মেয়রের হাতে রইল না তিনটি বিভাগের ভার
য় নয় করে অন্তত ন’টি বিভাগ ছিল সরাসরি তাঁর হাতে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু দিন ধরে তাঁকে বলছিলেন, কাজে গতি আনার জন্য কিছু দায়িত্ব অন্য মেয়র পারিষদদের মধ্যে ভাগ করে দিতে। এ বার সেই ‘নির্দেশ’ পালন করলেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছাতেই মেয়রের ছেড়ে দেওয়া তিনটি বিভাগ মঙ্গলবার ভাগ করে দেওয়া হল তিন মেয়র পারিষদের মধ্যে। স্বাস্থ্য বিভাগের অতীন ঘোষের কাছে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে গেল বস্তি উন্নয়ন। জঞ্জাল সাফাই বিভাগের দেবব্রত মজুমদার বাড়তি পেলেন কর মূল্যায়ন ও আদায় বিভাগ। পার্ক-উদ্যান দফতরের দেবাশিস কুমারের সঙ্গে যুক্ত হল বাজার বিভাগ।
এ দিন সকালে এন্টালিতে পুরসভার ওয়ার্কশপ পরিদর্শনে গিয়ে মেয়র নিজেই বিভাগ হস্তান্তরের খবর দেন। সেখানে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও ছিলেন। মেয়র জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ওই তিন বিভাগের দায়িত্ব তিন মেয়র-পারিষদকে দেওয়া হয়েছে। এতে তিন বিভাগের কাজে আরও গতি আসবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
কাগজে-কলমে মেয়র পারিষদদের দায়িত্ব বলতে যা-ই বোঝাক, পুর-পরিচালনার ক্ষেত্রে সব কিছুই আসলে মেয়র-কেন্দ্রিক। তাই কোনও মেয়র পারিষদকে আলাদা করে বাজেটও পেশ করতে হয় না। সামগ্রিক বাজেট পেশ করেন মেয়র। তাই মেয়রের হাত থেকে কিছু বিভাগের ভার অন্য মেয়র পারিষদদের হাতে গেলেও ‘মূল চাবিকাঠি’ মেয়রেরই রইল বলে পুর-বিশেষজ্ঞদের অভিমত। যদিও মেয়রের হাতে যে সব বিভাগ রয়েছে, সেগুলিতে কাজের গতি নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই নানা অভিযোগ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী ও দলীয় নেতৃত্বের কানে আসছিল। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও মেয়রকে বহু বার তৎপর হতে বলেছেন। তাই এ দিনের এই বিভাগ-বিন্যাসের পরে কিছুটা হলেও গুঞ্জন শুরু হয়েছে, মেয়রের ‘গুরুত্ব’ খর্ব করলেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল অবশ্য এই সব গুঞ্জনে আমল দেয়নি। মেয়র নিজেও জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ নিয়ে তিনিই এই বিভাগগুলির ভার ছেড়েছেন।
এন্টালিতে এক অনুষ্ঠানে মেয়র। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র
যে বিভাগগুলি সরাসরি মেয়রের হাতে আর থাকল না, এত দিনের কাজের নিরিখে সেগুলির হাল কী? পুরসভা সূত্রে খবর, বস্তি উন্নয়নের কাজে অগগ্রতি আশাপ্রদ নয়। বস্তিবাসীদের অন্য জায়গায় সরার আপত্তি থেকে জমির সমস্যার মতো নানা জটে থমকে উন্নয়ন। কর মূল্যায়ন ও আদায়ের ক্ষেত্রে এলাকা-ভিত্তিক কর নির্ধারণের প্রস্তাবিত ব্যবস্থা নিয়ে ইতিমধ্যেই জলঘোলা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে এক শ্রেণির লোকের উপরে করের বোঝা বাড়বে কি না, উঠছে সেই প্রশ্ন। বকেয়া কর আদায়ের কাজ ঠিকমতো হয়নি বলে পুরসভা বহু কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে ছাড় দিয়ে কর আদায়ের জন্য রাজ্যপালের সম্মতি আদায় করেছে। বাজার বিভাগের ঘাড়ে চেপে থাকা একটি বড় সমস্যা নন্দরাম মার্কেট। ওই ভবনের বেআইনি অংশ ভাঙার কাজ শুরুই করতে পারেনি পুরসভা। না-ভাঙার জন্য বাড়ছে ব্যবসায়ীদের চাপ, আবার ভাঙা না-হলে পুরসভার বিরুদ্ধে উঠবে ‘অবৈধ’ নির্মাণকে বৈধতা দেওয়ার অভিযোগ। তা ছাড়া, লেক মার্কেটের মতো কলকাতার বড় বড় পুর-বাজারগুলির আধুনিকীকরণের কাজও বেশ ঢিমেতালে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ যেমন বাড়ছে, পাশাপাশি কৃষি বিপণন দফতরের প্রস্তাবিত নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটি গড়ার কাজও ঝুলে আছে। সব মিলিয়ে তাই ওই তিনটি বিভাগ অন্য হাতে যাওয়ায় মেয়র কিছুটা হলেও ‘হাল্কা’ বোধ করতে পারেন, এমনটাও মনে করছেন অনেকে। পুরসভার অন্দরমহলে কারও কারও মন্তব্য, “মেয়রের পক্ষে এটা কিছুটা হলেও শাপে বর হল।” তিনটি বিভাগ ছাড়লেও মেয়রের হাতে এখনও অর্থ ছাড়া রয়ে গেল পরিকল্পনা, জল, বিল্ডিং, সড়ক ও ইঞ্জিনিয়ারিং, স্টোর্স প্রভৃতি বিভাগ। এর প্রায় সবগুলিই গুরুত্বপূর্ণ। আগে তৃণমূলের সুব্রত মুখোপাধ্যায় বা সিপিএমের বিকাশ ভট্টাচার্য কেউই মেয়র হিসাবে এতগুলি দফতর নিজের হাতে রাখেননি।
প্রশ্ন উঠেছে, শোভনবাবুই বা এতগুলি বিভাগ নিজের হাতে রেখে দিচ্ছেন কেন? মুখ্যমন্ত্রী বা মেয়র পদের ব্যক্তিরা সব কাজ তদারকি করবেন, এটাই প্রত্যাশিত। নিজের হাতে বেশি বিভাগ রাখলে সেই তদারকির কাজ সুষ্ঠুভাবে করা কতখানি সম্ভবপর? তৃণমূল সূত্রে খবর, এখনই মেয়রের হাতে থাকা বিভাগ কমানো নিয়ে কোনও নতুন ভাবনা নেই। এটা করতে গেলে মেয়র পারিষদ রদবদলের মাধ্যমে তা করতে হবে। যে সম্ভাবনা আপাতত খুব প্রবল নয়।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.