চরম হতাশাজনক।
ব্যাকফুট ডিফেন্স কী বস্তু জানে না।
জাতীয় ক্রিকেটকে এরা অসীম লজ্জাজনক পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে।
প্যাভিলিয়নের দিকে অপসৃয়মাণ ব্যাটসম্যানদের সম্পর্কে বলছিলেন ভাষ্যকাররা। অবশ্যই অ্যাডিলেড ওভালে শেষ চার ভারতীয় উইকেটের পতনে।
অবশ্যই না। বাস্তবে বলা হচ্ছিল বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে পয়লা নম্বর দলের সম্পর্কে। বলছিলেন উত্তেজিত ইয়ান বোথাম এবং আরও এক জনপ্রিয় ইংরেজ ভাষ্যকার। অথচ গত গ্রীষ্মে অ্যান্ড্রু স্ট্রসের দলকে এই জুটিই কি না প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ভরিয়ে দিয়েছেন প্রশংসায়। সরস্বতী পুজোর অঞ্জলি শুরুর আগেই অ্যাডিলেড ওভালে ভারতের ২৯৮ রানে হার। আর তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভোগ খাওয়ার কাছাকাছি সময়ে আবু ধাবির উইকেটে স্ট্রসের ইংল্যান্ডের বিপর্যয় শুরু। শেষ পর্যন্ত ইনিংস সমাপ্ত মাত্র ৭২ রানে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মিডিয়ায় অতিকলঙ্কিত ভারত তবু করেছে ২০১। ইংল্যান্ড মাত্র ৭২।
তা হলে বিপর্যয় কোনটা? মনে রাখতে হবে ইংল্যান্ড শনিবারই সিরিজে প্রথম মুখ থুবড়ে পড়ল না। বরং উপর্যুপরি দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ হেরে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ছ’নম্বর পাকিস্তানের কাছে সিরিজ খোয়াল। মনে রাখতে হবে ইংল্যান্ডে মিডল অর্ডারে চল্লিশ ছুঁইছুঁই তিন প্রবীণ নেই যাঁদের দিকে আঙুল তুলে বলা যাবে, এই তো খলনায়ক পাওয়া গিয়েছে। এদের সরাও, তা হলেই ‘খুল যা সিমসিম’। |
কাহিনির সারমর্ম খুব সহজ। বিশ্বক্রিকেট এমন ঘোলাটে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যেখানে সবাই যে যার নিজের পাড়ায় মস্তান। বেপাড়ায় গিয়ে মস্তানি করে আসার যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের স্কিল, তা বিলুপ্ত প্রজাতির ডোডো পাখির মতোই অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। তাই অ্যাডিলেডে এ দিন বীরেন্দ্র সহবাগের সাংবাদিক সম্মেলনের ব্যাখ্যা করাই যায়। “মনে রাখবেন আমাদের দেশে ওদের ২-০ হারিয়েছিলাম,” সহবাগের মন্তব্যে অনেকেই বিস্মিত। কিন্তু বিস্মিত হওয়ার কারণ নেই। গৌতম গম্ভীরও সে দিন বলেছেন, “আসুক না ওরা এক বার আমাদের দেশে। দেখে নেব।” সহবাগের ওপেনিং পার্টনারের বক্তব্যও তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ছে। কিন্তু তার মধ্যেও যে কোনও ভুল নেই। সহবাগ বরং বলতে পারতেন, যে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারত ০-৪ বিধ্বস্ত হল তার চেয়ে অনেক জবরদস্ত আউটফিটকে দেশের মাঠে শেষ সাক্ষাতে তাঁরা হারিয়েছিলেন।
অত পেছনেও যাচ্ছি না। ২০১১ অগস্ট। গত গ্রীষ্মে অ্যান্ডারসন এবং ব্রড তখন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের চোখে ফুলকি ধরাচ্ছেন। ট্রেন্টব্রিজের গ্যালারিতে এক দিন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় অস্ফুটে বলছিলেন, “ছবিটা ক’দিন বাদেই বদলে যাবে। এ বার আমাদের দেশে এসো। তুমি অ্যান্ডারসন রাজকোটের গ্যালারিতে পড়বে। তুমি ব্রড পড়বে হায়দরাবাদে মাঠের বাইরে।” বেদবাক্যের মতো খেটে গিয়েছিল সেই ভবিষ্যদ্বাণী। সচিন না থাকা। যুবরাজ না খেলা। অর্ধেক শক্তির ভারতের কাছে ওয়ান ডে-তে চুরমার হয়ে যায় ইংল্যান্ড। যাঁরা বিলেতের গ্রীষ্মে ০-৪ পর্যুদস্ত হওয়ার কথা বলছেন তাঁরা বাক্যের একটা অংশ অসম্পূর্ণ রেখে দিচ্ছেন। বলছেন না ওই একই ইংল্যান্ড দু’মাসের মধ্যে ভারত সফরে এসে এক দিনের সিরিজে ব্রাউনওয়াশ্ড হয় ০-৫। ভারতীয় ড্রেসিংরুমে কিছু দিন আগেও রাহুল দ্রাবিড়কে সতীর্থরা কেউ কেউ বলেছেন এখনই রিটায়ার কোরো না। ২০১২-র শীতে ইংল্যান্ড আসছে। ওদের টেস্ট সিরিজে মেরে চলে যেও।
অস্ট্রেলিয়ার কথা লিখছি। অর্থাৎ হারতে হারতে জড়ভরত ড্রেসিংরুমের মধ্যেও এই তেজটুকু থেকেই গিয়েছে যে, ভারতে যে কোনও দল এলে আমরা সহজে জিতব। অস্ট্রেলিয়াও তা-ই ভাবে। ইংল্যান্ড তা-ই ভাবে। দক্ষিণ আফ্রিকা তা-ই ভাবে। এমনকী নিজের দেশের টার্নারে খেলার সুযোগ হারানো পাকিস্তানও মরুশহরে তা-ই ভাবে। বিশ্ব ক্রিকেট ক্যালেন্ডারে যত বেশি আইপিএল জাতীয় টি-টোয়েন্টি পিকনিক আর ওয়ান ডে বাড়ছে, তত বেশি আক্রান্ত হচ্ছে প্লেয়ারের টেকনিক। দ্বিতীয়ত, এই সব ফর্ম্যাটে টাকা এত বেশি যে অনভ্যস্ত সারফেসে টেস্ট ক্রিকেটের প্রতিকূলতা সামলানোর ঝক্কি কেউ নিতেই চাইছে না। সে দিন এক বিখ্যাত কোচ বলছিলেন, “দশ বছর আগেও ব্যাটে-বলে প্রথম হাত দেওয়া শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞেস করলে সে বলত আমার স্বপ্ন হল দেশের হয়ে একশো টেস্ট ম্যাচ খেলা। এখনকার ছেলেরা বলে, আমার স্বপ্ন দেশের হয়ে পাঁচ বছর খেলা।”
বেসরকারি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে অনূর্ধ্ব উনিশ পর্যায়ে গিয়েও লক্ষ্যটা একই থেকে যাচ্ছে। টেস্ট ক্রিকেটে দশ হাজার রান করা বা তিনশো উইকেট নেওয়া নয়, যুব ক্রিকেটারের স্বপ্ন দাঁড়াচ্ছে দেশ ও ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে পাঁচ-ছ’বছর জাঁকিয়ে খেলা। যাতে যথেষ্ট অর্থ উপার্জন হয়ে যায়। বাকি জীবন টাকা রোজগারের জন্য আর চিন্তাভাবনা করতে না হয়। আগেও পেশাদাররা রোজগারের জন্য খেলত। দূর দেশে গিয়ে কাউন্টি খেলত। কিন্তু লক্ষ্যটা ছিল কাউন্টি খেলার মাধ্যমে টেস্ট ক্রিকেটের জন্য তৈরি হওয়া। এখন সেই লক্ষ্যটাই নেই। ক্রিস গেইল, শাহিদ আফ্রিদিরা ক’দিন আগে অস্ট্রেলিয়ায় যখন টোয়েন্টি টোয়েন্টি খেলছিলেন, তখন তাঁদের লক্ষ্য ছিল নিছকই রোজগার। সচিন-রাহুল পরবর্তী ক্রিকেট প্রজন্মের মধ্যে এটাই একটা বিশাল পরিবর্তন যে নতুনরা মনে করে টেস্ট ক্রিকেট মোটেও আধুনিক ক্রিকেটারের ভ্যাটিকান নয়। ক্রিকেটের আরও অনেক আইফেল টাওয়ার আছে। সেগুলো চড়লেও হবে।
যুগ, সময় এবং অর্থনীতির পরিবর্তন। নইলে আগামী সোমবার আনন্দবাজার পত্রিকার উদ্যোগে যিনি টাইগার পটৌডি স্মারক বক্তৃতা দিতে আসছেন, তাঁকে যদি আজও জিজ্ঞেস করা হয় অধিনায়ক হিসেবে আপনার সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স কী, তিনি জনতার যা ধারণা সেই উত্তর দেবেন না। বিরানব্বইয়ের বিশ্বকাপ জেতা নয়। ইমরান খান বলবেন সেই সময়কার প্রবল পরাক্রান্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তিন টেস্ট সিরিজে নেতৃত্ব দিয়ে তিন বারই অপরাজিত থাকা। অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েও তা ভেঙে ইমরান ফেরত আসেন যেহেতু ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তিনি হারাতে চেয়েছিলেন। ১৯৮৮-র তাঁর দলে থাকা সতীর্থরা আজও বলেন আধুনিক সময়ের মতো নিরপেক্ষ আম্পায়ার থাকলে তাঁরা সিরিজ জিতে ফিরতেন। শেষ দিন ভিভ রিচার্ডসকে দু’বার এল বি দেওয়া হয়নি।
সেই সময় দেশের মাঠে অক্টোবর-নভেম্বরে নিউজিল্যান্ড বা ইংল্যান্ড খেলতে এলে ইমরান সোজা সিরিজ থেকে নাম তুলে নিতেন। অধিনায়কত্ব করতেন মিয়াঁদাদ। ইমরানের কাছে স্পিনারের কড়াইতে বিপক্ষকে ভাজার মধ্যে কোনও বীরত্ব ছিল না। তিনি রোম্যান্স দেখতেন বিদেশে গিয়ে শক্তিমান বিদেশিকে তার ঘরের মাঠে হারানোর মধ্যে।
এই রোম্যান্স পরবর্তী কালে সৌরভের নেতৃত্বে ভারতীয় ক্রিকেটাররাও দেখিয়েছেন। একা সৌরভ বললে ভুল হবে। তাঁর গোটা ইউনিট। রাহুল। সচিন। লক্ষ্মণ। কুম্বলে। এই ক্রিকেটার পঞ্চক শপথ নিয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটকে তাঁরা দুর্নীতিমুক্ত করবেন। আর বিদেশের মাঠে কড়া প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে জিতবেন। ধোনির নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়ায় ভারত কলঙ্কিত হতে পারে, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে জেতার একটা রোম্যান্স যে তাঁরা দেখেছিলেন সেই কৃতিত্ব অবশ্যই তাঁদের প্রাপ্য। আর শুধু সে জন্যই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে নিরুপদ্রব ওয়ান ডে খেলে টাকা রোজগার ছেড়ে দিয়ে তাঁরা আগেভাগে অস্ট্রেলিয়ায় প্রস্তুতির জন্য চলে গিয়েছিলেন।
কোনও সন্দেহই নেই যে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে এমন ভাঙাচোরা অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর সোনার সুযোগ হয়তো সচিনের জীবদ্দশাতেই আর আসবে না। এমন একপেশে সিরিজের পরেও অস্ট্রেলিয়ার তিন নম্বর ব্যাটসম্যানের গড় মাত্র ২.৮৩। এক ওপেনারের গড় ৪৪, আর এক জনের ৩৩। ইশান্ত শর্মা যে দেশে ১১১ বোলিং গড় নিয়ে ফিরছেন তার পেছনে অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার প্রথম তিন ব্যাটসম্যান নেই। মোদ্দা কথা, তিন বোলার আর দুই ব্যাটসম্যান পন্টিং-ক্লার্ক মিলে ভারতকে ৪-০ হারালেন। অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে গত ৩৪ বছরের মধ্যে বিপক্ষের মাত্র পাঁচ জন পারফর্ম করছে, এমন টিমের বিরুদ্ধে খেলার সোনার সুযোগ ভারত পায়নি। ব্যাটিং নিয়ে এমন টেনশন ছিল অস্ট্রেলিয়ার, যে ব্যাটিং কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গারকে হুমকি দিয়ে মেলবোর্ন টেস্টের পর ডিন জোন্স কলম লেখেন, ‘আমি তোমার কোচিংয়ের সমালোচনা করেছি বলে মাঠে আমার হাতটা ধরে রেখে ও রকম মোচড় দিচ্ছিলে। আমি জানি তুমি কুংফু জানো। কিন্তু আমিও পরের দিন সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নই।’ ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন আকচাআকচি বোধহয় বেনজির। অস্ট্রেলীয় মিডিয়াও মোটেও টিমের সঙ্গে ছিল না। বরং পন্টিংকে ধুয়ে দিচ্ছিল।
বিপক্ষে তৈরি থাকা এমন অশুভ বাতাবরণের সুযোগ ভারত নিতে পারেনি স্রেফ টেকনিক্যাল কারণে। এ বারের অস্ট্রেলীয় উইকেটের বাড়তি মুভমেন্ট ম্যানেজ করতে না পেরে। চার বছর আগে হলে সচিন-রাহুলদের দক্ষতা এটা ম্যানেজ করতে পারত। তাঁদের রেকর্ড দেখলেই বোঝা যাবে বিশ্বের সর্বত্র সেই সময় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। ওই ঘরানার যাঁরা, আজও পারেন। যেমন জাক কালিস। যেমন রিকি পন্টিং। যেমন মাইকেল ক্লার্ক। কিন্তু চল্লিশ ছুঁইছুঁই বয়সে বিদেশের মাঠে নতুন করে উদয় হওয়া সুইংয়ের পরীক্ষা দেওয়া আর সচিনদের পক্ষে সম্ভব না। আর তাঁদের যাঁরা পরের প্রজন্ম, সহবাগ বা গম্ভীর, তাঁদের খেলাটা সব ধরনের উইকেটের জন্য তৈরিই হয়নি। সহবাগের এমসিজি-তে করা ১৯৫ রানের কথা অনেকেই মনে করে নস্ট্যালজিক হয়েছেন। কিন্তু সেই সিরিজে এ বারের মতো ক্রমাগত মুভমেন্ট ছিল না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে যদি মুভমেন্ট অদৃশ্য হয়ে যায়, ব্যাটসম্যান যদি জানে হিটিং থ্রু দ্য লাইন আবার সম্ভব, তা হলে এই বয়স্ক ব্যাটিং লাইনআপকেই আবার দেখে মনে হবে চিচিং ফাঁক। সহবাগ জ্বলন্ত উদাহরণ। গত চার বছর বিদেশে সেঞ্চুরি নেই। ২৪ গড় নিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরবেন। অথচ পন্টিংদের দেশে যাওয়ার জন্য বিমানে উঠেছিলেন ওয়ান ডে-তে ২১৯ রানের বিশ্বরেকর্ড করে।
ধোনি আধুনিক প্রজন্মেরই রংমশালধারী এক জন। যিনি বিদেশে জিততে চান কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে জেতাটাকে স্বপ্ন হিসেবে দেখেন না। ওয়ান ডে বা টি টোয়েন্টিতে তাঁর প্যাশন অনেক বেশি। শনিবার মহারাষ্ট্রের এক শৈলশহর থেকে অজিত ওয়াড়েকর বলছিলেন, “চুয়াত্তরে আমাদের সেই বিপর্যয়ের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। আমাদের তবু একটা ক্ষোভ ছিল। নির্বাচনী বৈঠকে যা দল চেয়েছিলাম তা দেওয়া হয়নি। সুইং বোলার চেয়েছিলাম বেশি। স্পিনার ভরে দেওয়া হয়েছিল। এদের ক্ষেত্রে তো তা করা হয়নি।” ওয়াড়েকর চুয়াত্তরের সেই বিপর্যয়ের পর অবসর নিয়ে নিতে বাধ্য হন। যদিও পরিসংখ্যানের দিক থেকে ১৯৫৯-এর জানুয়ারি থেকে ১৯৬৮-র জানুয়ারি পর্যন্ত ভারত টানা বিদেশে ১৭ টেস্ট হেরেছিল। ওয়াড়েকরদের ইংল্যান্ডে ০-৩ হারাটা বিজ্ঞাপিত হয়েছিল অনেক বেশি।
এ বারেও তাই। মাত্র এক মাস আগেও রাহুল দ্রাবিড় এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে ১১৪৬ রান সম্পূর্ণ করে বিজয়ী নায়কের মর্যাদা পাচ্ছিলেন ক্রিকেটবিশ্বে। ব্র্যাডম্যান বক্তৃতা দেওয়ার পর তাঁকে নিয়ে আরও বেশি করে ধন্য ধন্য পড়ে যায়। অথচ মাত্র এক মাসের মধ্যে শনিবার তিনি কেন অবসর নিলেন না তা নিয়ে জাতীয় মিডিয়ায় তীব্র অবসাদ লক্ষ করা গেল। কেউ বুঝতে রাজি নয় দ্রাবিড়ের দক্ষতা কমেছে হয়তো বিদেশে সফল হওয়ার ক্ষেত্রে। দেশের মাঠে তিন নম্বরে এখনও তিনিই সেরা বাজি। সে ক্রমাগত বোল্ড হতে থাকুন বা না থাকুন। সে অবসর নিন বা না নিন। বোর্ড যতই দল বদলাক। নতুন ক্যাপ্টেন আনুক। আধুনিক প্রজন্মের মধ্যে বিদেশের প্রতিকূলতার সঙ্গে টেস্ট সিরিজে মানানোর মনন কোথায়? শুধু ভারত কেন, কোনও দেশেই তো নেই। কেউ সেই ঝক্কিটাই নিতে চাইছে না। বিদেশে ক’টা আর খেলতে হয়। তার চেয়ে নিজের দেশ, ওয়ান ডে আর টি টোয়েন্টি দিয়ে দিব্যি কেরিয়ার চলে যাবে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মনোভাব যে দিকে যাচ্ছে আর দশ বছর বাদে বিদেশের বিপর্যয় নিয়ে এমন অগ্ন্যুৎপাত আর ঘটবে না। লোকে এই ট্রেন্ডের স্বাভাবিক পরিণতির সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যাবে যে টেনিসের মতো ক্রিকেটেও স্পেশ্যালিস্টের চল চলে এসেছে। কেউ কেউ ঘাসের কোর্টে স্পেশ্যালিস্ট। কেউ কেউ হার্ডকোর্টে। কেউ রিবাউন্ড এসে। কেউ ক্লে কোর্টে। যে বা যারা সব রকম কোর্টে জিততে চাইবে তারা অবশ্যই সেরা। কিন্তু তেমন একটা ফেডেরার বা নাদাল দশ বছরে ক’জন আসে?
সচিনদের ঝাঁকটা অস্ট্রেলিয়া থেকে টেস্ট ক্রিকেটে বিষণ্ণ হয়ে ফিরবে, এটা যথেষ্ট বিষণ্ণতা নয়। বিষণ্ণতা হল সব রকম সারফেসে জেতার জন্য যাবতীয় ঝকমারি নিতে প্রস্তুত এঁদের শেষ ঝাঁকটাও ক্রিকেট থেকে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। প্যাশন চলে গেল। পেশাদারিত্ব থাকল। রোম্যান্স চলে গেল। অঙ্ক থাকল। কে বলেছে ০-৮-ই গভীরতম শক্! |