বাঁধের মালিকানা নিয়ে বিবাদ
বরাবাজারের গ্রামে পুলিশ আটক, কাটা হল রাস্তাও
বিনা ‘পরোয়ানায়’ এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার অভিযোগ তুলে থানার আইসি-সহ ছয় পুলিশ কর্মীকে রাতভর আটক করে রাখলেন গ্রামবাসীদের একাংশ। পুলিশকে আটকাতে কেটে দেওয়া হল রাস্তাও। পর দিন সকালে অবশ্য বিরাট পুলিশ বাহিনী গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে আনে। বরাবাজার থানার ধারগ্রামে মঙ্গলবার রাতে এই ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার দুপুরে বলরামপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি সৃষ্টধর মাহাতো ওই গ্রামে গেলে গ্রামবাসীরা তাঁকেও বাধা দেন। সেই সময় পুলিশ বাসিন্দাদের উপরে লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সুনীলকুমার চৌধুরী বলেন, “পুলিশকর্মীদের আটক করে রাখার জন্য একটি মামলা করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাসিন্দারাও পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠি চালানোর অভিযোগ করেছেন।”
ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া ধারগ্রামে একটি বাঁধের মালিকানা নিয়ে প্রায় বারো বছর ধরে গ্রামের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ চলছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রাম ষোলো আনার দাবি ছিল, তারাই ওই বাঁধের মালিক। অন্য দিকে, বছর বারো আগে গ্রামের তিন বাসিন্দা দাবি করেন, বাঁধটির মালিকানা তাদের। তাঁদের প্রামাণ্য নথিও আছে। এই নিয়ে মামলা চলছে। গত শুক্রবার ষোলো আনা কমিটির সদস্যেরা ওই বাঁধে মাছ ধরেন।
ছবি: সমীর দত্ত
অন্য পক্ষ এ নিয়ে বরাবাজার থানায় অভিযোগ করেন। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে মঙ্গলবার রাত ১০টায় ওই গ্রামে গিয়ে তল্লাশি চালায়। দুবরাজ সিংহ লায়া নামের এক অভিযুক্তকে ধরে পুলিশ জিপে তুললে গ্রামবাসীদের একাংশ তাদের বাধা দেন। পুলিশের কাছে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে কি না, তা নিয়েও অনেকে প্রশ্নও তোলেন। অভিযোগ, তাঁদের ধাক্কা মেরে পুলিশকর্মীরা দুবরাজকে নিয়ে চলে যান। দুই পুলিশকর্মী তখন গ্রামের অন্যত্র তল্লাশিতে ব্যস্ত ছিলেন। তাঁদের আটকে রেখে বাসিন্দারা দুবরাজকে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
রাত প্রায় ২টো নাগাদ বরাবাজার থানার আইসি প্রমোদ সাউ জনা তিনেক পুলিশকর্মীকে নিয়ে ধারগ্রামে দুবরাজকে ফিরিয়ে দিতে আসেন। তখন বাসিন্দাদের একাংশ তাঁদেরও গ্রামের হরিমন্দিরে আটকে রাখেন। বাঁধের দাবিদার অন্য গোষ্ঠীর লোকেদের বাড়িতে হামলা চালানো হয় বলেও অভিযোগ। পুলিশকে গ্রামে ঢুকতে বাধা দেওয়ার জন্য রাস্তা কেটে দেওয়া হয়। রাতে আইসি-সহ পুলিশ কর্মীদের আটক করে রাখার খবর পাওয়ার পরেও ঝাড়খণ্ডের সীমানা লাগোয়া ওই গ্রামে তাঁদের উদ্ধার করতে পুলিশ বাহিনী পাঠানো হয়নি। রাতে নাশকতার আশঙ্কা থাকায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে। এ নিয়েও পুলিশের একাংশে ক্ষোভ রয়েছে।
এ দিন সকালে গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল পুলিশ বাহিনী গ্রাম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। গ্রামবাসীরা কাটা রাস্তা মেরামত করছিলেন। ষোলো আনা কমিটির পক্ষে ভৃগুপদ গোপ, দিব্যেশ্বর মাহাতোরা দাবি করেন, “ওই বাঁধ আমাদের। তাই সিজানো পরবের জন্য সকলেই মাছ ধরেছিলাম। পুলিশ বিনা পরোয়ানায় দুবরাজকে ধরায় প্রতিবাদ জানাতে তাঁদের বিক্ষোভ দেখানো হয়। আটক করে রাখা হয়নি। খারাপ ব্যবহারও করা হয়নি।”
তাঁদের বিরোধী পক্ষের বিভূতি মাহাতো বলেন, “মঙ্গলবার রাতে আমাদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। প্রাণের ভয়ে আমরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিলাম। শাবল দিয়ে দরজার পাল্লা ভেঙ্গে দিয়েছে। সারা রাত বাড়িতে পাথর ছোঁড়া হয়েছে। পুলিশকে রাতে জানিয়েছি।” বিভূতিবাবুরা তাঁদের দলীয় সমর্থক দাবি করে এ দিন দুপুরে ওই গ্রামে তৃণমূল নেতা সৃষ্টিধর মাহাতো ও অঘোর হেমব্রম গেলে ফের উত্তেজনা ছড়ায়। সৃষ্টিধরবাবুর অভিযোগ, “ষোলো আনা কমিটির নামে সিপিএম জোর করে ওদের বাঁধ বেদখল করেছে। আমরা গ্রামে ঢুকতে গেলে তাই সিপিএমের লোকজন আমাদের বাধা দেন।”
উল্টো দিকে, গ্রামবাসীদের একাংশ এবং সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণীন্দ্র গোপের অভিযোগ, “গ্রামবাসীরা বাধা দেওয়ায় অঘোর হেমব্রম গুলি চালান।” মণীন্দ্রবাবুর আরও দাবি, “পুকুরের মালিকানা ষোলো আনারই।” গুলি চালানোর অভিযোগ অবশ্য তাঁরা পুলিশের কাছে করেননি। যদিও অঘোরবাবু বলেছেন, “গুলি চালানোর অভিযোগ মিথ্যা।” গুলি চালানোর কথা তাঁরা জানা নেই বলে দাবি করেছেন পুলিশ সুপারও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.