সম্প্রতি আনন্দবাজার পত্রিকা-সহ বিভিন্ন সংবাদপত্র থেকে আমরা এমন দুটি সংবাদ পেয়েছি, যেগুলি শুধু মাত্র যে নিন্দনীয় তা-ই নয়, পুলিশ প্রশাসনের কদর্য রূপটি নগ্ন করে দেয়।
প্রথম ঘটনাটি আন্দামানের। সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমের কাছে আসা একটি ভিডিয়ো-তে দেখা গেছে, আন্দামানের লুপ্তপ্রায় জারোয়া মহিলাদের নাচ দেখছেন কিছু পর্যটক। বিনিময়ে ওই অভুক্ত মহিলাদের দিকে বিস্কুট, কলা ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে। ইংল্যান্ডের সংবাদপত্র ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ প্রকাশিত একটি ভিডিয়ো ফুটেজ থেকেই এই বিতর্কের সূত্রপাত। বিভিন্ন সংবাদপত্রে এ-ও প্রকাশ যে, আন্দামানে নাকি ‘হিউম্যান সাফারি’ চলছে। কিছু পর্যটন সংস্থা স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে মোটা টাকা ঘুষ দিয়ে আন্দামানের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সেই সব নিষিদ্ধ এলাকা, যেখানে লুপ্তপ্রায় জাতি জারোয়াদের বাস, সেখানে দলে দলে প্রবেশ করছে।
আন্দামানের আদিমতম অধিবাসী নগ্ন-আদিম-হিংস্র জারোয়াদের সংখ্যা আজ কমতে কমতে ২৫০টি-তে এসে ঠেকেছে। জারোয়াদের যেন কেউ বিরক্ত করতে না পারে, সে জন্য ২০০২ সালে সুপ্রিম কোর্ট তাদের এলাকায় যাওয়া, জোর করে তাদের সঙ্গে মেলামেশার চেষ্টা বা তাদের বলপূর্বক জঙ্গল থেকে বাইরে বের করে আনা বেআইনি ঘোষণা করেছে। ২০০৮ সালের মার্চ মাসে আন্দামান প্রশাসনও সেখানকার পুলিশকে এ ব্যাপারে কড়া হতে বলে। সে জন্য আন্দামানের জঙ্গলে ঘুরতে থাকা পর্যটক দলগুলোর উপর বিশেষ নজরদারি, গ্রেট আন্দামান ট্রাঙ্ক রোডে বিশেষ চেকিং ব্যবস্থা রয়েছে।
তা সত্ত্বেও এক শ্রেণির অসাধু পুলিশের সহযোগিতায় পর্যটন সংস্থা ও পর্যটকরা এ ধরনের অমানবিক অন্যায় করে যাচ্ছে। অথচ আন্দামান নিকোবর প্রশাসন অভিযোগের তদন্তে না-এগিয়ে বলতে শুরু করল, ওই ভিডিয়ো অনেক পুরনো। নজরদারির দায়িত্বে থাকা পুলিশ দফতর ঘুষের অভিযোগের তদন্ত তো দূরের কথা, প্রথম থেকেই পাল্টা অভিযোগ করছে জারোয়াদের ভিডিয়ো প্রকাশ করে আইন ভেঙেছে সংবাদ মাধ্যম। আন্দামান-নিকোবর পুলিশ দোষী অফিসারদের বিরুদ্ধে তদন্তের পথে না-গিয়ে ভিডিয়ো তোলার ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এফ আই আর করল। দিনের পর দিন চলতে থাকা এই অমানবিক অপরাধটি যারা জনগণের সামনে ফাঁস করে দিয়েছে, সেই সাংবাদিকদের ধরতে আন্দামান পুলিশ জাতীয় প্রযুক্তি গবেষণা কেন্দ্রের কাছে দৌড়েছে। ভিডিয়ো ফুটেজের তদন্ত করে সাংবাদিককে ধরতে তারা মরিয়া।
দ্বিতীয় ঘটনাটি পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্তে। গরু পাচারকারী এক বাংলাদেশি নাগরিককে নগ্ন করে বেধড়ক পেটাল বি এস এফ জওয়ানরা। এমনিতেই পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় বি এস এফ-এর অত্যাচার, খুন, ধর্ষণ, কারণে অকারণে দুমদাম গুলিচালনা লেগেই আছে। গত দশ বছরে প্রায় ৭০০ জন বাংলাদেশি এবং ২০০ জন ভারতীয় বি এস এফ-এর গুলিতে প্রাণ দিয়েছে। মুশকিল হল, এ বারের বি এস এফ-এর এই ঘটনাটি যে ভাবেই হোক ভিডিয়ো-তে উঠে গেল এবং এই বর্বরতা ‘ব্রেকিং নিউজ’ হয়ে গেল প্রতিটি টিভি চ্যানেলে। কিন্তু এখানেও একই রকম দুর্ভাগ্যজনক ভাবে দেখা গেল, ওই দোষী জওয়ানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আগে বি এস এফ-এর ওপরতলার অফিসারেরা খুঁজতে শুরু করেছেন ভিডিয়োটি কে তুলেছে? এবং এটি সংবাদমাধ্যমের কাছে গেল কী ভাবে? যদিও শেষ পর্যন্ত ভারত এবং বাংলাদেশ দু’দেশেরই চাপে এই জওয়ানরা সাসপেন্ড হয়েছে। তবে সেনাবাহিনীর দোষ তো? সচরাচর দেখা যায়, সাসপেন্ডটাই সর্বোচ্চ শাস্তি।
ঘটনা দুটি অদ্ভুত ভাবে আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে, আমরা কোন স্বর্গদেশে বাস করছি। পুলিশ-সেনা যখন ঘুষ খেয়ে অন্যায় কাজ করছে, তখন সেই অন্যায়ের সাজা দেওয়ার বদলে জরুরি হয়ে পড়ছে পুলিশের অন্যায়কে চাপা দেওয়া। আর চাপা দেওয়ার কাজটি করছে কারা? নিশ্চয়ই তাদেরই ওপরওয়ালারা, এমনকী হয়তো কিছু কিছু সংবাদমাধ্যমও। একেই বোধহয় বলে রাষ্ট্রযন্ত্র। যে রাষ্ট্রযন্ত্রে জারোয়ারা তাদের নগ্নতা হিংস্রতা আদিমতার জীবন ছেড়ে সভ্যতার আলোয় মেশার রাস্তা খুঁজে পায় না। শেষ পর্যন্ত হয়ে যায় একটা পণ্য।
বিপ্লব দাস। স্কুলডাঙা, বাঁকুড়া
|
পরিবহণ মন্ত্রীর কয়েকটি কাজ |
রাজ্যের পরিবহণ দফতর মদন মিত্রের হাতে যাওয়ার পর থেকে তিনি দফতরকে চাঙ্গা করার জন্য কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। সত্যি কথা বলতে কী, কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার (সি এস টি সি) আর্থিক দুর্গতির জন্য সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মচারী থেকে নিচুতলার কর্মী পর্যন্ত সর্ব স্তরই দায়ী। সংস্থায় ভুয়ো কর্মী যেমন আছে, তেমনই অযোগ্য কর্মীর সংখ্যাও প্রচুর। তাঁদের মধ্যে প্রায় অনেকেই কাজ না-করেই মাস গেলে মাইনে নিয়ে যান। সরকারি বাসের অধিকাংশ ড্রাইভারই অশক্ত। তবুও তাঁদের দিয়ে বাস চালানো হয়। তাতে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটে।
সরকারি বাস ড্রাইভারদের সবচেয়ে বড় দোষ, তাঁরা বাস চালানোর সময় স্ট্যান্ডে অপেক্ষারত যাত্রীদের কথা চিন্তাই করেন না। কত তাড়াতাড়ি একটা ট্রিপ শেষ করা যায় সেই দিকেই তাঁদের লক্ষ্য থাকে। ফলে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাস চালিয়ে পেট্রল বা ডিজেলের দামই ওঠে না। আর, সরকারি বাস ডিপোগুলোর অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। অধিকাংশ ডিপোই অত্যন্ত নোংরা, তা ছাড়া ডিপোগুলির ভিতর বাসযাত্রীদের নিরাপত্তার বড়ই অভাব।
পরিবহণ সংস্থাগুলোতে যে ঘুঘুর বাসা জন্মেছে, আশা করা যায়, সেগুলি ভাঙা জরুরি।
অনিন্দ্য সেন। কলকাতা-২৬
|
স্কুল সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার দামামা বেজে উঠেছে। অনেক ছেলেমেয়ে এই পরীক্ষার দিকে তাকিয়ে থাকে, প্রচণ্ড পরিশ্রম করে তৈরি হয়। অন্য দিকে, যে-সব ছেলেমেয়ে বি এড করছে, তাদের ফাইনাল পরীক্ষা বোধহয় এপ্রিল/মে মাসে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষাটাও বোধহয় ওই একই সময়ে হবে। তাই উভয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন, একটু দেখবেন যে, বি এড পরীক্ষার ও শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার দিনগুলো যেন আলাদা থাকে। একই দিনে যেন না-পড়ে।
পরিতোষকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। চন্দননগর, হুগলি |