মায়া সভ্যতা না জাপানের দেবী, বাজিমাত করল কে, সেই প্রশ্নেই মশগুল হয়ে রইল কৃষ্ণনগরের ছোটরা। এই শহরের বড়দের পুজো জগদ্ধাত্রী। তার আগে দুর্গা বা কালী পুজোর রমরমা সে ভাবে এই শহরে নেই। জগদ্ধাত্রীর পরে তাই সরস্বতী পুজোয় শহর আবার উৎসবে ফিরল ছোটদের হাত ধরে। শহরের প্রায় সব মোড়েই ছোট ছোট সুন্দর মণ্ডপ। তাতে জগদ্ধাত্রীর জাঁকজমক না থাক, রয়েছে আন্তরিকতার স্পর্শ। শুধু তাই নয়, এ বার কৃষ্ণনগরের এই সরস্বতী পুজোয় উঠে এসেছে থিমের লড়াইও। কোথাও জাপানের ছোঁয়া, কোথাও সম্পূর্ণ অন্য প্রান্তের মায়া সভ্যতা। এই শহর বিভিন্ন সংস্কৃতির মিলনক্ষেত্রই যেন হয়ে উঠেছিল বাগ্দেবীর আরাধনার দিন।
তবে বড়রা শুধুই দর্শক হয়ে বসেছিলেন, এমনটা নয়। স্কুলের পুজোর ভাবাবেগকে কেউই সহজে কাটিয়ে উঠতে পারেন না। তাই ছোটরা যখন পুজোর উদ্যোগ শুরু করে, তখন শেষ পর্যায়ে এসে প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরাও হাত লাগান। পরপর দু’দিন এমনিতেই ছুটি। তাতে এই মজার রেষারেষিটা উপভোগও করেছেন বহু মানুষ। শুক্রবার রাত থেকে সেই আনন্দের রেশ শুরু হয়ে চলেছে রবিবার রাত পর্যন্ত।
শহরের বাসিন্দাদের অবশ্য বক্তব্য, কয়েক বছর আগে থেকেই বিভিন্ন স্কুলের মধ্যে এই থিমের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। শুধু নিত্যনতুন থিমের ভাবনাই নয়। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিল্পের উৎকর্ষও। আর সেটাই এই বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতার সব থেকে বড় পাওনা বলে মনে করছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা।
বিষয়বস্তুর অভিনবত্বে আবার সকলকে চমকে দিয়েছে কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল। জাপানের এক দেবীর আদলে সরস্বতী প্রতিমা তৈরি করেছেন তাঁরা। এই দেবীর ভাবনার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে ভারতীয় সংস্কৃতিরও। কোথাও কোথাও এই দেবীর চারটি হাত, কখনও আটটি হাত। দেবীকে কখনও প্রকাণ্ড সাপ বা ড্রাগনের উপরে বসে থাকতে দেখা যায়। স্কুলের শিক্ষক স্বরজিৎ মণ্ডল বলেন, “জাপানের কিছু এলাকায় সরস্বতী পূজিত হন। আমরা এ বার সেই সরস্বতীকেই তুলে ধরেছি।” কৃষ্ণনগর এ ভি স্কুল সেখানে মায়া সভ্যতার নানা দিক তুলে ধরেছে। কালীনগর স্কুলে থিম বিবেকানন্দ। ঘূর্ণির স্কুলের থিমও বিবেকানন্দ। সেখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিবেকানন্দ রক। সেই সঙ্গে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের বিবর্তনের রূপটিও ফুটে উঠেছে। আর শহরের অন্য প্রান্তের শক্তিনগর হাইস্কুলের বিষয় ভারতবর্ষ। কৃষ্ণনগর হাই স্কুলের ছাত্রেরা তৈরি করেছে সুবৃহৎ পর্বত। আর তার মাঝখানে দেবীর অবস্থান। স্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল ভট্টাচার্য বলেন, “সব কিছুরই একটা ভাল দিক থাকে। এই স্কুলে স্কুলে থিমের প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ায় ছাত্রেরা পড়াশোনার পাশাপাশি সৃজনশীল দিকটিরও চর্চা করতে পারে। তারা নিজেরাই সাজিয়ে তুলছে মণ্ডপ। ভাবছে থিম এবং সবাই মিলে তা কার্যকর করছে।” |