ইরান থেকে তেল কেনার ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নিষেধাজ্ঞা জারি করার ফলে ভারতের সঙ্কট আরও ঘনীভূত হল বলে মনে করছে সাউথ ব্লক। সঙ্কটমোচনে বিভিন্ন স্তরে প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। ইরান থেকে ইতিমধ্যেই আমদানি করা বিপুল পরিমাণ তেলের দাম মেটানোর ব্যাপারে নির্দিষ্ট ব্যবস্থা তৈরি করা, পাশাপাশি ভবিষ্যতে তেল কেনার প্রশ্নে তেহরানের উপর সর্বাত্মক নির্ভরতা কমানো— চেষ্টা চলছে সব রকমই। তবে সার্বিকভাবে নিষেধাজ্ঞার প্রশ্নে নিজস্ব কূটনৈতিক অবস্থানেই অটল থাকছে নয়াদিল্লি। তা হল, সাধারণভাবে কোনও একটি বিশেষ রাষ্ট্রের উপর অন্য কোনও রাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে মানা হবে না। একমাত্র রাষ্ট্রপুূঞ্জের নিষেধাজ্ঞাকেই মানবে নয়াদিল্লি।
আজ আমেরিকায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূত নিরুপমা রাও জানিয়েছেন, গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে নয়াদিল্লি। এ বিষয়ে আমেরিকার সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি অবশ্য তিনি জানিয়েছেন, তেল আমদানির ব্যাপারে শুধুমাত্র একটি রাষ্ট্রের উপর নির্ভরতা কমাতে চাইছে ভারত। ইরান থেকে তেল আমদানি আগের তুলনায় অনেকটাই কমেছে বলে মন্তব্য করেছে তিনি। নিরুপমার কথায়, “অপরিশোধিত পেট্রোপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ইরান আমাদের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তবে এই আমদানি কিছুটা হলেও কমেছে। তেহরানের উপর নিষেধাজ্ঞা, ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ইরানকে তেলের দাম মেটানোর প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো বিষয়গুলিকে হিসাবে রাখলে অবশ্য এই হ্রাসের হার কিছুই নয়।” ‘পুরনো ব্যবস্থা’ থেকে তেল আমদানির ক্ষেত্রে নতুন কোনও সূত্রে পৌঁছতে সময় লাগবে বলেই মনে করছেন এই প্রাক্তন বিদেশসচিব।
পেট্রোলিয়ামমন্ত্রী জয়পাল রেড্ডি জানিয়েছেন, ভারতের প্রতি ইরানের মনোভাব যথেষ্ট ইতিবাচক। তাই অন্য কোনও জোটের সিদ্ধান্তে ভারতের প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আমেরিকার পরে ইউরোপের শীর্ষ ব্যাঙ্কগুলিও ইরানের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ায়, ভারতের পক্ষে তাদের মাধ্যমে টাকা ফেরত দেওয়াটা কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আজ সমাধানের পথ খুঁজতে বৈঠকে বসেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন, নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত তুরস্ক এবং ইরানের রাষ্ট্রদূত, পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের কর্তারা। কিছুদিন আগেই পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে ইরানে পাঠানো হয় কেন্দ্রীয় সরকারের একটি প্রতিনিধিদলকে। দলটি ফিরে রিপোর্ট জমা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে। আজ আলোচনা হয়েছে তারই ভিত্তিতে। প্রাথমিক ভাবে আলোচনা হয়েছে, কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ইরানের তেলের দাম মেটানো যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। |