মাকুতে মাকড়সার জাল
ভয়েলের গ্রাসেই হারিয়েছে তাঁত-শাড়ি
দুই ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে দিল্লিতে বাড়ি ভাড়া করে থাকেন সুকুমার পাল। একই কথা বলেন অন্যরাও। বলছেন, “দীর্ঘদিন আন্দোলন করে তাঁত বোনার মূল্য বৃদ্ধি হয়েছিল বছরে ৩ টাকা। এখন একটি শাড়ি তৈরি করলে মজুরি মেলে ২৬ টাকা। এক জন সারা দিনে দুটি থেকে খুব বেশি হলে ৩’টি শাড়ি তৈরি করতে পারি। এখানে দিন মজুর খেটে তার তিন গুন আয় করছি। কেন তাঁত বুনব বলুন তো!” হক কথা।
কিন্তু কেন এই অবস্থা? মালিকরা জানান, সুতোর দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছি। পাশাপাশি যন্ত্রচালিত তাঁতের দাপট এর অন্যতম কারণ। ভজন দেবনাথ তাঁত ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, “গত বছর ৪০ ক্রাউন সুতো কিনেছি সাড়ে পাঁচশো টাকা দরে। এখন সেটা কিনছি এগারোশো টাকা দরে। এক বছরে দ্বিগুণ দাম বেড়েছে। অথচ শাড়ির দাম বাড়াতে পারছি না। গত বছর যে শাড়ি আড়াইশো টাকা জোড়া দরে বিক্রি করেছি এ বার সেটা বিক্রি হচ্ছে তিনশো টাকায়। লাভ তো নেই বরং লোকশান হচ্ছে। শ্রমিকদের মজুরি দিতে পারছি না।”
নিজস্ব চিত্র
সুতো ছাড়াও সব ধরনের শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি হয়েছে কাপড় প্রতি দশ টাকা। দিলীপ দেবনাথ বলেন, “শাড়ি বানাতে যে টাকা খরচ হচ্ছে বিক্রি করে অনেক সময় সেই টাকাই ঘরে তুলতে পারছি না। তার পরও আমাদের তাঁতের শাড়ির থেকেও কম দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ভয়েল সুতোর ছাপা শাড়ি। মানুষ কম দামে এখন সেই শাড়ি কিনছে।” এমন অবস্থা সে সব মহিলা এখন তাঁত চালান তাঁরাও কিন্তু নিজেরাই তাঁতের শাড়ির পরিবর্তে ছাপা শাড়িই পরছেন।
তাঁতিদের এই দুর্দিনের ফায়দা তুলতে ময়দানে নেমে পড়েছে এক শ্রেণির ফড়ে বা দালাল। তাঁতিরা কাপড় উৎপাদন করলেও তা বাজারে বিক্রি হচ্ছে না। বাজার না থাকায় তখন ওই সব ফড়েরা নিচ্ছে। নিজেরা সেই কাপড় মজুত রেখে পড়ে দাম পেলে আস্তে আস্তে বিক্রি করছে। আবার বড় বড় তাঁত মালিকরা সরকারের কাছ থেকে কাপড় সরবরাহের ‘অডার্র’ নিয়ে তাঁরা যে লভ্যাংশ পাচ্ছেন তার থেকে অনেক কম লাভে ছোট ও মাঝারি তাঁতিদের কাছ থেকে কাপড় বানিয়ে নিচ্ছেন।
সুভাষবাবু বলেন, “সরকার তাঁতের কাপড় কিনলেও তার সবটুকু গুড় খেয়ে নিচ্ছেন বড় তাঁত মালিকরা। নিচু স্তরে কিছুই পৌঁছচ্ছে না। একই তিমিরে থেকে যাচ্ছেন নবদ্বীপের তাঁতিরা।”
তবে নবদ্বীপের তাঁত শিল্পের সংকটের পিছনে অন্যতম কারণ হিসাবে কৃষকদের দুরবস্থার কথাও তুলে ধরেছেন তাঁতিরা। তাদের মতে নবদ্বীপের মোটা সুতোর কাপড়েরও মূল খরিদ্দার ছিল কৃষকরা। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে তারা ফসলের দাম পাচ্ছেন না। অর্থকষ্টে ভুগছেন। তাই একটু কম দাম দিয়ে তাঁতের কাপড় কেনার বিলাসিতা তারা দেখতে পারছেন না। ভজনবাবু বলেন, “কৃষকদের সঙ্গে তাঁতিদের একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে। মোটা সুতোর কাপড় কেনে মূলত কৃষকরাই। কিন্তু তাঁরা ফসলের দাম পাচ্ছেন না। কাপড় কিনবেন কী ভাবে।”
তাই সরকারি উদাসীনতার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকেও দায়ি করেছেন নবদ্বীপের তাঁতিরা। সুভাষবাবু বলেন, “সরকার থেকে কোনও রকম সাহায্য পাই না। শুধু রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের নিয়ে রাজনীতি করে। ভোটের সময় ফাঁকা প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু কোনও দিন পাশে দাঁড়ায় না।” নবদ্বীপের তৃণমূল কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের বিধায়ক পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা বলেন, “আগের সরকার তাঁত শিল্পের জন্য কিছু ভাবেনি। পুরোপুরি উদাসীন ছিল। তাঁত শিল্পের বেহাল অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। আমরা সরকারে আসার পর নতুন করে ভাবনা চিন্তা করতে শুরু করেছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.