ঢাকুরিয়ায় আমরি হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডে অন্য কয়েক জন কর্তার সঙ্গে সেখানকার দুই ডিরেক্টর রাধেশ্যাম অগ্রবাল এবং রাধেশ্যাম গোয়েনকাও গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু গ্রেফতারের সময় থেকেই অগ্রবাল আছেন হাসপাতালে। কতটা অসুস্থ তিনি? এই বিষয়ে এসএসকেএম হাসপাতালের কাছ থেকে রিপোর্ট চাইল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি অসীম রায় ও বিচারপতি অসীম রায়ের (দু’জনের একই নাম) ডিভিশন বেঞ্চ অগ্রবালের চিকিৎসার সমস্ত তথ্য সিল করা খামে হাইকোর্টে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।
বুধবার হাইকোর্টে দুই রাধেশ্যামের জামিনের আবেদনের শুনানি শুরু হয়েছে। শুনানির বেশির ভাগ অংশ জুড়ে ছিল অগ্রবালের অসুস্থতার প্রসঙ্গ। নিম্ন আদালতের নির্দেশে অগ্রবাল এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন। আর রাধেশ্যাম গোয়েনকা রয়েছেন জেলে।
আমরির ওই দুই ডিরেক্টরের হয়ে এ দিন সওয়াল করেন প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল বলাই রায়। তিনি আদালতকে বলেন, ১৯৯৫ সালে রাধেশ্যাম অগ্রবালের বাইপাস অস্ত্রোপচার হয়েছে। তখন থেকেই তিনি অসুস্থ। ২০১১ সালে তিনি আমরির কোনও বোর্ড মিটিংয়েই যোগ দিতে পরেননি। আলিপুর আদালতের বিচারকও তাঁর অসুস্থতার গুরুত্ব বিচার করে এসএসকেএমেই তাঁকে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
কিন্তু সরকার পক্ষের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, রাধেশ্যাম অগ্রবাল সম্পূর্ণ সুস্থ। সবটাই নাটক হচ্ছে। ৮ ডিসেম্বর শেষ রাতে আমরিতে অগ্নিকাণ্ডের পরের দিনেও তিনি বহু জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। মোবাইলের টাওয়ার থেকে তা জানা গিয়েছে। সে-দিন সন্ধ্যা ৭টার পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।
ঠিক কবে এবং কখন রাধেশ্যাম অগ্রবাল বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তাঁর আইনজীবীর কাছে তা জানতে চায় ডিভিশন বেঞ্চ। বলাইবাবু জানান, তাঁর মক্কেল অগ্রবাল ৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পরেই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। এসএসকেএম থেকে অগ্রবালের চিকিৎসা সংক্রান্ত যে-রিপোর্ট আলিপুর আদালতে পাঠানো হয়েছিল, তার প্রতিলিপি জমা দেন সরকারি আইনজীবী কল্যাণবাবু।
তিনি বলেন, রিপোর্টে লেখা আছে, অগ্রবালের শারীরির অবস্থা স্থিতিশীল। ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতিরা বলেন, ওই রিপোর্ট নয়। অগ্রবালকে পরীক্ষা করে বিভিন্ন চিকিৎসক যে-রিপোর্ট দিয়েছেন, তাঁরা সেটাই দেখতে চান। সেই রিপোর্ট থেকেই তাঁর স্বাস্থ্যের প্রকৃত অবস্থা বোঝা যেতে পারে।
কেন তিনি তাঁর মক্কেলদের জামিন চাইছেন, সেই ব্যাপারে সওয়াল করে বলাইবাবু বলেন, জামিনের বিরোধিতা করার জন্য পুলিশ সব সময়েই বলে, অভিযুক্তেরা জামিন পেলে তথ্যপ্রমাণ লোপাট করবে। সাক্ষীদের প্রভাবিত করবে। সরকার পক্ষের আইনজীবীরা নিম্ন আদালতে সে-কথাই বলেছেন। কিন্তু আমরি হাসপাতালে আগুন লাগার ক্ষেত্রে ডিরেক্টরদের ভূমিকা কী, ওই দুর্ঘটনার সঙ্গে তাঁরা কী ভাবে যুক্ত, তা বলা হয়নি। ডিরেক্টরেরা বোর্ড মিটিংয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সেই সব সিদ্ধান্ত রূপায়ণ করেন হাসপাতালের কর্মীরাই। এই অবস্থায় তিনি তাঁর মক্কেলদের জামিন চান।
কল্যাণবাবুর বক্তব্য, এটা এত লঘু করে দেখার বিষয় নয়। বছরের পর বছর দমকল দফতর জানিয়ে এসেছে, আমরি হাসপাতালে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার অভাব আছে। বোর্ড মিটিংয়ে তা নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু তার পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বেসমেন্ট ‘পার্কিং’ বা গাড়ি রাখার জায়গা হিসেবে ব্যবহৃত হবে বলে জানিয়ে অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে ওষুধের দোকান ও গুদাম তৈরি করা হয়েছে। ডিরেক্টরেরা এ-সব জানতেন না, তা হতেই পারে না। তাঁরা সব জেনেও চোখ বন্ধ করে থেকেছেন। কয়েক বছর আগেও ওই হাসপাতালে আগুন লেগেছিল। তখন এক কর্মী ফোন করে দমকলকে জানিয়েছিলেন। তার জন্য তাঁকে বরখাস্ত হতে হয়। এ বারের অগ্নিকাণ্ডে ৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ডিরেক্টরেরা এত মানুষের মৃত্যুর দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারেন না।
আগামী সোমবার ফের এই মামলার শুনানি হবে। |