হিলারি-প্রণব কথা
খুচরোয় আশ্বাস, আপত্তি পরমাণু বিল সংশোধনে
খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির জন্য দরজা খুলতে মনমোহন সিংহ সরকার যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, সেটা ওবামা প্রশাসন এবং মার্কিন শিল্পমহলকে আজ জানিয়ে দিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি স্পষ্ট করে দিলেন, পরমাণু দায়বদ্ধতা বিলে মার্কিন দাবি মেনে আবার পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। ঝটিতি শিকাগো সফরে এসেছেন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। সেই সফরে বিবেকানন্দের স্মৃতিকে জাগরুক করার পাশাপাশি তিনি কলা বেচার কাজটাও করতে শুরু করেছেন। অর্থাৎ, আমেরিকার সঙ্গে থমকে যাওয়া সম্পর্কে গতি আনতে দৌত্যও চালিয়েছেন পুরোদমে। আজ তিনি কথা বলেছেন মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টনের সঙ্গে। দেখা করেছেন বিদেশ দফতরের অন্য কর্তাদের সঙ্গে। পরে মার্কিন শিল্পমহলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেছেন, “বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসার দরজাটা আমরা এখনও পুরোপুরি খুলতে পারিনি। তবে এই ব্যাপারে আমরা ঐকমত্য গড়ার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি।”
কূটনৈতিক মহল বলছে, প্রণববাবুর এই বৈঠক ও আলোচনার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে আমেরিকার সঙ্গে কৌশলগত দৌত্য চালানো। বস্তুত, ওয়াশিংটনের কর্তারা গত কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিক ভাবে অনুযোগ করে আসছেন, দু’দেশের মধ্যে কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক উভয় সম্পর্কই কিছুটা থমকে গিয়েছে। খুচরো ব্যবসায় ভারতের বিরাট বাজার ধরতে যারপরনাই মরিয়া মনোভাব দেখাচ্ছে মার্কিন শিল্প সংস্থাগুলি। তাদের হয়ে ভারতের রাজনৈতিক স্তরে প্রভাব তৈরি করতে সেনেটের সদস্য এবং হোয়াইট হাউসের কর্তারাও সমান ভাবে তৎপর। মনমোহন সরকারও চাইছে, এই ক্ষেত্রে লগ্নি আসুক দেশে। সম্প্রতি দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী আনন্দ শর্মা ওয়ালমার্ট-সহ বহুজাতিকগুলিকে এই নিয়ে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন। জানিয়েছেন, পুরো প্রক্রিয়াটি আপাতত থমকে রয়েছে। প্রণববাবুও এ দিন একই কথা বলে মার্কিন প্রশাসনিক কর্তা ও শিল্পমহলকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন দেশের রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার বিষয়টি। সেই বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ যে ঐকান্তিক ভাবে এই নিয়ে সমাধান সূত্রের খোঁজ করছেন, জানালেন সে কথাও।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, আজ ভোরে প্রণববাবু শিকাগোয় পা রাখার পরেই হিলারি ক্লিন্টনের সঙ্গে ফোনে কথা হয় তাঁর। পরে মার্কিন বিদেশ দফতরের সহসচিব রবার্ট ব্লেক এসে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁদের সকলেরই প্রশ্ন, কবে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের বিষয়টি ছাড়পত্র পাবে? প্রণববাবু তাঁদের ধৈর্য ধরতে বলেছেন। জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে ইউপিএ-র শরিক দলগুলির সঙ্গে কংগ্রেস আলোচনা চালাচ্ছে। তবে এই নিয়ে যে সরকারের প্রধান শরিক দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তি রয়েছে, সে কথা তুলে ধরে প্রণববাবু হিলারিকে বলেছেন, জোট রাজনীতিতে অনেক সময়ই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান দলের হাত-পা বাঁধা থাকে। ফলে আলোচনা চালানোর সময়টা দিতেই হবে। পরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানান, মন্ত্রিসভা এই নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই পারত। কিন্তু সংসদে ঐকমত্যের ভিত্তিতেই এগোতে চাইছে সরকার।
প্রণববাবুর সঙ্গে হিলারির আলোচনায় পরমাণু দায়বদ্ধতা বিলটির প্রসঙ্গও ওঠে। প্রণববাবু তাঁকে বলেন, অনেক সমস্যা পার করে আমেরিকার সঙ্গে অসামরিক পরমাণু চুক্তি করা সম্ভব হয়েছে। তার পরেও পরমাণু সরবরাহকারী সংস্থার দায়বদ্ধতার বিষয়টি নিয়ে প্রধান বিরোধ দল বিজেপি-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মোকাবিলা করতে হয়েছে তাঁর সরকারকে। বিরোধিতা সত্ত্বেও যথেষ্ট দৃঢ়তার সঙ্গে এই বিল সংসদে পাশ করানো হয়েছে। ফলে এখন মার্কিন পরমাণু চুল্লি সরবরাহকারী সংস্থাগুলির দাবি মেনে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে পরমাণু চুল্লির সরবরাহকারীর ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত বিষয়টির জন্য আবার সংবিধান সংশোধন করা সম্ভব নয়। ভারতে বহুদলীয় গণতন্ত্রের ঐতিহ্যশালী দিকটিও এই প্রসঙ্গে মনে করে দেখতে তিনি অনুরোধ করেছেন ওবামা প্রশাসনকে।
আমেরিকার সঙ্গে কৌশলগত দৌত্যের পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী হিসাবে তাঁর অন্য কাজটিও আজ সেরেছেন প্রণববাবু। ৩২টি ফরচুন-৫০০ সংস্থার সদর দফতর এই শিকাগোয়। আজ তাদের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে ভারতে আরও বেশি করে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ইউরো অর্থনীতির মন্দার দিকটি মার্কিন বাণিজ্যকর্তাদের সামনে তুলে ধরে প্রণববাবু বলেন, “ভারতের সামনেও কাজটা সহজ নয়। ভারতীয় অর্থনীতির উপরেও চাপ আসছে। ২০১১-১২ সালের প্রথমার্ধে অর্থনীতির বৃদ্ধির হার ৭.৫ শতাংশে নেমে গিয়েছে, যা গত বছর ছিল ৮.৫ শতাংশ।” একই সঙ্গে আশার কথা শুনিয়ে ভারতের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্ব অর্থনীতির এই প্রবল মন্দার ধাক্কা কিন্তু ভারত অন্য বহু দেশের তুলনায় অনেকটাই সামলে নিতে পেরেছে। এ ব্যাপারে নীতি নির্ধারণও করা হয়েছে। তাঁর কথায়, “ভারতের ঘরোয়া উৎপাদনের পরিমাণ ভাল। তাই আন্তর্জাতিক বাজারের টালমাটাল হাল কিছুটা হলেও সামলানো গিয়েছে।” এই পরিস্থিতিতে মার্কিন শিল্পকর্তাদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে প্রণববাবুর বক্তব্য, “ভারতে এই সময় যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা অবহেলা করবেন না। তাকে কাজে লাগিয়ে সামগ্রিক ভাবে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে চলুন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.