বাজার চাঙ্গা করতে অর্ধেক দাওয়াই বাতলেই থেমে গেল ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
প্রায় দু’বছর ধরে মূল্যবৃদ্ধি যুঝতে সুদ বাড়ানোকে হাতিয়ার করে লড়াই। তার পর অবশেষে কমার মুখ মূল্যবৃদ্ধির। এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে এ বারই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে সুযোগ ছিল সুদ কমিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানোর পথ তৈরি করার। শিল্পের হাল ফিরিয়ে আর্থিক বৃদ্ধির পথে অর্থনীতিকে ফেরাতে শীর্ষ ব্যাঙ্ক সেটাই করতে পারত। তা-ই চাইছিল শিল্পমহল। বৃদ্ধির হারকে চাগিয়ে তুলতে এটাই সঠিক পথ বলে ইঙ্গিত রিজার্ভ ব্যাঙ্কেরও। কিন্তু সুদ কমানোর প্রয়োজনীয়তা কবুল করেও আপাতত সে পথে পুরোপুরি হাঁটল না তারা। পরিস্থিতি আরও দেখে সুদ কমানো হবে, এই যুক্তিতে শুধু ব্যাঙ্কের হাতে নগদের জোগান বাড়াতে ব্যবস্থা নিলেন সাবধানী সুব্বারাও। মঙ্গলবার ঋণনীতির ত্রৈমাসিক পর্যালোচনায় তাই শুধু নগদ জমার অনুপাত বা সিআরআর (বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি তাদের আমানতের যে অংশ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে গচ্ছিত রাখে) কমিয়েছেন তিনি। সুদ কমানোর পথে না-হাঁটলেও নীতি বদলের সঙ্কেতকে অবশ্য শিল্প ও ব্যাঙ্কিং মহল স্বাগত জানিয়েছে। আর, শিল্পের হাল ফেরার আশায় ২৪৪ পয়েন্ট উঠে পরিবর্তনকে স্বাগত জনিয়েছে সেনসেক্সও।
আরবিআই গভর্নর ডি সুব্বারাও সিআরআর ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৫.৫% করার কথা জানিয়েছেন। এর জেরে অর্থনীতিতে নগদের জোগান বাড়বে ৩২ হাজার কোটি টাকা। রেপো রেট (যে হারে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক স্বল্প মেয়াদে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে ঋণ নেয়) ৮.৫% ও রিভার্স রেপো রেট (যে হারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের থেকে ঋণ নেয়) ৭.৫ শতাংশে অপরিবর্তিতই রয়েছে। তবে সুব্বারাও বলেন, “ভবিষ্যতে সুদ স্থির করার সময় নজর থাকবে তা কমানোর দিকেই।” কিন্তু রাজকোষ ঘাটতি কমাতে কেন্দ্র ব্যবস্থা না-নিলে সুদ কমানোর ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাত-পা বাঁধা বলেই মন্তব্য করেন সুব্বারাও।
সুদ না-কমায় ঋণে চড়া সুদ গোনার দায় থেকে সাধারণ ভাবে রেহাই এখনই না-মিললেও কিছু ক্ষেত্রে সুদ কমতেও পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক। কারণ সিআরআর কমায় ব্যাঙ্কের তহবিল সংগ্রহের খরচ কমবে, জানিয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। এই প্রসঙ্গ টেনেই স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান প্রতীক চৌধুরী বলেন, “যে সব ক্ষেত্রে ঋণের চাহিদা বেশি এবং তা বাকি পড়ার নজির কম, সেখানেই সুযোগ সুদ কমানোর।” এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর দেবব্রত সরকার বলেন, “সিআরআর বাবদ ব্যাঙ্কগুলি যে টাকা রিজার্ভ ব্যাঙ্কে জমা রাখত তার থেকে সুদ পাওয়া যেত না। এখন কম টাকা রাখতে হবে। অর্থাৎ ওই টাকা বাজারে সুদ নিয়ে খাটাতে পারব। ফলে ব্যাঙ্কের আয় বাড়বে।” এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ মনে করেন, এটা মূল্যবৃদ্ধি কমানোয় সাহায্য করবে। ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর এস এল বনসাল বলেন, “সকলেরই আশা, আগামী বার আরবিআই সুদ কমাতে শুরু করবে।”
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দাওয়াইয়ে শিল্পমহল কিছুটা হলেও স্বস্তিতে। নগদ জোগানে যে টান পড়েছিল, তার অনেকটাই সুরাহা হবে বলে মনে করছেন সিআইআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তিনি বলেন, “লগ্নির চাকা ঘোরাতে শীঘ্রই আরবিআইকে রেপো রেট-ও কমাতে হবে। শ্রেয়ী ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফিনান্সের সিএমডি হেমন্ত কানোরিয়ার মতে এটা স্বল্পমেয়াদি লগ্নির পক্ষে ইতিবাচক। অ্যাসোচ্যাম সেক্রেটারি জেনারেল ডি এস রাওয়াত মনে করছেন, যে সব প্রকল্প নগদের অভাবে আটকে ছিল সেগুলির কিছুটা সুরাহা হবে। ফিকি প্রেসিডেন্ট আর ভি কানোরিয়া রেপো রেট কমলে তা লগ্নি বাড়ানোর অন্যতম চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারত। |