ধৃত অবসরপ্রাপ্ত আইএএস-ও
লোহাচুর মামলায় গ্রেফতার আমলা
লোহাচুর দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করা হল দেবাদিত্য চক্রবর্তী নামে এক আইএএস অফিসারকে। খাদ্য দফতরের অধীন অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিগমের (ইসিএসসি) ৩২৮ কোটি টাকার লৌহ আকরিক দুর্নীতির ঘটনায় জড়িত অভিযোগে সিআইডি বুধবার দেবাদিত্যবাবুকে গ্রেফতার করে। ১৯৭৬ সালের আইএএস দেবাদিত্যবাবু ২০০৬-এর ১৪ জুলাই থেকে কমপালসারি ওয়েটিংয়ে রয়েছেন। ২০১৩ সেপ্টেম্বরে তাঁর চাকরির মেয়াদ শেষ হবে। এই প্রথম রাজ্যের কোনও কর্মরত আইএএস অফিসারকে দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার করা হল।
দেবাদিত্যবাবুর সঙ্গেই গ্রেফতার করা হয়েছে এক অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসারকেও। আর এম পি জামির নামের ওই প্রাক্তন আমলা ১৯৭৭ ব্যাচের আইএএস। তিনি ২০০৮ সালে অবসর নিয়ে নাগাল্যান্ডে নিজের বাড়িতে চলে যান। সেখান থেকেই সিআইডি তাঁকে গ্রেফতার করেছে। সিআইডি-র ডিআইজি কে জয়রামন এ দিন জানান, যে সময় কালে দুর্নীতির ঘটনা ঘটে, তখন ধৃতেরা অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন। তাই তাঁরা নিজেদের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।
সোমবারই অন্ধ্রপ্রদেশের এক কর্মরত আইএএস অফিসার বি পি আচার্যকে জমি সংক্রান্ত দুর্নীতির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। আচার্য অন্ধ্রপ্রদেশের স্বরাষ্ট্র সচিবের দায়িত্বে ছিলেন। বছর কয়েক আগে বিহারের আইএএস অফিসার গৌতম গোস্বামীকে ত্রাণ বণ্টন সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। কিন্তু কর্মরত অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গে কোনও আইএএস অফিসারের গ্রেফতার এই প্রথম।
খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, ২০০৪ সালে চিনে লৌহ আকরিকের গুঁড়ো সরবরাহের ব্যবসা করতে গিয়ে ২০০ কোটিরও বেশি টাকা (পরে তা ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়) বিনিয়োগ করেছিল রাজ্য সরকারের অধিগৃহীত অত্যাবশ্যক পণ্য সরবরাহ নিগম (ইসিএসসি)। এটি খাদ্য দফতরের অধীন। দুর্নীতির বিষয়টি ধরা পড়ার পরে খাদ্য দফতরই প্রাথমিক তদন্ত করে পুলিসের কাছে এফআইআর করে। কলকাতা পুলিশ ওই ঘটনার তদন্ত করছিল। নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে তদন্তের দায়িত্ব দেয় সিআইডি-কে। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এ দিন বলেন, “লোহার আকরিক চুরির ঘটনায় ইসিএসসির একাধিক কর্মী-সহ কয়েক জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও জড়িত। সিআইডি তদন্ত করছে। এ দিন দু’জনকে তারা গ্রেফতার করেছে। আরও কয়েক জনের খোঁজ চলছে।” খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ওই ঘটনায় জড়িতদের সকলকেই গ্রেফতার করা হবে।
অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও কেন নিগম ওই ব্যবসায় নেমেছিল, তা খুঁজতে গিয়ে খাদ্য দফতর জেনেছিল, আর্থিক দৈন্য কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতেই ঝুঁকি নিয়েছিলেন নিগম কর্তারা। অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য একাধিক বেসরকারি সহযোগী সংস্থাকে নিয়ে নিগম ওই ব্যবসায় নেমেছিল। জেরায় তদন্তকারী অফিসারদের কাছে সংস্থার তৎকালীন কর্তারা এমনই ব্যাখ্যা দিয়েছেন বলে সিআইডি সূত্রের দাবি।
সংস্থা রুগ্ণ। নিজেদেরও টাকা ছিল না। তাই ব্যাঙ্কের থেকে রফতানির জন্য কম সুদে ঋণ নিয়ে তা সহযোগী বেসরকারি সংস্থাগুলিকে দিয়েছিল ইসিএসসি। খাদ্য দফতর তাদের নিজস্ব তদন্তে দেখেছে, ২০০৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৪০ হাজার টন আকরিকের গুঁড়োর জন্য একটি জাহাজকে দেওয়া হয় ৬ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা। সেই টাকা আটকে ছিল ২০০৫ সালের ১ মার্চ পর্যন্ত। তার জন্য নিগম সুদ গুনেছে ১৭ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। বাজারে তখন জাহাজের ভাড়া ছিল টনপিছু ২৩ ডলার। সেই সময়েই সিঙ্গাপুরের একটি সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয় টনপিছু ২৬ ডলারে।
সিঙ্গাপুরের যে জাহাজ সংস্থার সঙ্গে ইসিএসসি-র টাকার লেনদেন হয়েছিল তার মালিক বাংলাদেশের নাগরিক বলে খাদ্য দফতরের তদন্তেই ধরা পড়ে। সেই সূত্র ধরে কলকাতা পুলিশ দেখেছিল, ফেরা আইনের তোয়াক্কা না করেই ওই সংস্থাকে জাহাজের ভাড়া বাবদ ৫টি কিস্তিতে ভারতীয় মুদ্রায় ১৬ কোটি টাকা আগাম দেওয়া হয়েছে। সেই টাকা আর ফেরত পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয়, চিনের যে বন্দরে জাহাজ পৌঁছনোর কথা ছিল, সেখানে তা না যাওয়ায় ক্ষতিপূরণও দিতে হয়েছে ইসিএসসিকে। চুক্তিভঙ্গের জন্য আইনজ্ঞের চিঠি এসেছে বিদেশ থেকে। কে জয়রামন এ দিন জানান, ২০০৪ থেকে ২০০৫-এর জুনের মধ্যে ওই কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। ২০০৭ সালে প্রথম মামলাটি হয়। মহাকরণ সূত্রের খবর, মামলাটি আগে ছিল কলকাতা পুলিশের হাতে। তারা প্রথম মামলায় চার জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। তাতে নাম ছিল দেবাদিত্যবাবুর। দ্বিতীয় মামলায় অভিযুক্ত করা হয় জামিরকেও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.