যত যন্ত্রণা বইমেলায় পৌঁছতে।
সায়েন্স সিটি স্টপে নেমে বইমেলায় পৌঁছতে শনিবার বিকেলে পাক্কা ২৫ মিনিট লেগেছে। রবিবার বেলা যত গড়িয়েছে, সেই সময়টা বেড়ে ৩৫ থেকে ৪০ মিনিটে ঠেকেছে। শনিবার ভাল ভিড় ছিল। কিন্তু রবিবার বিকেলের মধ্যে মেলায় দেড় লক্ষ মানুষ ঢুকেছেন। একটা চার ফুট চওড়া ফুটপাথ দিয়ে সেই ভিড় মেলার দিকে যাচ্ছে। একডালিয়া কিংবা বোসপুকুরের ঠাকুর দেখার ভিড়ও এর চেয়ে কম। পুজোর ভিড়ে তেমন তাড়া থাকে না। কিন্তু মেলায় তো মাপা সময়। পছন্দের স্টলে ঢুকতে হবে লাইন দিয়ে। খাবারের জায়গাতেও লাইন।
অতএব তাড়াহুড়ো। সঙ্গে পুলিশের ‘ধীরে চলো’। এই দুইয়ের ঠেলাঠেলিতে চলার গতি হচ্ছে মন্থর। তারই মধ্যে তিন বার রাস্তা পেরোনো। ট্রাফিক পুলিশের দড়ির অনুশাসন মেনে মাঝে মাঝেই থেমে যাওয়া। এত সব করে মেলায় পৌঁছনো রীতিমতো যন্ত্রণার। গত তিন বছরে মিলন মেলার ভিতরে পরিকাঠামো গড়া হলেও বাইরে কিছুই হয়নি। পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের যুগ্ম সম্পাদক সুধাংশু দে জানান, তাঁদের এ বিষয়ে কিছু করার নেই। তিনি বলেন, “আগের সরকার সায়েন্স সিটির দিকে আন্ডারপাস করবে বলেও করেনি। এখন নতুন সরকারের উপরে ভরসা।” এ দিন বইমেলায় যান রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। |
মেলার বাইরের পরিকাঠামো তৈরি করে পুরসভা ও পুলিশ। সুধাংশুবাবু জানান, মেলার আগে তাঁরা তাঁদের এই সব অসুবিধের কথা জানিয়েছিলেন। অল্প সময়ে এত মানুষকে সুষ্ঠু ভাবে মেলায় পৌঁছে দিতে পুলিশও কিন্তু যথেষ্ট তৎপর। তা হলে হচ্ছে না কেন? মেলায় কর্মরত কলকাতা পুলিশের এক অফিসার বলেন, ‘‘যতটুকু জায়গা পাওয়া গিয়েছে, ব্যবস্থা তো তার মধ্যেই করতে হবে। রাস্তা খারাপ, ফুটপাথ ভাঙা, ফ্লাইওভারের কাজ হচ্ছে এর মধ্যে যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছি।’’
অসুবিধা রয়েছে মেলার উত্তর-পূর্ব প্রান্তেও। বাইপাসের পশ্চিম দিকে মাটি সমান করে পথ করেছে পুরসভা। কিন্তু পথে উঁচিয়ে রয়েছে নির্মীয়মাণ উড়ালপুলের লোহালক্কড়, বিম, রড। তাতে পথ হয়ে উঠেছে বিপজ্জনক। বিষয়টা পুরসভাকে জানানো হয়েছে বলে জানান সুধাংশুবাবু। মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বললেন, ‘‘দেখছি যত দ্রুত সম্ভব ওখান থেকে লোহালক্কড় সরিয়ে ফেলা যায়।’’
এই যন্ত্রণা ঠেলে বইমেলায় ঢোকার পরে অবশ্য ভিড় ছাড়া তেমন অসুবিধা নেই। এরই মধ্যে ‘কলকাতায় ঢুকতে নিষেধ’ তসলিমা নাসরিন হাজির বইমেলায়। মেলায় বেরোলো তাঁর আত্মজীবনীর সপ্তম খণ্ড ‘নির্বাসন’। ২০০৭ সালে কলকাতা থেকে ‘নির্বাসিত’ হওয়ার পর থেকে অদ্যবধি তাঁর নির্বাসন জীবনের কাহিনি। বইমেলায় বেরিয়েছে নাগরিক মঞ্চ গ্রন্থমালায় শুভেন্দু দাশগুপ্তের ‘প্রান্তপারের কথা’, অনিন্দ্য ভুক্তের ‘খাদ্য ও ক্ষুধা’, সুব্রত কুণ্ডুর ‘তথ্যের অধিকার’ ও জাহিরুল হাসানের ‘উর্দু ভাষা ও সাহিত্য’। বেরিয়েছে সংহিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাব্যগ্রন্থ ‘প্রশ্নচিহ্নের মতো বাঁকানো মূর্তিটি’। জঙ্গলমহলের অগ্নিগর্ভ সময়ে কলকাতার যে সাংবাদিকেরা সেখানে গিয়েছিলেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা নিয়ে বেরোলো চিত্রদীপ চক্রবর্তী সম্পাদিত ‘ব্রেকিং নিউজ জঙ্গলমহল’। গিল্ড এ দিন সুকুমার রায়ের ‘আবোল তাবোল’ বিনামূল্যে বিলি করেছে শিশুদের। |