|
|
|
|
ধান কিনছে না সরকার, হতাশা ঘিরছে নন্দীগ্রামকে |
আনন্দ মণ্ডল • নন্দীগ্রাম |
নভেম্বরের মাঝামাঝি সহায়ক মূল্যে ধান কেনার কথা ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। এত দিনেও সরকারি ভাবে ধান কেনা কার্যত শুরুই হয়নি নন্দীগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকায়।
কৃষিজমি আঁকড়ে ‘কেমিক্যাল হাব’-এর জন্য জমি অধিগ্রহণ রুখে দিয়েছিল নন্দীগ্রাম। জমি-রক্ষার সেই আন্দোলন ‘মাইলফলক’ হয়েছে দেশের রাজনীতিতে। রাজ্য-রাজনীতিতে ঘটেছে পালাবদল। পাঁচ বছর আগে যাদের নেতৃত্বে জমি-রক্ষার আন্দোলন, সেই তৃণমূলই এখন রাজ্যে ক্ষমতায়। নন্দীগ্রাম থেকেই সূচনা ‘পরিবর্তনের হাওয়া’র। কিন্তু ‘পরিবর্তিত’ রাজ্যপাটে নন্দীগ্রামের চাষি সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রির সুযোগ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
কালীচরণপুরের কৃষিজীবী নিমাই দাস বললেন, “আমাদের এখানে এক বারই ধান হয়। বর্ষার জলে আমনের চাষ। সেচের সুযোগ নেই। তাই বোরো চাষ নামমাত্র। বাড়ির জন্য সারা বছরের ধান রেখে উদ্বৃত্ত আমন বিক্রি করেই যতটুকু লাভ।” তাঁর অভিযোগ, “সরকার সহায়ক মূল্যে ধান কিনলে খোলা বাজারও চাঙ্গা থাকে। কিন্তু সরকার ধান কিনছে না। বাজারেও দাম পড়ে গিয়েছে।”
নিমাইবাবুর মতো একাধিক কৃষিজীবীর দাবি, সরকার ঘোষিত সহায়কমূল্য যেখানে প্রতি কুইন্টালে ১,০৮০ টাকা (মোটা ধান), সেখানে বাজারে ধান বিকোচ্ছে বড়জোর ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কুইন্টাল দরে। চাষের খরচও ওঠে না এমন দামে ফড়ে-দালালদের কাছে ধান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। ধান বিক্রির সুযোগ মিলছে না দেখে অনেকে ধান ঝাড়াই পর্যন্ত করেননি। গাদা করে রেখে দিয়েছেন।
সোনাচূড়ার জগন্নাথ বেরা ভাল দাম পাওয়ার আশায় ঝাড়াইয়ের পরে ৯০ বস্তা মিহি দুধেশ্বর ধান আলাদা করে রেখেছিলেন। ফড়েরা যা দাম দিতে চেয়েছে, বেচলে লোকসান বাঁধা। সহায়কমূল্যে কবে ধান কেনা হবে জানতে চালকলে গিয়েছিলেন। চালকল কর্তৃপক্ষ জানান, আপাতত ধান কেনার পরিকল্পনা নেই।
নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি এবং রাজ্য সমবায় দফতরের আওতাধীন ‘তমলুক কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্ক’-এর সহ-সভাপতি মেঘনাদ পাল অবশ্য দাবি করেছেন, “তেরোপেখিয়া-নন্দীগ্রাম মার্কেটিং সোসাইটি কয়েক দিন আগে, গত ১৬ জানুয়ারি থেকে ধান কেনা শুরু করেছে। ছ’টা পঞ্চায়েত এলাকার ধান এই মার্কেটিং সোসাইটি মারফতই কেনা হবে বলে ঠিক হয়েছে। তবে সোনাচূড়া, কালীচরণপুরে কবে থেকে ধান কেনা হবে, এখনও ঠিক হয়নি। সামসাবাদ, গোকুলনগরেও ধান কেনা শুরু হয়নি।” মেঘনাদবাবুও মানছেন, “অনেক আগেই ধান কেনা শুরু হলে ভাল হত। কিন্তু টাকার অভাবে হয়নি।” তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী আবার নন্দীগ্রামে ধান কেনা নিয়ে কোনও অভিযোগই ওঠেনি বলে দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “দু’টি ব্লকের ১৭টি পঞ্চায়েতের সর্বত্রই ধান কেনা শুরু হয়েছে। কোথাও কোনও সমস্যা হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
২০০৭-এর ১৪ মার্চ, পুলিশি অভিযানের দিন জমি অধিগ্রহণ রুখতে গিয়ে গুলিতে প্রাণ গিয়েছিল সোনাচূড়ার বধূ সুপ্রিয়া জানার। তাঁর ছেলে সৌম্যকান্তি অবশ্য বলছেন, “চাষই আমাদের ভরসা। গত বারের আমনেও দাম ওঠেনি। এ বারও চাষির ঘরে ধান পড়ে।” তাঁর দাবি, দানাপানি জোটানোই ‘দায় হয়ে ওঠায়’ এলাকার অনেক যুবকই ভিন্রাজ্যে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের বা অন্য কাজে যাচ্ছেন।
নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতি থেকে জেলা পরিষদসবই তৃণমূলের দখলে। ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ মিলছে না? সৌম্যকান্তির বক্তব্য, “ও সব নিয়ে কিছু না বলাই ভাল। আমরা কিছু জানি না। গ্রামের ভিতর কোথাও কোনও কাজ হয়েছে কি না বলতে পারি না।” ওই যুবক নিজেই ঘুরিয়ে দেখান আশপাশের রাস্তাঘাট। তাঁর অভিযোগ, “সোনাচূড়া থেকে হাজরাকাটার রাস্তায় এখন সাইকেল চালানোই যায় না। পাঁচ বছরে রাস্তা মেরামত হয়নি।”
জেলিংহ্যামে রেলের কারখানার কথা শুনেছেন তা-ও বছরখানেক। “কিন্তু কাজ শুরুর খবর নেই”, বলেন সৌম্যকান্তি। তাঁর প্রশ্ন, “নন্দীগ্রামের নাম সবাই জানে। কিন্তু নন্দীগ্রাম কী পেল বলুন তো!” |
মিলল বৃদ্ধের দেহ, ছেলে ও বউমা ধৃত
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
ঝুলন্ত অবস্থায় এক বৃদ্ধের দেহ উদ্ধারের পরে প্রতিবেশীদের অভিযোগের ভিত্তিতে বৃদ্ধের ছেলে ও ছেলের বউকে গ্রেফতার করল পুলিশ। এ ঘটনা হলদিয়ার সুতাহাটা থানার গুয়াবেড়িয়া গ্রামের। শনিবার সকালে বাড়ির একটি ঘর থেকে উদ্ধার হয় শশাঙ্ক কর (৬৫) নামে বৃদ্ধের দেহ। তিনি একটি বহুজাতিক সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। প্রতিবেশীদের অভিযোগ, বড় ছেলে জীবনানন্দ কর ও ছেলের বউ সুমিত্রা করের অত্যাচারের পরিণতিতেই মারা গিয়েছেন শশাঙ্কবাবু। বৃদ্ধের মেয়েও পরে পুলিশের কাছে একই অভিযোগ করেন। |
|
|
|
|
|