগাম সরে যাওয়া জাতীয় ক্রিকেট বিপণনে অপ্রত্যাশিত অগ্নুৎপাত। ক্রিকেটমহলের মনে হচ্ছে, সহারা যদি অনমনীয় থাকে, ভারতীয় ক্রিকেটের এমন হতাশাজনক বাজারে নতুন এবং একই রকম বড় স্পনসর টানা দুঃসাধ্য হবে।
ঘটনাচক্রে ভারতীয় ক্রিকেটের নবতম ভাগ্যবিপর্যয় ঘটল ক্রিকেটের এক ট্র্যাজিক নায়ককে কেন্দ্র করে। তিনি যুবরাজ সিংহ। বিশ্বকাপের ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্ট। কিন্তু বেশ কিছু দিন ক্যান্সারে আক্রান্ত। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানায় তাঁর কেমোথেরাপি হচ্ছে। ন’সপ্তাহের চিকিৎসা। তাঁর অসুস্থতা নিয়ে চার দিকে এমন ঢাক-ঢাক গুড়-গুড় যে, একমাত্র গত ২৮ নভেম্বরের আনন্দবাজার ছাড়া কোথাও বারই হয়নি যে যুবরাজের বুকের টিউমার মোটেও নন-ম্যালিগন্যান্ট নয়। যুবরাজ এখনও টেকনিক্যালি পুণে ওয়ারিয়র্সের অধিনায়ক এবং অসমসাহসী এক মানুষ। এ রকম মারণ অসুখের মুখে পড়েও প্রাণপণ চেষ্টা করছিলেন আইপিএল খেলতে। বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে কিছু দিন আগেও ট্রেনিং করেছেন। করতে গিয়ে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত মাসের মাঝামাঝি পুণে কর্তারা জানতে পারেন, আইপিএল দূরে থাক, আগামী জুন পর্যন্ত সবুজ ঘাসেই পা রাখার উপায় নেই যুবরাজের। তখন থেকেই তাঁরা চাইছিলেন পরিবর্ত হিসেবে কোনও ভারতীয় মার্কি প্লেয়ারকে। যেমন এ বারের নিলামে ছিলেন রবীন্দ্র জাডেজা। তাঁদের বিশ্বাস, যুবরাজকে আগামী আইপিএলেও পাওয়া যাবে না এবং সে জন্যে বোর্ডের অবশ্যই উচিত উপযুক্ত পরিবর্ত খুঁজে দেওয়া। আর যুবরাজের জন্য যে টাকাটা খরচ হয়েছে, সেই আট কোটি টাকা নিলামে পুণে-র কোটার সঙ্গে যোগ করা। যাতে পুণে একই রকম দামি প্লেয়ার কিনতে পারে।
বোর্ড কর্তারা মানতে রাজি হচ্ছিলেন না। তাঁরা বলতে থাকেন, চোটগ্রস্ত প্লেয়ারের ও ভাবে নিলামে পরিবর্ত দেওয়া হয় না। এটা ফ্র্যাঞ্চাইজির দুর্ভাগ্য হিসেবেই ধরে নিতে হবে। গত বার যেমন পুণের হয়ে আশিস নেহরা চুক্তিবদ্ধ হয়েও বিশ্বকাপের সময় চোট পাওয়ায় গোটা মরসুম খেলতে পারেননি। মতপার্থক্য তৈরি হতে থাকে ঠিক এই জায়গায়। সহারার পক্ষ থেকে বলা হতে থাকে, চোট পাওয়া একটা প্লেয়ার আবার ফিরে আসবে চোট সারিয়ে। তার জন্য নিয়মের যে ধারা, তা কী ভাবে এক করা সম্ভব এমন এক জন প্লেয়ারের সঙ্গে, যিনি গভীর অসুস্থ এবং আবার ফিরবেন কি না নিশ্চয়তা নেই। |
অভিমানের সাতকাহন |
• বোর্ড ‘তুচ্ছ পদ্ধতিগত কারণে’ ২০০৮ আইপিএলে সহারাকে যোগ দিতে দেয়নি। |
• ২০১১ আইপিএলে ৯৪টি ম্যাচ হবে ধরে সহারা দরপত্র দিলেও হয় ৭৪টি ম্যাচ। ২০ ম্যাচের আনুপাতিক টাকা চেয়েও মেলেনি। |
• অসুস্থ যুবরাজ এ বার আইপিএল খেলবেন না। তাঁর দামের টাকাটা নিলামে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়নি পুণেকে। অথচ চোট-জর্জরিত মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বাড়তি বিদেশি নিতে দেওয়া হয়। |
• ২০১১-এ সব ক্রিকেটারকেই নিলামে তোলার প্রস্তাব অগ্রাহ্য। |
• তারকাদের না পেয়ে বাড়তি বিদেশি চেয়েছিল পুণে, সঙ্গে কোচিও। বোর্ড দেয়নি। |
• ২০০৩ বিশ্বকাপ-সহ ৩ টুর্নামেন্টে সহারার লোগো ছাড়া ভারত খেললেও স্পনসরশিপের পুরো টাকা দেওয়া হয়েছিল। |
• সহারা আন্তরিক হলেও বোর্ড শুধু নিয়ম দেখিয়ে বুঝিয়েছে তারা দেওয়া-নেওয়ায় বিশ্বাসী নয়। |
|
আইপিএলের নিয়মে আসলে গভীর অসুস্থ প্লেয়ার নিয়ে কোনও ধারাই নেই। এই প্রশ্নটাই তুলে সহারা মহাকর্তা সুব্রত রায় শুক্রবার রাতে ফোনে কথা বলেন ক্রিকেট বোর্ডের সর্বেসর্বা শ্রীনিবাসনের সঙ্গে। ঘটনাচক্রে তিনি প্রেসিডেন্ট পদাধিকারী। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটে অলিন্দে ঘোরাফেরা করা একটা চামচিকেও জানে, বোর্ড চলে স্রেফ শ্রীনিবাসনের অঙ্গুলিহেলনে। শ্রীনিবাসনকে তিনটে বিকল্প দেন সুব্রতবাবু। বলেন, প্লেয়ার প্রচণ্ড চোট পেয়ে আবর্তে পড়ে যাওয়া টিমের জন্যে বিকল্প ব্যবস্থা অতীতে করা হয়েছে। এ বারই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স টিমে অনেক চোট-আঘাত থাকায় বিশেষ ব্যবস্থাক্রমে তারা পাঁচ জন বিদেশি প্লেয়ার খেলাতে পেরেছিল। বোর্ড তাদের অনুরোধ শোনে এবং তখন কেউ আপত্তি করেনি। এ ভাবেই যদি পুণের জন্য ব্যতিক্রম করা হয়। দুই, যদি সৌরভকে ধরা হয় যুবরাজের পরিবর্ত হিসেবে। বেশির ভাগ দল ৯ কোটি ২০ লক্ষ টাকা নিয়ে শনিবারের নিলামে এসেছিল। এর মধ্যে পুণে সৌরভকে ১ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা দিয়ে কেনায় তাদের হাতে ছিল ৭ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা। সহারা মহাকর্তা প্রস্তাব দেন, যুবরাজকে যদিও অনেক বেশি টাকা দিয়ে কেনা হয়েছিল (প্রায় আট কোটি), তবু ধরে নেওয়া হোক সৌরভকে দিয়েই সেই পরিবর্ত হয়ে গেল। আর সহারাকে নিলামে ৯ কোটি ২০ লক্ষ টাকা খরচ করার অনুমতি দিয়ে দেওয়া হল। যাতে অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে তারা একই লাইনে থাকে। তিন) যুবরাজকে কিনতে যে টাকা খরচ হয়েছে, সেটা যোগ করে দেওয়া হোক সহারার হাতে থাকা টাকার সঙ্গে। তখন তাদের নিলামের জন্য তহবিল দাঁড়ায় ১৫ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা।
শ্রীনিবাসন তিনটি বিকল্প শুধুই অগ্রাহ্য করেননি, এমন ভঙ্গিতে নাকি কথা বলেছেন তার মর্মার্থ দাঁড়ায়, আইন যা আছে তাতে মানিয়ে খেলো। নইলে বাড়ি যাও। মিডিয়া এবং জনমানসে তীব্র সমালোচিত হলেও ফ্র্যাঞ্চাইজিদের মধ্যে অনেকেই শ্রীনিবাসনের বক্তব্যে যৌক্তিকতা পেয়েছেন। কেকেআর সিইও বেঙ্কি মাইসোর যেমন আনন্দবাজারকে ফোনে বললেন, “আমার পুরোনো কোম্পানির বস বলতেন, ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠান তৈরির মূল মন্ত্র হল নিয়মের ব্যতিক্রমকে সব সময় অগ্রাহ্য করা। আইপিএল তখনই আরও শক্তিশালী হবে, যদি তারা ব্যতিক্রমের অনুমতি না দেয়।” অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তারাও কেউ কেউ বলেছেন, সহারার প্রস্তাব বোর্ড আমাদের সামনে ফেললে আমরা তীব্র বিরোধিতা করতাম। “এটা কেমন কথা যে, আমাদের হাতে প্লেয়ার কেনার জন্য থাকবে ৯ কোটি, আর পুণের হাতে ১৫ কোটি?” লন্ডনে বসে ললিত মোদী সারা দিন ট্যুইটারে শ্রীনিবাসনের উদ্দেশ্যে আক্রমণাত্মক সব টুইট করে গিয়েছেন: ‘ভারতীয় ক্রিকেটের কালো দিন শুধু একটা ইগো-ম্যানিয়াক লোকের জন্য। যখন এক জন একই সঙ্গে টিম মালিক, রাজ্য সংস্থার প্রেসিডেন্ট, বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট এবং আইসিসি-র সবচেয়ে প্রভাবশালী মানুষ হয়ে ওঠে, তখন খেলাটার ভাগ্য এ রকমই হয়।’ কিন্তু ললিত মোদীও সরাসরি বলতে পারছেন না যুবরাজ-সঙ্কটে সবাইকে মানিয়ে নিয়ে সমাধানের রাস্তাটা কী হতে পারত। তিনিও বলতে পারছেন না পুণের দাবি অত্যন্ত সঙ্গত ছিল।
পুণে যে দল তুলে নেবে, তার কোনও আভাস অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজিদের দেয়নি। গত দিন দশেক ধরেই বোর্ডের সঙ্গে তারা এ ব্যাপারে আলোচনা চালাচ্ছিল। ভাবতেই পারেনি শেষ পর্যায়ে এসে তা মুখ থুবড়ে পড়বে। এত কঠোর ভাবে তারা যে প্রত্যাখ্যাত হবে। সহারা পুণে ওয়ারিয়র্স বনাম বোর্ড লড়াইয়ে যাঁরা নিরপেক্ষ, তাঁরাও মেনে নিচ্ছেন, অতীতে ভারতীয় দলকে সব রকম সাহায্যের হাত টিম স্পনসররা বাড়িয়ে দিয়েছে। জগমোহন ডালমিয়া এবং ললিত মোদী বোর্ড রাজনীতিতে দুই ভিন্ন মেরুর বাসিন্দা হলেও একটা ব্যাপারে একমত। যে কোনও রকম সঙ্কটে সহারা ভারতীয় ক্রিকেট দলের পাশে ছিল। কেউ কেউ এমনও বলছেন, ক্রিকেটকর্তারা বহু দিন ধরেই স্পনসরদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে আসছেন। সহারা একমাত্র নয়। হিরো হন্ডা থেকে বিদেশি ব্যাঙ্ক, সবাই ভুক্তভোগী। শুধু এ বার তাঁদের মাথায় নেই, ০-৮ বিপর্যয়ের পর ঔদ্ধত্যের বাজার আর নেই।
বোর্ডের পক্ষ থেকে এখনও সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আইপিএল চেয়ারম্যান রাজীব শুক্ল। নিলামের সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে যদিও তিনি বলছিলেন, “পুণে নেই তো কী ? দ্য শো মাস্ট গো অন।” কিন্তু ভেতরে ভেতরে শনিবার রাত অবধি রাজীবরা আশাবাদী, সহারা সিদ্ধান্ত বদলাবে। আবেগ থেকে যুক্তির রাস্তায় আসবে। সহারা কর্তারা আবার মনে করেন, আবেগের কোনও মূল্য এত বছর বোর্ড দেয়নি। অতএব এ বার আর যুক্তির সমর্পণ নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।
শনিবারের অভূতপূর্ব ডামাডোলের মধ্যে কারও মনেই পড়ল না নিলামে যে অবিক্রিত থেকে গেলেন ভিভিএস লক্ষ্মণ। আগের বছর সৌরভের অবিক্রিত থাকা নিয়ে দেশ জুড়ে তোলপাড় হয়েছিল। এ বার ভারতীয় দলে থাকা লক্ষ্মণের বহিষ্কার বরাবরের মতো কাব্যে উপেক্ষিতই থেকে গেল। নাম প্রত্যাহার নিয়ে মিডিয়া-গর্জন এবং কিচির-মিচিরের মধ্যে কোথায় হারিয়ে গেলেন লক্ষ্মণ। |
|
|
|
|
|