বাগুইআটি
তালা ভেঙে ফ্ল্যাটে মিলল মা-মেয়ের কোপানো দেহ
বিয়েবাড়ি যাওয়ার জন্য হাতভর্তি গয়না পরে ছিলেন বাগুইআটির গৃহবধূ সঙ্গীতা লোহারুকা। তাঁর ১১ বছরের মেয়ে ইশার হাতেও ছিল মেহেন্দি। ওই অবস্থাতেই পাশাপাশি ঘরে পড়ে ছিল মা-মেয়ের ক্ষতবিক্ষত দেহ। শনিবার সকালে স্থানীয় অশ্বিনীনগর এলাকার একটি ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে জোড়া মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
ডাকাতিতে বাধা দিতে গিয়ে কিংবা দুষ্কৃতীদের চিনে ফেলার জন্য এই খুনের ঘটনা ঘটেনি বলে পুলিশ এক রকম নিশ্চিত। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের বক্তব্য, সঙ্গীতাদেবীর গায়ের গয়নায় হাতও দেয়নি আততায়ীরা। আলমারিতে নগদ টাকা থাকা সত্ত্বেও তা খোয়া যায়নি। সেই কারণে মনে করা হচ্ছে, কেবল প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই ওই ফ্ল্যাটে হানা দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারও বলেছেন, “তদন্তে কিছু সূত্র মিলেছে। লুঠপাটের জন্য খুন হয়নি বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে।”
বার করা হচ্ছে মৃতদেহ।-নিজস্ব চিত্র
এমনকী, খুব একটা ধস্তাধস্তিরও চিহ্ন মেলেনি ঘরগুলিতে। এ দিন দুপুরে ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায়, বছর ৩৮-এর সঙ্গীতাদেবীর দেহ যেখানে পড়ে ছিল, সেই ঘরের বিছানা চাদর সামান্যই এলোমেলো। বাকি আসবাবপত্র গোছানো। পুলিশ জানিয়েছে, মা ও মেয়ের সারা দেহ, বিশেষ করে বুক-পেট ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফালাফালা করে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। এর থেকে পুলিশের অনুমান, আক্রোশ মেটাতেই এ ভাবে কোপানো হয়েছে দু’জনকে। পুলিশ জানিয়েছে, সঙ্গীতাদেবী যে ঘরে ছিলেন, সেখানেই ইশাকে খুন করা হয়। পরে দেহটি টেনে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় পাশের ঘরে। এ দিন দুপুরেও এক ঘর থেকে অন্য ঘর পর্যন্ত রক্তের দাগ স্পষ্ট।
ব্যবসার খাতিরে বছরের অধিকাংশ সময়েই রাজস্থানে থাকেন সঙ্গীতাদেবীর স্বামী অরুণ লোহারুকা। অশ্বিনীনগরের ওই ফ্ল্যাটের দোতলায় ভাড়া থাকতেন তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জেনেছে, হাতিয়াড়ার বাসিন্দা বছর ৩৫-এর এক যুবক মাঝেমধ্যেই ওই ফ্ল্যাটে আসতেন। পাড়ার লোকের কাছে তাঁকে দূর সম্পর্কের আত্মীয় বলে পরিচয় দিয়েছিলেন অরুণবাবুরা। এই সূত্র পাওয়ার পরে ওই যুবকের সন্ধান করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পেরেছে, ঘটনার আগের দিন থেকেই তিনি নিখোঁজ। তাঁকে পাওয়া গেলে সহজেই খুনের কিনারা করা যাবে বলে তদন্তকারী অফিসারদের অনুমান।
অরুণবাবুর ১৪ বছরের ছেলে আশু থাকে সঙ্গীতাদেবীর বাবা সত্যনারায়ণ অগ্রবালের কাছে। তিনি থাকেন হাজারিবাগে। শুক্রবার তাঁদের একটি পারিবারিক বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল কলেজ স্ট্রিট এলাকায়। তাতে যোগ দিতে সত্যনারায়ণবাবু বৃহস্পতিবার রাতে নাতিকে নিয়ে হাজারিবাগ থেকে বাসে চেপে কলকাতা রওনা হন। সঙ্গীতাদেবীর বাবা পুলিশকে জানিয়েছেন, ২৬ জানুয়ারি, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার বাস ছাড়ার পরে তিনি মেয়েকে ফোন করেন। তখন ছেলের সঙ্গেও সঙ্গীতাদেবীর কথা হয়। যেহেতু কলেজ স্ট্রিট এলাকায় বিয়েবাড়ি, সেই কারণে সত্যনারায়ণবাবু শুক্রবার সকালে কলকাতায় পৌঁছে শিয়ালদহের একটি হোটেলে ওঠেন। তিনি এ দিন বলেন, “বাস থেকে মেয়েকে ফোন করে বলেছিলাম, ও যেন নাতনিকে নিয়ে সকাল-সকাল বিয়েবাড়ি চলে আসে। মেয়ে জানিয়েছিল, ইশার স্কুল কামাই করা যাবে না। তাই ও স্কুল থেকে ফিরলেই কলেজ স্ট্রিটে চলে আসবে।”
এর পরে আর সঙ্গীতাদেবীর সঙ্গে কথা হয়নি সত্যনারায়ণবাবুর। কলকাতা পৌঁছে যত বারই মোবাইলে ফোন করেছেন, বন্ধই পেয়েছেন সেটি। ওই দিন বিকেল পর্যন্ত মেয়েকে নিয়ে সঙ্গীতাদেবী বিয়েবাড়িতে না পৌঁছনোয় সত্যনারায়ণবাবু নিজেই বাগুইআটির ফ্ল্যাটে চলে আসেন। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, ফ্লা্যটটি বাইরে থেকে তালাবন্ধ ছিল। সেখানে দাঁড়িয়েও একাধিক বার মেয়েকে ফোন করেন তিনি। কিন্তু কোনও সাড়া না মেলায় বাগুইআটি থানায় মেয়ে ও নাতনির ব্যাপারে নিখোঁজ ডায়েরি করেন সত্যনারায়ণবাবু। খবর দেন জামাই অরুণ লোহারুকাকেও।
শনিবার সকালের উড়ানে কলকাতায় ফেরেন অরুণবাবু। তাঁর উপস্থিতিতে ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে পুলিশ ঘরে ঢোকে। পুলিশ জানিয়েছে, অরুণবাবুদের তালাই ঝোলানো ছিল দরজায়। তার একটা চাবি থাকত সঙ্গীতাদেবীর কাছে। তা হলে কি চেনা লোক দেখে দরজার তালা খুলে দিয়েছিলেন সঙ্গীতাদেবী? পুলিশের অনুমান সে রকমই।
তা হলে কি খুব সকালেই আততায়ীরা হানা দিয়েছিল ওই ফ্ল্যাটে? বাসিন্দারা পুলিশকে জানিয়েছেন, শুক্রবার ভোরে সঙ্গীতাদেবীর ফ্ল্যাট থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পেয়েছিলেন তাঁরা। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ফ্ল্যাটের সামনে জড়ো হয়ে সঙ্গীতাদেবীর নাম ধরে ডাকাডাকি করেন। তখন তাঁরা বাইরে তালা ঝোলানো দেখেননি। দরজা ভিতর থেকেই বন্ধ ছিল। প্রতিবেশীরা বলেছেন, তখনকার মতো কান্না বন্ধ হয়ে গেলে তাঁরাও যে-যার ফ্ল্যাটে ফিরে যান। তবে শনিবার সকাল থেকেই মৃদু পচা গন্ধ বেরোচ্ছিল সঙ্গীতাদেবীর ঘর থেকে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.