সংস্কারের অভাব, পড়ে নষ্ট সেচ প্রকল্প
প্রশাসনিক ‘উদাসীনতায়’ দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে সেচ প্রকল্প। এর ফলে মার খাচ্ছে প্রায় চার হাজার একর দোফসলি-তিনফসলি জমির সেচ। স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনও কাজ না হাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা শেষ পর্যন্ত দ্বারস্থ হয়েছেন বিধায়কের। অবিলম্বে সেচ প্রকল্প চালু করার দাবি তুলেছেন তাঁরা।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়ূরাক্ষী নদীর জলকে চাষের কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে জমিদারি আমলে লাভপুর থানার গুণুটিয়া, দাঁড়কা, মীরবাঁধ থেকে দরবারপুর পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সেচ খাল কাটা হয়েছিল। পরবর্তী কালে ওই সেচ খালটি চাষিদের দুর্ভোগের মাত্রা বাড়িয়েছিল। কারণ, জল নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষাকালে প্লাবনে সেচ খাল দিয়ে ময়ূরাক্ষী নদীর জল ভাসিয়ে দিত মাঠের ফসল, লাগোয়া জনপদ। আবার সেচ খালে জল ধরে রাখার ব্যবস্থা না থাকায় তা নদীপথে নেমে গিয়ে সৃষ্টি করত সেচ সঙ্কট। এই অসুবিধা দূর করতে সংশ্লিষ্ট লাভপুর পঞ্চায়েত সমিতি ১৯৯৬-৯৭ আর্থিক বছরে গুণুটিয়ায় সেচ খালের মুখে ময়ূরাক্ষী নদী বাঁধে প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা ব্যায়ে একটি কপাট বাঁধ (সুইস গেট) নির্মাণ করেছিল। নানা টানাপোড়েনের পরে ২০০১-০২ আর্থিক বছরে ওই গেট নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ হয়।
উদ্দেশ্য ছিল, বর্ষার সময়ে গেট বন্ধ করে নদীর প্লাবনের হাত থেকে ফসল ও জনপদ রক্ষা করা। আবার প্রয়োজনের সময়ে গেট খুলে নদীর জল সেচ খালের মাধ্যমে চাষের কাজে লাগানো। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতে মুখ থুবড়ে পড়ে গোটা প্রকল্প। দীর্ঘদিন আগে জলের তোড়ে ভেঙে গিয়েছে গেটের বিভিন্ন অংশ। সংস্কারের অভাবে মজে গিয়েছে সেচ খালটি।
এ ভাবেই পড়ে রয়েছে লক গেট। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।
এলাকার চাষিদের অভিযোগ, সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নের নামে ২৬ লক্ষ টাকা কার্যত জলে গিয়েছে। দাঁড়কার বাসিন্দা সৃষ্টিধর দাস, মীরবাঁধের রিয়াজুল ইসলামদের দাবি, “প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে, এমটা হয়েছে। কারণ, সেচ খালের যে মুখ দিয়ে জল ঢোকে, গেট বসানো হয়েছে তার উল্টো দিকে। স্বাভাবিক ভাবে জলের তোড়ে ভেঙে পড়েছে গেটের বিভিন্ন অংশ। এখন বর্ষায় ভাঙা গেট দিয়ে সেচ খালে নদীর জল ঢুকে ভেসে যায় মাঠের ফসল, ঘরবাড়ি। আবার গেট কাজ না করায় সেচ খালেও প্রয়োজনীয় জল ধরে রাখা যায় না।”
দরবারপুরের হোসেন আলি, খিলাফত শেখদের ক্ষোভ, “এলাকার অধিকাংশ জমি দুই কিংবা তিন ফসলি। ওই সব জমি চাষ করতে গিয়ে, চাষিদের সেচের জন্য বহু টাকার বিদ্যুৎ কিংবা জ্বালানি পোড়াতে হয়। সেচ প্রকল্পটি ঠিকঠাক কাজে লাগলে স্থানীয় ১০-১২টি গ্রামের প্রায় চার হাজার একর জমিতে বিনা খরচে কিংবা খুব সামান্য খরচে সেচ দেওয়া সম্ভব হত।”
কিন্তু প্রশাসন ওই সেচ প্রকল্পটি সংস্কারের ব্যাপারে কোনও গুরুত্ব দেয়নি বলে ওই সব চাষিদের অভিযোগ। সংশ্লিষ্ট দাঁড়কা পঞ্চায়েতের প্রধান, সিপিএমের সেরি বিবি বলেন, “পঞ্চায়েতের আর্থিক সঙ্গতির মধ্যে ওই সেচ প্রকল্প সংস্কার করা সম্ভব নয়। তাই পঞ্চায়েত সমিতির দৃষ্টি আকর্যণ করা হয়েছে।” একই বক্তব্য, লাভপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নদেরচাঁদ বাগদিরও। তিনি বলেন, “ওই সেচ প্রকল্পটি সংস্কারের জন্য আমরা জেলা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।” অন্য দিকে, জেলাপরিষদের সভাধিপতি, সিপিএমের অন্নপূর্ণা মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছি।” এক সময় দাঁড়কা পঞ্চায়েতের অন্যতম কর্মকর্তা তথা উপপ্রধান ছিলেন বর্তমান লাভপুর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। সম্প্রতি স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁর কাছে ওই সেচ প্রকল্প সংস্কারের জন্য স্মারকলিপি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ওই সেচ প্রকল্পটি এলাকার কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক সুবিধা এনে দিতে পারত।” তাঁর দাবি, “দীর্ঘদিন ধরে পঞ্চায়েতের তরফে আমরাও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ওই সেচ প্রকল্প সংস্কারের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তা কার্যকরি হয়নি। গ্রামবাসীদের দাবি মতো ওই সেচ প্রকল্প সংস্কার বা পুনির্মাণের ব্যাপারে রাজ্য সেচ দফতরে জানিয়ে যত দ্রুত সম্ভব কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.