‘ইঞ্জেকশন বিভ্রাট’, প্রসূতির মৃত্যুতে তোপ হাসপাতালকে
রাত পৌনে ১০টা নাগাদ ইঞ্জেকশন নেওয়ার আগে বছর বাইশের শামিমা আখতার মা’কে বলেছিলেন ‘ছেলের মুখটা অনেকটা আমার মতোই হয়েছে না!’ বহরমপুর হাসপাতালের শয্যায় মেয়ের কপালে হাত বুলিয়ে সোমবার রাতে মা নওসুরা বিবি বলেছিলেন “একদম, কেটে বসানো যেন!”
পরের পনেরো মিনিটের মধ্যে দ্রুত বদলায় ছবিটা। সিরিঞ্জে তিন রকমের ওষুধ মিশিয়ে ওই তরুণীকে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। মিনিট কয়েকের মধ্যেই ছটফট করতে থাকেন শামিমা। শুরু হয় খিঁচুনি। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোতে থাকে। ধীরে ধীরে নিথর হয়ে যান শামিমা। ঘড়িতে তখনও ১০টা বাজেনি।
ওই ইঞ্জেকশনই মেয়ের মৃত্যুর কারণ মঙ্গলবার এই অভিযোগে বহরমপুর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক কমলকৃষ্ণ মজুমদার, নার্স শিখা মণ্ডল এবং আয়া সাধনা দাসের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন নওসুরা। হাসপাতাল বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। তবে ওই ঘটনার পরেই ‘উধাও’ সাধনাদেবী। খোঁজ মেলেনি কর্তব্যরত নার্সেরও। তবে চিকিৎসক কমলকৃষ্ণবাবুর দাবি, সেফটাজাইডিম গ্রুপের একটি, অ্যামিকাসিন গ্রুপের একটি এবং তার সঙ্গে অক্সিটোসিন গ্রুপের একটি ওষুধ এক সঙ্গে মিশিয়ে ইঞ্জেকশন দেওয়ায় কোনও ‘ভুল’ নেই। ওই চিকিৎসক এ দিন ফোনে বলেন, “এর মধ্যে কোনও ভুল নেই। এ ভাবে প্রসূতিকে হামেশাই ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়।” ওই হাসপাতালের সুপার পার্থ দে-ও বলেন, “ইঞ্জেকশন দেওয়ায় কোনও গাফিলতি হয়নি।”
যদিও ওই চিকিৎসকদের সঙ্গে ভিন্নমত কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান (স্ত্রীরোগ বিভাগ) তরুণকুমার ঘোষ। তিনি বলেন, “সেফটাজাইডিম ও অ্যামিকাসিন অ্যান্টিবায়োটিক। তাদের সঙ্গে অক্সিটোসিন গ্রুপের ওষুধ মিশিয়ে কখনই ইঞ্জেকশন দেওয়া যায় না। এতে প্রসূতির শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে বাধ্য। মৃত্যুও হতে পারে।” স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “সেফটাজাইডিম প্রয়োগ করার আগে শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না তা দেখবেন না চিকিৎসক? অক্সিটোসিন আলাদা করে তো বটেই, ইন্ট্রাভেনাস ইঞ্জেকশন হিসেবেও দেওয়া যায় না। ওটা আই-ভি ড্রিপে স্যালাইনের সঙ্গে দিতে হয়।”
শামিমার শ্বশুর নজরুল ইসলামের ক্ষোভ, “বউমা মারা যেতেই হাসপাতাল তড়িঘড়ি ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি করে রাতেই আমাদের হাসপাতাল ছাড়ার জন্য চাপ দেয়।” মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৈয়দ শাহজাহান সিরাজ বলেন, “মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে মেডিক্যাল বোর্ড গড়া হয়েছে। আর ওঁদের হাসপাতাল ছাড়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল কি না, খতিয়ে দেখা হবে তা-ও।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.