|
|
|
|
ঋদ্ধিকে দেখে মনে হল না টেস্টে প্রথম কিপিং করছে |
দীপ দাশগুপ্ত |
কল্পনা করতে পারছি, কী প্রচণ্ড কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে টিম ইন্ডিয়া। বোঝা যাচ্ছে, সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসা বা মাঠে যাওয়া, ম্যাচ খেলা, তার পর হোটেলে ফেরা, রুমে বসে টিভি দেখা, ডিনার করা সব কিছুর মধ্যে কোথাও কোনও ‘পজিটিভ’ বা ইতিবাচক কিছু নেই। কাগজ পড়লে নেগেটিভ, টিভি খুললে নেগেটিভ, দেশে ফোন করলে নেগেটিভ, ইন্টারনেটে ম্যাচ রিপোর্ট পড়লে শুধুই হেরে যাওয়ার গল্প! খেলাধুলোয় যে কোনও টিমের কাছে এটা হল চোরাবালির মতো। যত চেষ্টা করবেন এটা থেকে বেরিয়ে আসার, তত বেশি তলিয়ে যাবেন। সমাধানের রেসিপিটা বলতে পারব না। হয়তো একটা ব্রেক। কিছু দিনের জন্য ক্রিকেটকে একেবারে ভুলে থাকা কাজে আসতে পারে।
তিনটে টেস্টে ‘পজিটিভ’ বলতে উমেশ যাদবের একটা ইনিংসে পাঁচ উইকেট পাওয়া বোলিং। ইংল্যান্ডে রাহুল দ্রাবিড়ের দুর্দান্ত সব ইনিংসে ইতিবাচক দিক ছিল। এখানে সেটাও নেই। ক্রমাগত হারতে হারতে একটা টিমের নিজেদের প্রতি বিশ্বাস চলে যেতেই পারে এবং সে ক্ষেত্রে একটা ইতিবাচক ঘটনা ড্রেসিংরুমের হাওয়া বদলে দিতে পারে। যেমন ধরুন, সহবাগ ৬০ বলে একটা সেঞ্চুরি করল বা সচিন বা দ্রাবিড় কেউ একটা দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করল, এ রকম। কিন্তু সে রকম কিছুও পাইনি। ভাবাই যাচ্ছে না, তিনটে টেস্টে আমাদের তথাকথিত বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইন আপের কারও কোনও সেঞ্চুরি নেই। এখন মানতেই হবে এই ব্যাটিং লাইন আপ আর বিশ্বসেরা নয়।
প্রথম তিনটে টেস্টে যা হয়েছিল, অ্যাডিলেডে প্রথম দিনও তাই। লাঞ্চের আগে তিনটে উইকেট এল, ভাবলাম লাঞ্চের পরে বোধহয় সহবাগ ঝাঁপাবে। এক দিক থেকে নিশ্চয়ই জাহির, অন্য দিক থেকে অশ্বিন। তার বদলে সহবাগ নিয়ে এল উমেশকে। দিশাহীন উমেশকে সরিয়ে যখন জাহিরকে আনা হল, ততক্ষণে পন্টিং আর ক্লার্ক জমিয়ে বসেছে। ক্লার্ক যখন ২০ ব্যাটিং, তখন থেকেই ওর জন্য পেসারের বলে স্লিপ নেই! টেস্টে বোলিং ক্যাপ্টেনের মানসিকতা এ রকম হলে কী করে আসবে উইকেট? |
|
উইকেটের সামনে, উইকেটের পিছনে: বিধ্বংসী পন্টিং। নির্ভরযোগ্য ঋদ্ধিমান। ছবি: গেটি ইমেজেস। |
এই সিরিজটা দেখাল, অস্ট্রেলিয়া আর আমাদের তফাত কোথায়। ল্যাঙ্গার, হেডেন বা ম্যাকগ্রারা যখন অবসর নিয়েছিল, তখন অস্ট্রেলিয়া শূন্যতাটা সামলানোর জন্য ধীরে ধীরে তৈরি হয়েছিল। সেখানে আমরা বিশ্বাস করিনি, আমাদের মহাতারকাদের পারফরম্যান্সের ‘এক্সপায়ারি ডেট’ আছে। আসলে সৌরভের অবসরের পরেই নতুন ক্রিকেটার ঢোকানোর পদ্ধতি শুরু করা উচিত ছিল। দ্রাবিড় ১৬ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে। টিমের ভালর জন্য এখন কী করা উচিত, বা সিনিয়ররা নিজেদের অবসর নিয়ে কী ভাবছে, তা নিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলে ও কথা বলবে না, মনে হয় না। লক্ষ্মণের ক্ষেত্রেও তাই। পুনর্গঠন ছাড়া এখন রাস্তা নেই।
টেস্টটার কথায় ফিরি। বাংলার ঋদ্ধিকে প্রথম দিন উইকেটের পিছনে দেখে বেশ আত্মবিশ্বাসী লাগল। পেসারদের তো বটেই, অশ্বিনকেও বেশ ভাল কিপ করেছে। আর ভাল লাগল শরীরী ভাষা। ওকে দেখে এক বারও মনে হয়নি উইকেটকিপার হিসেবে এটাই জীবনের প্রথম টেস্ট। এমনকী ক্লার্ক-পন্টিংয়ের লম্বা জুটির সময়েও ওকে দেখলাম, বোলারদের সঙ্গে কথা বলে তাতাচ্ছে। এটাই চাই। আশা করব, ব্যাটিংটাও ভাল করবে।
একজন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে নিশ্চয়ই চাইব না অস্ট্রেলিয়াতেও ৪-০ হোক। অস্ট্রেলিয়া এই টেস্টে আর দ্বিতীয় বার ব্যাট করতে চাইবে না। ৬০০-র কাছাকাছি রান করে ভারতের উপর ঝাঁপিয়ে পড়াটাই নিশ্চয়ই লক্ষ্য। তার পর যা করতে হবে, ভারতীয় ব্যাটিংকে করতে হবে। টেস্টটা ড্র রাখতে পারলে সম্মানরক্ষা তো হয়ই, তার চেয়েও যেটা জরুরি, আসন্ন ওয়ান ডে সিরিজের আগে টিমটা কিছুটা হলেও অক্সিজেন পায়। মনে রাখা দরকার, এই টিমের প্রথম সাত জনের মধ্যে পাঁচজন সহবাগ, গম্ভীর, সচিন, কোহলি, ধোনি কিন্তু ওয়ান ডে-তেও থাকবে। অ্যাডিলেডে বেশ ভাল ব্যাটিং উইকেট হয়েছে, খেলতে না পারার কোনও কারণ নেই। কিন্তু এই কথাটা তো সিরিজের শুরু থেকেই বলে আসছি আমরা। কাজের কাজ তো কিছু হয়নি। একটার পর একটা হেরেই চলেছে। সে জন্যই বলছিলাম, এই টিমকে দেখে মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে চোরাবালিতে তলিয়ে যাচ্ছে!
|
অ্যাডিলেড টেস্টের স্কোর |
অস্ট্রেলিয়া
প্রথম ইনিংস |
কাওয়ান ক লক্ষ্মণ বো অশ্বিন ৩০,
ওয়ার্নার এলবিডব্লিউ জাহির ৮,
মার্শ বো অশ্বিন ৩,
পন্টিং ব্যাটিং ১৩৭,
ক্লার্ক ব্যাটিং ১৪০,
অতিরিক্ত ১৭,
মোট ৯০ ওভারে ৩৩৫-৩।
পতন: ২৬, ৩১, ৮৪।
বোলিং: জাহির ১৮-২-৫২-১, উমেশ ১২-০-৮৭-০, অশ্বিন ২৬-৪-৮১-২,
ইশান্ত ২০-৫-৫২-০, সহবাগ ১৩-০-৪৯-০, বিরাট ১-০-৩-০। |
|
|
|
|
|
|
|