|
|
|
|
সম্পাদকীয় ২... |
প্রথম কর্তব্য |
নন্দরাম বাজারের অবৈধ উপরিতলাগুলিকে বৈধ করিবার উদ্যোগ লইয়াছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। ইহা যে আপত্তিজনক, তাহা বলিবার অপেক্ষা রাখে না। নাগরিক পুরসভার বিধি মানিবেন, ইহাই দস্তুর। আইনভঙ্গ করিয়া যে নির্মাণ হইবে, তাহা কোনও এক উপায়ে, কোনও না কোনও সময়ে বৈধ করা যাইতে পারে, এই বার্তা যদি স্বয়ং মহানাগরিক প্রেরণ করেন, তাহা অত্যন্ত বিপজ্জনক। কিন্তু আইন লঙ্ঘন হইবার বিষয়টি এ ক্ষেত্রে আপত্তির একটি দিক মাত্র। প্রধান সমস্যা ইহাই যে, অগ্নিনিরাপত্তার নিয়মগুলি না মানিয়াও বহুতল বাণিজ্যিক ভবন, শহরের মধ্যবর্তী বস্তি কিংবা বিদ্যালয়-হাসপাতালগুলি কাজ করিতেছে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলিয়াছেন যে, রাজ্য সরকারের অগ্নি নিরাপত্তামূলক নিয়মগুলি মানা আবশ্যক, তৎসহ কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়মগুলিও স্বেচ্ছায়, নিজ উদ্যোগে মানিতে হইবে। অর্থাৎ এ রাজ্যের যে কোনও পরিকাঠামো যাহাতে নিজে অগ্নির গ্রাসে পড়িতে না পারে এবং প্রতিবেশীদের বিপদে না ফেলিতে পারে, তাহা নিশ্চিত করিতে যথাসম্ভব সতর্কতা গ্রহণ করিতে হইবে। অথচ শহরে একের পর এক অগ্নিকাণ্ড প্রমাণ করিতেছে যে, বাণিজ্যিক বা গৃহস্থালির ভবনগুলিতে দমকলের যান পৌঁছাইবার রাস্তা নাই, জল পাইবার ব্যবস্থা নাই, অগ্নি ছড়াইবার সম্ভাবনা প্রতিরোধের উপায়ও নাই। এই অবস্থা নিবারণ করিতে সরকার যে কঠোর এবং তৎপর হইয়াছে, তাহার প্রমাণ মেলে নাই। এই পরিস্থিতিতে নন্দরাম বাজারের অবৈধ অংশকে বৈধ করিবার প্রস্তাব তাই সরকারের অভিপ্রায় বিষয়ে অধিকতর সংশয় তৈরি করিয়াছে।
অগ্নি-নিবারণ বিষয়ে ঔদাসীন্য কত দূর ক্ষতিকর হইতে পারে তাহার প্রমাণ গত কয়েক বৎসরে বার বার মিলিয়াছে। স্টিফেন কোর্ট, নন্দরাম বাজার কিংবা আমরি হাসপাতালের স্মৃতি দগ্ধ ক্ষতের ন্যায় পীড়া দিতেছে, তৎসহ নিয়মিত একটি না একটি বস্তি পুড়িয়া বাসিন্দারা গৃহহারা হইতেছেন, সর্বস্ব হারাইতেছেন। সম্প্রতি মধ্য কলকাতার একটি পেট্রল পাম্পের আগুন হইতে ওই এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ছড়াইবার সম্ভাবনা দেখা গিয়াছিল। ইহার পরেও কেন সরকারের ঢিলা মানসিকতা দেখা যাইতেছে? ইহা ঠিক যে, সরকার নিয়ম মানিবার বিষয়ে কড়াকড়ি করিলে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ তাহার বিরোধিতা করিতে থাকেন। তাঁহারা অনতিবিলম্বে যথাসম্ভব লাভের আশাতেই কাজ করিতে অভ্যস্ত, বৃহত্তর স্বার্থের চিন্তা কিংবা অনাগত বিপদের আশঙ্কা তাঁহাদের বিচলিত করিতে পারে না। কিন্তু ইহাও ঠিক যে, কেবল মাত্র কিছু মানুষের প্রতিরোধের দোহাই দিয়া সরকার তাহার কর্তব্য এড়াইতে পারে না। ইহা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে আমাদের পাড়াগুলিতে স্থানীয় মানুষদের উদ্যোগ একান্তই উৎসব-আমোদের ব্যবস্থাপনায় নিয়োগ করা হয়। এলাকার নিরাপত্তার বিষয়ে অধিকতর সজাগ হইলে অবৈধ জনবসতি কিংবা বহুতল নির্মিত হইতে পারিত না। সেই জন-উদ্যোগ না থাকায় সরকারের উপর নিরাপত্তার অধিকতর দায়ভার বর্তাইয়াছে। এই দায়িত্ব লঘু করিয়া দেখা চলিবে না। শহরের ইমারতে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ ও নির্বাপণের ব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিত, সেই বিষয়ে একটি সর্বভারতীয় বিধি রহিয়াছে। রাজ্য সরকার তথা কলিকাতা পুরসভা সর্বাগ্রে সেই বিধি গ্রহণ এবং বলবৎ করুক। |
|
|
|
|
|