সম্পাদক সমীপেষু...
নয়া উদারনীতিবাদের ভূত
অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের (‘ইউরোপের ভুলটা ভারত করেনি বটে...’, ২৭-১২) প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল থেকেই কয়েকটি কথা বলতে চাই।
প্রথমত, ইউরোপ তথা বিশ্বের নানা দেশ কোন মতাদর্শের ভিত্তিতে উন্নয়নে ব্যয়বরাদ্দ কমিয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের পথ ধরেছে তার ব্যাখ্যা সেন দেননি। ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, নয়া-উদারবাদী রক্ষণশীল মতাদর্শের ভূত ঘাড় থেকে না-নামলে দেশগুলি কৃচ্ছসাধনের পথ থেকে সরবে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেনের ভাষায় ‘উদ্ভব হয়েছিল এক অত্যন্ত কার্যকর কল্যাণ-রাষ্ট্রের কাঠামো’, ‘যা ইউরোপের গৌরবের দিন ছিল’। আমার মতে, এই উদ্ভবের পিছনে দুটি কারণ ছিল।
১৯২৯-৩৩ ধনতন্ত্রের বিশ্বব্যাপী মহাসঙ্কট।
সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির সাফল্য। এই দুইয়ের গুঁতোয় জন মেনার্ড কেইনস সাহেবের হাত ধরে ধনতান্ত্রিক বিশ্বের রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপনির্ভর কল্যাণকর রাষ্ট্রের প্রবেশ। কিন্তু কল্যাণকর রাষ্ট্র কর্পোরেটের কাছে বরাবরই তেতো ওষুধ ছাড়া কিছু ছিল না। কারণ, মাইকেল কালেস্কির মতে, রাষ্ট্রীয় ব্যয়ে ঘাটতি অর্থসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনীতি যত পূর্ণ কর্মসংস্থানের দিকে এগোবে ততই অর্থনীতি ও সমাজনীতির উপর কর্পোরেটদের ফাঁস আলগা হবে, বৃদ্ধি পাবে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ। তাই কল্যাণকর রাষ্ট্রের স্বর্ণযুগেই আস্তে আস্তে গোকুলে বাড়তে থাকে মিল্টন ফ্রিডম্যানের রাষ্ট্রের হাতগোটানো বাজারমুখী ‘অর্থবাদ-তত্ত্ব’ যা পরবর্তী কালে পুষ্পে পর্ণে বিকশিত হয় নয়া-উদারবাদে। অবশেষে যা কল্যাণকর রাষ্ট্রকেই খারিজ করে।
আশির দশকে আমেরিকায় রোনাল্ড রেগন ও ইংল্যান্ডের মার্গারেট থ্যাচারের আমলে নয়া-উদারবাদী এই ‘কৃচ্ছ্রসাধন’ নীতি জোরালো ভাবে চেপে বসে। আই এম এফ এবং বিশ্ব-ব্যাঙ্কের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে কৃচ্ছসাধন নামক সর্পের মুখে ছেড়ে দেওয়া হয়। যার পোশাকি নাম ‘কাঠামোগত সংস্কারমূলক ঋণদান প্রকল্প’। তবে এই কৃচ্ছ্রসাধন আপামর জনসাধারণের জন্য শিক্ষা স্বাস্থের ব্যয় হ্রাস করলেও কর্পোরেটের জন্য খুলে দেয় বিপুল ভর্তুকি ও নানা সুযোগসুবিধার দরজা।
দ্বিতীয়ত, অমর্ত্য সেনের সঙ্গে এ বিষয়ে আমি একমত নই যে, ‘ভারত কৃচ্ছ্রসাধনের পথে হাঁটেনি’। ১৯৯১ সালে আর্থিক সংস্কার শুরু হওয়ার পর তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাও ও অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বারবার ভারতবাসীকে কৃচ্ছ্রসাধনের আবেদন জানিয়েছিলেন। তার প্রয়োগস্বরূপ সার ও খাদ্যে ভর্তুকি কমানো হয়। কমানো হয় গরিবদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক গ্রামীণ ঋণ, মাথাচাড়া দেয় মহাজনদের দাপট। জাতীয় আয়ে গ্রামীণ উন্নয়নের ব্যয়ের অনুপাত প্রাক্-সংস্কার সময়ে ৩৮ শতাংশ থেকে সংস্কারের প্রথম দশকেই কমে দাঁড়ায় ১.৯ শতাংশ। বামেদের চাপে ইউ পি এ-১ সরকার ২০০৪-এর পর গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্প ‘রেগা’ চালু করলেও তারা আনুষঙ্গিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধির প্রকল্প বন্ধ করে দেয়।
শান্তিনিকেতনে নিরাপত্তা
দেশব্যাপী কবিগুরুর জন্মের সার্ধশতবর্ষের সাড়ম্বর উদ্যাপনের যে বিপুল আয়োজন, শান্তিনিকেতন অবশ্যই তার প্রাণকেন্দ্র। তাই সমস্ত বছর ধরেই এখানে চলেছে জনসমাগম। দেশি বিদেশি মানুষের নিত্য আসাযাওয়া। অথচ প্রশাসনের উদাসীনতার সুযোগে অসামাজিক কার্যকলাপ যে হারে বাড়ছে তাতে সাংস্কৃতিক পরিবেশ শুধু কলুষিত হচ্ছে না, মানুষের, স্থানীয় ও পর্যটক, সকলেরই নিরাপত্তা আজ প্রশ্নের সামনে। সাম্প্রতিক একটি ঘটনায় এক জন স্থানীয় মানুষ হিসাবে একই সঙ্গে লজ্জিত ও শঙ্কিত বোধ করছি। শান্তিনিকেতনের নানা দ্রষ্টব্যের পাশাপাশি শনিবারের সোনাঝুরি মেলা বেশ কিছু দিন হল মানুষের অন্যতম আকর্ষণস্থল হিসাবে দাঁড়িয়েছে তার হস্তশিল্প সম্ভার ও বাউল গানের জন্য। পৌষমেলার ঠিক পরেই ৩১ ডিসেম্বর সোনাঝুরি মেলায় গিয়েছিলাম কলকাতা থেকে বাউলের আকর্ষণে আসা একটি অল্পবয়সি মেয়েকে নিয়ে। মেলাপ্রাঙ্গণ লোকে লোকারণ্য। পড়ন্ত বিকেলে বেলা চারটা নাগাদ সেখান থেকে বেরিয়ে রিকশা নিয়ে আসছিলাম শ্রীনিকেতনের দিকে। সরু মেঠো পথ। সামনেই বল্লভপুর রিসর্ট, কিছু মানুষ শিল্পসম্ভার নিয়ে বসে। প্রকৃতি ভবন পার হতেই একটা স্কুটারে দুটি ছেলে রিকশাকে ধাক্কা মেরে থামিয়ে আর পাশে বসা মেয়েটির হাত থেকে ব্যাগটা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বার বার। মেয়েটি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই যথেষ্ট সাহসের সঙ্গে বাধা দিয়ে ব্যাগটা ধরে রেখে ধমকে উঠলে একটি ছেলে কোমর থেকে রিভলভার বার করে আমাদের দিকে তাক করে। রিকশাচালকটিও জোর গলায় প্রতিবাদ করলে এবং বাধা দিলে তারা একটু থমকে যায়। দূরে খোয়াইয়ে দু-তিন জন বিষয়টা লক্ষ করছে দেখে দ্বিতীয় ছেলেটি জোর করে রিভলভার নিয়ে নেয়। এর পর তারা স্কুটার নিয়ে চলে যায়। আমরা ওই পথে আর যাওয়ার চেষ্টা করিনি।
ত্রিসীমানায় কোনও পুলিশ দেখা যায়নি। পৌষমেলার সময় এত লোকের সমাগমেও কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশাসন নেয়নি। এ রকম ঘটনা সম্প্রতি বার বার ঘটছে বিভিন্ন পাড়ায় দিনের বেলাতেও। পৌষমেলা শেষ হওয়ার পর দিনই জামবনিতে এক ভদ্রমহিলার গলার হার এ রকম দুই স্কুটার আরোহী দুপুর বেলা তার বাড়ির সামনে থেকে ছিনতাই করে। মাস দুয়েক আগেও কাছাকাছি অঞ্চলেই ঠিক একই ভাবে হার ছিনতাই হয়, ওই দিনের বেলাতেই। দীর্ঘ দিন ধরেই শান্তিনিকেতনের নানা অঞ্চলেই এই ঘটনা ঘটে চলেছে। প্রতিকার নেই।
সিগারেট
২৮ ডিসেম্বর এক পত্রে সিগারেটের টুকরো থেকে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাব্যসূত্র থেকে ১৯৮৭ সালে চিনের দাবানলের বহুচর্চিত ইতিহাস পর্যন্ত বিষয়টি চমৎকার ভাবে উত্থাপিত হয়েছে। প্রসঙ্গত, চিনের কিছু গবেষক রাস্তার জঞ্জাল থেকে সিগারেটের পোড়া টুকরো কুড়িয়ে নিয়ে ২৪ ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রেখে একটা পাচন বানিয়েছেন। সেই পাচনে অ্যাসিড ঢেলে তাঁরা ডুবিয়ে রেখেছিলেন ইস্পাতের পাত। তাঁরা দেখেছেন, এই প্রক্রিয়ায় ইস্পাতকে প্রায় ৯৫ শতাংশ ভাগ মরচের হাত থেকে রক্ষা করা যায়। ওই গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী ফি-বছর আবর্জনা হিসাবে ধরণীতলে নিক্ষিপ্ত হয় আনুমানিক ৪ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি পোড়া সিগারেটের টুকরো। শুধু অগ্নিবিষয়ক সতর্কতাই নয়, সিগারেটের নির্বাপিত টুকরো দূরপনেয় দূষণের উৎস। এতে থাকে নিকোটিন, অ্যানথ্রাকুইনোন-এর মতন বিষ। সেই বিষ নর্দমার নালা দিয়ে চলে যায় খালে বিলে নদীতে সাগরে। চিনা বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, ওই পাচনে নিকোটিন, অ্যানথ্রাকুইনোন, বিটা ক্যারোটিন-এর উপজাত নিয়ে ৯ রকম রাসায়নিক যৌগ থাকে। টুকরোগুলো জলাশয়ে পড়ার আগে কুড়িয়ে এনে যদি এই ভাবে দূষণ ও মরচে দুটোকেই আটকানো যায় সেই ভাবনায় তাড়িত এখন ওই চৈনিক গবেষকরা (সূত্র: ind. eng. chem. res. do1 10.1021/iei00168)।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.