|
|
|
|
প্রতিহিংসার অভিযোগেই তৃণমূলকে বিঁধলেন বুদ্ধদেব |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
‘প্রতিহিংসা-সর্বস্বতা’র অভিযোগেই বর্তমান সরকারকে ফের বিঁধলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলন উপলক্ষে বুধবার মেদিনীপুর শহরে প্রকাশ্য সমাবেশে দলের পলিটব্যুরোর সদস্য বুদ্ধদেববাবুর অভিযোগ, “একের পরে এক মিথ্যা মামলা হচ্ছে। আমাদের দলের কর্মী-সমর্থকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। আক্রমণ করে থামানো যাবে না বুঝেই আমাদের নেতা-কর্মীদের জেলে পাঠাচ্ছে ওরা (তৃণমূল)।” তবে জেলবন্দি সুশান্ত ঘোষ বা সমন পাওয়া লক্ষ্মণ শেঠের নাম নেননি তিনি।
বুদ্ধদেববাবুর দাবি, “কেশপুর-নন্দীগ্রাম-লালগড়ে যখন ওরা গণ্ডগোল করেছিল আমি এ ভাবে গ্রেফতার করিনি। বামফ্রন্ট সরকার বিরোধীদের বিরুদ্ধে এ কাজ (প্রতিহিংসা চরিতার্থ) করেনি। আমরা জানতাম,
রাজনীতিতে বুঝে নেব। শেষ কথা তো বলবেন মানুষই।”
বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র অবশ্য দাবি করেন, “সুশান্ত বিধায়ক। তাঁকে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। সরকার বার বার তাঁর জামিনের বিরোধিতা করছে। বামফ্রন্টের আমলে কি এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে? বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এখনও মামলা রয়েছে। উনি জামিন নেননি। আমরা কিন্তু ওঁকে ধরিনি।” তাঁর কটাক্ষ, “মুখে মা-মাটি-মানুষের কথা বলছেন, আর ওঁর পুলিশ সুশান্ত ঘোষের মায়ের সঙ্গে কী আচরণ করেছে, তা সকলে জানেন। প্রতিহিংসার রাজনীতি চলছে।” |
|
মেদিনীপুরে সিপিএমের প্রকাশ্য সমাবেশে বক্তা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বুধবার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল |
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’ নিয়েই তোপ দেগেছেন সরকারের বিরুদ্ধে। বিমানবাবু বলেন, “সুশান্ত ঘোষ-সহ আমাদের বহু নেতা-কর্মীকেই মিথ্যা মামলায় জেলে রেখেছে ওরা। মিথ্যা মামলা রুজু করার কারবার এখনও চলছে।” বিমানবাবু কারও নাম না করলেও তাঁর মন্তব্যে নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে লক্ষ্মণ শেঠদের বিরুদ্ধে সিআইডি-র চার্জশিট পেশের ঘটনার ‘ইঙ্গিত’ পেয়েছে রাজনৈতিক মহল।
পক্ষান্তরে মহাকরণে তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের প্রতিক্রিয়া, “বিমানবাবুরা বলছেন, সুশান্ত ঘোষ আর ওঁদের দলের ১০০ কর্মীকে নাকি মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে! আরে, ওখানে (মেদিনীপুরে) তো রোজ কঙ্কাল বেরোচ্ছে। কঙ্কাল ওঁরা পোঁতেননি, তো কে পুঁতল? মানুষ প্রশ্ন করছেন। নিখোঁজদের বাড়ির লোক বিচার চাইছেন। সরকার পরিষ্কার করে বলেছে, যারা খুন-খারাপি, হত্যালীলা চালাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে আইনের পথে যেতেই হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন বলেই তৃণমূল চুপ করে বসে রয়েছে। প্রতিহিংসার পথে হাঁটেনি।”
জঙ্গলমহলের জেলায় তৃণমূল-মাওবাদী ‘আঁতাঁত’ নিয়েও এ দিন ফের সরব হয়েছেন বুদ্ধদেববাবু। তাঁর কথায়, “তৃণমূলের হাত ধরেই মাওবাদীরা এখানে এসেছে। পিছনে তৃণমূল না থাকলে এখানে জনগণের কমিটিও তৈরি হত না। ওদের উদ্দেশ্য ছিল একটাই, সিপিএমকে ঠেকাতে হবে।”
পরক্ষণেই এ দিন উপস্থিত জনতার (পুলিশের হিসেবে হাজার পঁচিশ) দিকে ইঙ্গিত করে তাঁর দাবি, “পশ্চিম মেদিনীপুরে ওরা কিন্তু আমাদের শেষ করতে পারেনি। আজকের সমাবেশই তা প্রমাণ করছে। কোনও দিন পারবেও না।” আর সূর্যবাবুর কটাক্ষ, “এখন একটা কথা খুব চলছে, ‘কাজের বেলায় কাজি, কাজ ফুরোলে কিষেণজি।” ফিরহাদ হাকিমের জবাব, “মাওবাদী আর হার্মাদ ওঁরাই (সিপিএম) রেখেছিলেন। ওরা হল একই মুদ্রার এ পিঠ-ও পিঠ।” তাঁর সংযোজন, “আসলে জঙ্গলমহলে উন্নয়ন প্রক্রিয়া শুরু হতেই ওঁরা সেই কাজকে নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। মানুষকে বিভ্রান্ত করে লাভ হবে না। যদি স্বর্গরাজ্যই চলছিল, তা হলে পরিবর্তন হল কেন?” |
|
|
|
|
|