শীত পড়লেই বাঙালির জিভে খেজুর রসের স্বাদ জাঁকিয়ে বসে। বিশেষ অতিথির মর্যাদা নিয়ে খেজুর রস আর গুড় শীতকাল আলোকিত করে রাখে। বাংলার গ্রামে গৃহস্থের বাড়িতে সকালে মুড়ি সহযোগে খেজুর রস দিয়ে প্রাতরাশের প্রচলন আজও আছে। তবে শীতের সকালে বাজারে হাঁড়ি নিয়ে রস-ব্যবসায়ী বসে আছেন এমনটা আজকাল দেখাই যায় না। এর কারণ, খেজুর গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রশিক্ষিত শ্রমিকের অভাব। অথচ পৌষ-সংক্রান্তিতে পিঠে-পুলি তৈরির জন্য খেজুর গুড়ের প্রয়োজনীয়তা এখনও প্রশ্নাতীত। পৌষমাস এলেই খেজুর গুড়ের চাহিদা বাড়তে থাকে। মোটামুটি ভাবে ৪০ লিটার রস থেকে দিনে ৭-৮ কেজি গুড় তৈরি হয়। ৭০ টাকা কেজি দরে তা বিক্রি হয়। বড় উনুনে টিনের তাপাল-এ রস জ্বাল দিয়ে সময় মতো নামিয়ে নিতে হয়। অনেকক্ষণ ধরে নাড়াচাড়া করে দানাভাব এলে মাটির তৈরি ছাঁচে ফেলা হয়। এই ভাবে চলছে গুড় তৈরির কুটির শিল্প। দক্ষিণ দিনাজপুরে মাত্র দুই-চার জন শ্রমিক এখনও এই কাজে যুক্ত আছেন। তাই চাহিদা মেটাতে অন্য জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা তা নিয়ে আসছেন বাজারে। কিন্তু সেই স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে হতাশ হচ্ছেন ভোজনরসিক বাঙালি। আসলে অনেকেই বেশি আয়ের জন্য ভেজাল মেশাচ্ছেন। ফলে এই কুটির শিল্পের সর্বনাশ হচ্ছে। আর আসল স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাঙালি।
|
বর্তমানে বিশ্বায়নের বিষ-বাষ্পে যেখানে হাজার হাজার বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নিজের সন্তানদের কাছেই ব্রাত্য, অবহেলিত এবং জীবন সায়াহ্নে এসে আশ্রয় নিতে হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে, সেখানে এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের নিঃস্ব-অসহায় বৃদ্ধা মায়ের প্রতি অগাধ মাতৃসেবা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। আধুনিক শিক্ষিত সমাজ এর থেকে অন্তত পক্ষে এক নৈতিক শিক্ষার দৃষ্টান্ত পাবে।
চল্লিশ বছরের পুণ্য জন্মসূত্রেই মানসিক ভারসাম্যহীন। অঞ্চলে সে ‘পুণ্য পাগলা’ নামেই পরিচিত। ছোটবেলায় চিকিৎসা করেও ভাল হয়নি। পুণ্য’র বাড়ি জলপাইগুড়ি জেলার ফালাকাটা ব্লকের কালিপুর গ্রামে। মা কামিনী বর্মণের বয়স আশি। ওঁর বাবা কামা বুড়ো ছিলেন ছোট মাপের জোতদার। তিন পুত্র সন্তান জন্মানোর পর স্বামী মারা যান। কামিনী দেবী ছেলেদের নিয়ে চলে আসেন বাপের বাড়ি। সেখানেই নানা ঘাত-প্রতিঘাতে ছেলেদের বড় করে তোলেন। এখন জায়গা-সম্পত্তি সব বিক্রি হয়ে গেছে। বড় দুই ছেলে বৃদ্ধা মাকে দেখে না বললেই চলে। কিন্তু পুণ্য পাগলা মাকে ছাড়া থাকতে পারে না। ছোট্ট ভিটেমাটিতে নড়বড়ে পাটশলার বেড়ার ঘর। মা এক সময় দিনমজুরের কাজ করতেন। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় পুণ্যকে কেউই দিনমজুরির কাজ দেয় না। সে স্থানীয় মিষ্টির দোকানগুলোতে জল আনার কাজ করে। হাটবারে একটি হোটেলে থালা-বাসন ধোয়। জটেশ্বর, শিশাগোড়, সোনাপুর হাট থেকে দালালদের গরু আনা-নেওয়ার কাজ করে। তবে পুণ্য রোজগারের পয়সা যত্ন করে বাঁচিয়ে রাখে। কাজের জন্য কোথাও গেলে সে গাড়িতে চড়ে না। এ ভাবে যে দিন যতটুকু রোজগার করে, সে দিন তা দিয়েই দু’বেলা বা এক বেলা খেয়ে দিন কাটায়। বিপিএল তালিকায় নাম থাকলেও তা কী এঁরা বোঝেন না। বৃদ্ধার বয়স ৮০ পেরোলেও বার্ধক্য ভাতা বা বিধবা ভাতা পান না। তবে দারিদ্র সত্ত্বেও ওঁরা কারও কাছে ভিক্ষে চান না। মা অসুস্থ হলে পুণ্য ওষুধ কিনে দেয়। ভ্যানরিকশা ভাড়া করে মা’কে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। নিজের তেমন জামা না থাকলেও মা’কে সময় মতো কাপড় কিনে দেয়। মা’কে সেবা করাই তার জীবনের ব্রত। |
ওঁরা আসে দার্জিলিং, কালিম্পং, মিরিক, ভুটান ও গ্যাংটক থেকে। গন্তব্য শিলিগুড়ি শহরের হাকিমপাড়ায় মহকুমা পরিষদের কাছে। ওখানেই হরেক পসরা সাজিয়ে বসে ভুটিয়াদের গরম পোশাকের বাজার। রকমারি নকশার চাদর, সোয়েটার, জ্যাকেট, টুপি, মাফলার, হাত-মোজা, শাল, উইন্ডচিটার, মেয়েদের লং-কোট সবই পাবেন ওঁদের কাছে। আগে হাতে বোনা সোয়েটারও পাওয়া যেত। এখন সবই রেডিমেড। উল বোনার পারিশ্রমিকই ছ’শো থেকে সাতশো টাকা। তার পর রয়েছে উলের দাম। সব মিলিয়ে যে খরচ পড়ে, তার চেয়ে অনেক কম দামে রেডিমেড গরম পোশাক পাওয়া যায়। নভেম্বরের শেষের দিকেই ওঁরা চলে আসেন। থাকেন ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ঠান্ডা’র ওপর নির্ভর করে বিক্রি। বেশি ঠান্ডা পড়লে বিক্রিও বাড়ে। এ বছর মাঝে ঠান্ডা কমে যাওয়ায় কপালে ভাঁজ পড়েছিল। তবে মোটের ওপর ঠান্ডা ভাল হওয়ায় সবার মুখে হাসি ফুটেছে।
|
কবিতায় কবিতায় বর্ষশেষের আড্ডা রীতিমত জমজমাট ছিল ইসলামপুরে। শব্দ কথার নির্মাণ নিয়ে বেশ কেটে গেল ২০১১-এর শেষের দিনটি। ইসলামপুর কিশলয় মঞ্চে এই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল ‘রোববারের সাহিত্য আড্ডা’। কবিতায় কবিতায় অপরাহ্ন পেরিয়ে রাত্রি নামল ঝুপ করে। প্রতি মাসের শেষ রবিবার জেলার কবি-সাহিত্যিকদের নিয়ে এই আড্ডা বসে ইসলামপুরে। কবিতা পাঠ এবং সাহিত্য নিয়ে নানান আলোচনায় অংশ নেন কবি-সাহিত্যিকরা। গত তিন বছরে এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি। বছর শেষের এই আড্ডায় বর্ষীয়ান কবিদের পাশাপাশি আড্ডায় মেতেছিলেন নবীন কবিরাও। এই নির্ভেজাল আড্ডার মাধ্যমেই উত্তরের সাহিত্য জগতে জায়গা করে নিচ্ছে ইসলামপুর।
|