|
|
|
|
‘লাইন’ নিয়ে প্রশ্ন, তবু জেলা সম্পাদক দীপকই |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
নিজে ঘোরতর সমালোচনার শিকার হয়েছেন জেলা সম্মেলনে। আবার খসড়া রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক প্রতিবেদনে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএম সম্পাদক দীপক সরকার নিজেও রাজ্য নেতৃত্বের কঠোর সমালোচনা করেছেন। যদিও দীপকবাবু নিজেই এখন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। ‘সমালোচিত’ এবং ‘সমালোচক’ সত্তরোর্ধ্ব সেই দীপকবাবুই টানা অষ্টম বারের জন্য জেলা সম্পাদক পুনর্নির্বাচিত হলেন।
আগে জেলা কমিটি ছিল ৮১ জনের। বয়সজনিত কারণে পুরনো কয়েক জনকে বাদ দিয়ে ৭০ জনের জেলা কমিটি গড়া হয়েছে মঙ্গলবার। বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত হয়ে বন্দি বা ফেরার সুশান্ত ঘোষ, তরুণ রায়, তপন ঘোষ, সুকুর আলি, অনুজ পাণ্ডে, শ্যাম পাণ্ডেরা প্রত্যাশিত ভাবেই জেলা কমিটিতে ফের স্থান পেয়েছেন। আজ, বুধবার সম্মেলন উপলক্ষে মেদিনীপুর কলেজ মাঠে সমাবেশ। সেই উপলক্ষেই রাজ্যে ‘পরিবর্তনে’র পরে এই প্রথম জঙ্গলমহলের জেলায় আসার কথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। |
|
অষ্টম বারের জন্য জেলা সম্পাদক নির্বাচনের পরে দীপক সরকার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল |
তবে সম্মেলনে দীপকবাবুর পেশ-করা প্রতিবেদনে বুদ্ধবাবুর বিগত সরকারের কড়া সমালোচনাই করা হয়েছে। আবার প্রতিনিধিদের কাছে সম্মেলনে প্রশ্নের মুখে পড়েছে জঙ্গলমহলে দীপকবাবুদের ‘প্রতিরোধ লাইন’। সম্মেলনে একাধিক প্রতিনিধির বক্তব্য, স্থানীয়দের সঙ্গে না-নিয়ে বাইরে থেকে ‘পেশাদার গুন্ডা’ এনে জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে ‘প্রতিরোধ অভিযান’ সাধারণ মানুষ ভাল চোখে দেখেননি। আর সে কারণেই জঙ্গলমহল-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো ‘লাল দুর্গে’ও বিধানসভা ভোটে বিপর্যয় হয়েছে। মাওবাদী প্রতিরোধের নামে যে ভাবে শিক্ষক ও সরকারি কর্মচারীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হয়েছে, তা-ও উচিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বেশ কয়েক জন প্রতিনিধি। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী হিসাবে জঙ্গলমহলের উন্নয়নে জেলার নেতা সুশান্তবাবুর ‘ব্যর্থতা’ নিয়েও সরব হয়েছেন কেউ কেউ।
আগাগোড়া সম্মেলনে উপস্থিত থেকে সেই ‘সমালোচনা’ শুনতে হয়েছে দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপক দাশগুপ্ত, বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রকেও। পশ্চিম মেদিনীপুরে দলের মধ্যে দীপকবাবুর মতো নেতাকে এর আগে যে এত ‘কড়া’ সমালোচনার মুখে পড়তে হয়নি, তা মানছেন জেলা কমিটির দীপক-ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতাও।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নন্দীগ্রামে শিল্পতালুক এবং সিঙ্গুরে ‘প্রায় তৈরি হয়ে-যাওয়া’ মোটরগাড়ি কারখানা বাতিল হওয়ায় রাজ্য সরকারের ‘ব্যর্থতা’ প্রকট হয়েছিল। জনমানসে সরকারের সক্ষমতা সম্পর্কেই ‘বিরূপ প্রতিক্রিয়া’ তৈরি হয়েছিল। কৃষকদের জমির প্রশ্নে বিরোধীরা ‘বিভ্রান্ত’ করেছে এবং বিরোধীদের ‘অপপ্রচারে’র জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার প্রশাসনিক ভাবে এবং দল রাজনৈতিক ভাবে ‘ব্যর্থ’ হয়েছে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে। মাওবাদী দমনে রাজ্য পুলিশের ‘প্রাথমিক ব্যর্থতা’ও সরকার সম্পর্কে মানুষের মধ্যে ‘বিরূপ মনোভাব’ তৈরি করেছিল বলে মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তৃণমূলের মদতেই যে মাওবাদীদদের বাড়বাড়ন্ত, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে তাদের ‘দুর্বল’ হয়ে পড়াই তার প্রমাণ বলেও দাবি করা হয়েছে। তৃণমূলের প্রতি মোহভঙ্গের ‘আনুপাতিক হারে’ই মানুষের মনোযোগ ফের তাঁদের দিকে ফিরবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সিপিএমের জেলা নেতৃত্ব।
পাশাপাশি, প্রতিনিধিদের একাংশের অভিযোগ, রাজ্যে পালাবদলের পরে নিচু তলার কর্মী-সমর্থকেরা আক্রান্ত হলেও নেতৃত্ব সে ভাবে ‘আক্রান্ত’দের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। কেশপুর জোনাল কমিটির এক সদস্যের প্রশ্ন, জোনাল অফিস জামশেদ আলি ভবনে ঢুকে ভাঙচুর চালাল এক দল তৃণমূল নেতা-কর্মী। উল্টে গ্রেফতার হলেন সিপিএম কর্মীরাই। কেশপুরের মতো এলাকায় এমন ঘটনার পরেও রাজ্য বা জেলা থেকে কোনও প্রতিনিধিদল এলেন না কেন? নেতৃত্বের ‘দিশাহীনতা’য় তৃণমূল আরও উৎসাহিত হয়েছে, দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উপরে বিনা বাধায় হামলা চালাতে পেরেছে বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক প্রতিনিধি। সুশান্তবাবুর মতো নেতা জেলবন্দি, কৃষক সভার রাজ্য সম্পাদক তরুণবাবুর মতো নেতা মামলায় জড়িয়ে ‘ফেরার’। অথচ দলীয় নেতৃত্ব তৃণমূল সরকারের ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’র বিরুদ্ধে প্রচার তীব্র করতে পারেননি বলেও প্রতিনিধিদের একাংশ অভিযোগ করেছেন। জেলা সম্মেলন চলাকালীন সোম ও মঙ্গলবার দিনভর সাদা পোশাকে সিআইডি-র লোকজন সম্মেলনস্থলের আশপাশে হাজির থেকে ‘ফেরার’ নেতাদের কেউ সম্মেলনে আসছেন কি নাসে নিয়ে নজরদারি চালান বলেও প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেন। |
|
|
|
|
|