প্রশাসনের দ্বারে বাবা-শ্বশুর
ঋণভারেই আত্মহত্যা গলসির চাষির, অভিযোগ পরিজনের
ধান ও আলুর দাম না পেয়েই ঋণের ভারে জর্জরিত চাষি সুশান্ত ঘোষ আত্মঘাতী হয়েছেন প্রায় দু’লক্ষ টাকা ঋণের হিসেব দিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে এই অভিযোগ জানালেন তাঁর বাবা ও শ্বশুর। সেই সঙ্গে, সুশান্তবাবুর দুই নাবালক পুত্রের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেওয়ার জন্যও মঙ্গলবার তাঁরা জেলা প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) শরদ দ্বিবেদীর সঙ্গে দেখা করে অভিযোগপত্র দেন মৃতের বাবা বিকাশচন্দ্র ঘোষ ও শ্বশুর শিবশঙ্কর ঘোষ। প্রশাসন যাতে মৃতের দুই নাবালক পুত্রের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয়, সেই আর্জিও তাঁরা জানিয়েছেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, “ওঁদের থেকে আমরা একটি আবেদনপত্র পেয়েছি। আবেদন সুবিবেচিত হবে, আপাতত এটুকুই বলতে পারি।”
গত ১৮ জানুয়ারি কীটনাশকে মৃত্যু হয় গলসির হিট্টা গ্রামের চাষি সুশান্তবাবুর। পরের দিনই জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা দাবি করেছিলেন, দেড় বছর আগে থেকে সুশান্তবাবুর ‘মানসিক ভারসাম্যহানির লক্ষণ’ দেখা গিয়েছিল এবং ডাক্তার দেখাতে হয়েছিল বলে আত্মীয়েরা পুলিশকে জানিয়েছেন। সে দিনই কলকাতায় তৃণমূলের পঞ্চায়েতি-রাজ সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, “যাঁরা আত্মহত্যা করেছেন, তাঁদের কারও অসুস্থতা ছিল।... চাষের সঙ্গে যোগ থাকার কোনও নথি ওই ব্যক্তিদের নামে মেলেনি।”
অতিরিক্ত জেলাশাসকের অফিসে তোলা নিজস্ব চিত্র।
সে দিনই ছেলের মানসিক সুস্থতা প্রসঙ্গে বিকাশবাবু বলেছিলেন, “ওর কোনও অস্বাভাবিকতা ছিল না। দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুমোতে পারত না। তাই ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খেত।” স্থানীয় খানো পঞ্চায়েতের প্রতিনিধি কুন্তল দত্তের বক্তব্যেও কার্যত তারই সমর্থন মেলে। এ দিনও বিকাশববাবু ফের বলেন, “আমার ছেলে সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিল। মাথাখারাপের কোনও লক্ষণই দেখা যায়নি।”
এ দিন বিকাশবাবুরা লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, স্থানীয় সমবায় সমিতির কাছ থেকে নেওয়া ৩২ হাজার টাকা ছাড়াও ব্যাঙ্ক এবং মহাজনের কাছে ঋণ ছিল সুশান্তবাবুর। (মহাজনি ঋণের কার্যকারণ কোথাও লিপিবদ্ধ থাকে না, সমবায় ও ব্যাঙ্কের দু’টি কৃষিঋণ) সব মিলিয়ে অঙ্কটা প্রায় দু’লক্ষ টাকা। গত বছর হিমঘরে রাখা প্রায় ২০০ বস্তা আলুতে তাঁর লোকসান হয়েছিল। এর উপরে, সরকারি দামে খরিফ ধান বিক্রি করতে পারেননি। চলতি বছরে সর্ষে ও আলু চাষ করেছিলেন। কিন্তু বৃষ্টি ও অন্য প্রাকৃতিক কারণে সর্ষের ফুল ঝরে যায়। নতুন করে চাষ করা আলুতেও ধসা রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। সব মিলিয়ে সুশান্তবাবু বড়সড় ধাক্কা খান।
চিঠিতে আরও জানানো হয়েছে, আর্থিক সঙ্কটে পড়ে তিনি সামান্য কিছু ধান ‘অভাবী বিক্রি’ করেছিলেন। সেই খবর পেয়ে পাওনাদারেরা বাড়িতে গিয়ে টাকার জন্য তাগাদা করতে শুরু করে। সুশান্তবাবু টাকা দিতে না পারায় গালিগালাজও করা হয়। এই অবস্থা আর সহ্য করতে না পেরেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন। সুশান্তবাবুর বড় ছেলে কুম্তলের বয়স ৯ বছর, ছোট ছেলে সৌম্যদীপের বয়স ৬। দু’জনেই স্কুলে পড়ে। বাবার অবর্তমানে যাতে তাদের পড়াশোনা থমকে না যায়, তার জন্য দায়িত্ব নিতে প্রশাসনকে আবেদন জানিয়েছেন দুই বৃদ্ধ।
এ দিনই আত্মঘাতী চাষির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার এবং গরিব চাষিদের কৃষিঋণ মকুবের দাবি তুলে জেলাশাসককে স্মারকলিপি দেয় এসইউসি। জেলার এসইউসি নেতা সুব্রত বিশ্বাসের অভিযোগ, “২০০৮ থেকে ২০১০ পর্যন্ত দু’বছরে রাজ্যে ১৯৯ জন চাষি আত্মঘাতী হয়েছিলেন। কিন্তু বামফ্রন্ট সরকার ঋণের কারণে চাষির আত্মহত্যার কথা কবুল করেনি। এই সরকারও একই পথের পথিক। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী আত্মঘাতীদের ‘চাষি’ স্বীকৃতিটুকুও দেননি। উল্টে বলেছেন, সবটাই অপপ্রচার। অথচ আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, বর্ধমান জেলায় গত অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে যে ৯ চাষির আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে, তাঁরা প্রত্যেকেই ঋণের দায়ে আত্মঘাতী হয়েছেন।”
চাষিদের সুলভে বীজ, কীটনাশক ও সেচের জল দিতে হবে এবং সরকারকে চাষিদের কাছ থেকে লাভজনক দামে ফসল সংগ্রহ করতে হবে বলেও তাঁরা দাবি করেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.