বঙ্গোপসাগরে রবিবার দিনভর তল্লাশিতেও খোঁজ মিলল না দুষ্কৃতীদের খপ্পরে পড়া কাকদ্বীপের ‘এফ বি তারা মা’ ট্রলারের। ওই ট্রলারে থাকা ১১ জন মৎস্যজীবীর পরিবারের লোকজন অবিলম্বে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের দাবি তুলেছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের অনুমান, মৎস্যজীবী-সহ ট্রলারটি নিয়ে দুষ্কৃতীরা বাংলাদেশে ঢুকে গিয়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, “রাজ্য সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুরো ঘটনা জানানো হয়েছে। ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ করা হয়েছে।”
গত শুক্রবার দুপুরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী সমুদ্রের ধুবলার চরের কাছে দুষ্কৃতীদের কবলে পড়েন কাকদ্বীপের মৎস্যজীবীরা। দুষ্কৃতীদের গুলিতে মারা যান ৩ মৎস্যজীবী। জখম হন ৭ জন। ১২ জন মৎস্যজীবী-সহ ‘এফ বি তারা মা’ নামে ট্রলারটি দুষ্কৃতীরা নিয়ে যায় বলে সমুদ্র থেকে ফিরে কাকদ্বীপের মৎস্যজীবীরা পুলিশকে জানান। নিখোঁজ ট্রলারটিতে অক্ষয়নগরের ৪ জন এবং ৮ নম্বর কালীনগর এলাকার ৭ জন আছেন। |
রবিবার সেই ট্রলারের খোঁজেই ধুবলার চর, কেঁদোদ্বীপ এলাকায় তল্লাশি চালায় জেলা পুলিশ এবং উপকূল রক্ষী বাহিনী। অবশ্য ওই ট্রলারে থাকা কাকদ্বীপের অক্ষয়নগরের বাসিন্দা অমলেন্দু দাস শুক্রবার রাতে ফিরেছেন। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীরা যখন ট্রলার নিয়ে যাচ্ছে, তখন এক ফাঁকে তিনি সমুদ্রে ঝাঁপ মারেন। অন্য ট্রলার তাঁকে উদ্ধার করে।
এ দিন দুপুরে নিহত তিন মৎস্যজীবী এবং নিখোঁজদের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে কাকদ্বীপে যান মৎস্যমন্ত্রী আবু হেনা। তাঁর কাছে সাহায্যের আবেদন জানান ওই সব পরিবারের সদস্যেরা। নিখোঁজ মৎস্যজীবী নারায়ণ দাসের স্ত্রী চন্দনা মন্ত্রীকে বলেন, “আমার স্বামীর মতো যাঁরা মাছ ধরতে সমুদ্রে যান, তাঁদের নিরাপত্তার ব্যাপারটা আপনারা দেখুন।” মন্ত্রী বলেন, “জলদস্যুদের হাতে মৎস্যজীবীরা আক্রান্ত। এ বিষয়ে সরকারি পদক্ষেপ করা হচ্ছে। কেঁদোদ্বীপের কাছে বিএসএফ ক্যাম্পের জন্য কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।” তবে, ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সাহায্যের বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে তিনি জানান।
এক মাস ধরে সুন্দরবন-সহ বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকায় জলদস্যুদের উপদ্রব ঠেকাতে জোরদার অভিযান চালাচ্ছে সে দেশের উপকূল পুলিশ, যার জেরে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে জলদস্যুরা। তাই বেপরোয়া হয়ে ভারতীয় সীমানায় ঢুকে তারা মৎস্যজীবীদের উপরে হামলা করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ দিকে, মৎস্যজীবীরা যে পাঁচ জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন, শনিবার রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) কঙ্করপ্রসাদ বারুই জানান, পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া ভারতীয় সীমানায় ঢুকে পড়ার অভিযোগে ওই পাঁচ জনকে ধরা হয়েছে। তারা বাংলাদেশের যশোহর, খুলনা প্রভৃতি এলাকার বাসিন্দা। রবিবার ধৃতদের কাকদ্বীপ আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাদের ১৪ দিন জেল-হাজতের নির্দেশ দেন। |