কলকাতার বাসিন্দা নন। কিন্তু এমন একটা পরিবারে বড় হয়েছেন, যেখানে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে নানা কাহিনি সব সময়েই তাঁকে ঘিরে থেকেছে।
পিটার অরুণ পাফ। সুভাষচন্দ্র বসুর কন্যা, অনিতা বসু পাফের পুত্র। জার্মানির মিউনিখ শহরে বসে তিনিই পরিচালনা করে ফেলেছেন একটি আলেখ্য। সঙ্গে রয়েছেন তাঁর দুই বন্ধু, সান্দ্রা চট্টোপাধ্যায় এবং অনির্বাণ ঘোষ। নৃত্যশিল্পী সান্দ্রাও মিউনিখেই মানুষ, বাবা ছিলেন বাঙালি। আর, অনির্বাণ কলকাতার ছেলে। এখন মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করছেন।
পিটারদের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পরিচয় কী ভাবে? পিটার বললেন, পরিবারের প্রবীণদের মুখে রবীন্দ্রনাথের বহু গল্প শুনতেন তিনি ছোটবেলা থেকেই। সে সব অনেকটাই পারিবারিক আখ্যান আর তার সঙ্গে খুব বেশি করেই ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথের ভূমিকার কথা। রবীন্দ্রনাথই তো সুভাষচন্দ্রকে ‘দেশনায়ক’-এর আখ্যা দিয়েছিলেন! |
নাটকের সরঞ্জাম কিনছেন পিটার এবং সান্দ্রা। ছবি পিটার অরুণ পাফের সৌজন্যে |
তিন জনেই ভাবছিলেন, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কিছু করার কথা। বিশেষত রবীন্দ্রনাথ যে ভাবে ‘পাশ্চাত্য’কে দেখেছেন, প্রাচ্যের শিকড় নিয়ে পাশ্চাত্যে বড় হওয়া এই তরুণ-তরুণীর কাছে সেটা বিশেষ আগ্রহের বিষয় ছিল। ভিডিওগ্রাফি, নৃত্য এবং ধারাভাষ্যের মাধ্যমে ওঁরা সেই ভাবনাটাই মেলে ধরতে চাইলেন। রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধ ও জার্মানিতে গিয়ে লেখা চিঠিপত্র থেকে নানা অংশ বাছাই করার কাজে ওঁদের সাহায্য করলেন কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। বাংলা ধারাভাষ্যও তাঁর। গান গেয়েছেন শর্মিলা বসু। তৈরি হল, ‘টেগোর অন ভিনাইল’। ভিনাইল, অর্থাৎ গ্রামোফোন রেকর্ড। সান্দ্রার বাবা কমলকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ছিল বই আর গানের রেকর্ডের বিপুল সংগ্রহ। রবীন্দ্রনাথ তথা বাংলা গানের সঙ্গে তাঁর পরিচয় সে ভাবেই। এই আলেখ্যে মঞ্চে একক শিল্পী তিনি। মিউনিখের সিটি কাউন্সিলের আয়োজনে পিটাররা গত বছরে প্রথম বার মঞ্চস্থ করেন তাঁদের রবীন্দ্র-আলেখ্য। মাস ছয়েক আগে সেটি ভারতে প্রথম বার মঞ্চস্থ হয় চেন্নাইয়ে। অবশেষে এ বার কলকাতায় এলেন পিটাররা। আজ, রবিবার শহরের মঞ্চে নেতাজি-দৌহিত্রের রবীন্দ্র-তর্পণ। সোমবার ই সুভাষচন্দ্রের ১১৬ তম জন্মদিন।
কলকাতায় প্রথম মঞ্চায়ন হলেও কলকাতা শহর কিন্তু অপরিচিত নয় পিটারের। মাঝেমধ্যেই কলকাতায় আসেন। সান্দ্রা আসেন তাঁদের আসানসোলের বাড়িতে। ওঁদের এই আলেখ্যে একটা বড় অংশ জুড়ে ব্যবহার হয়েছে কলকাতার নাগরিক জীবনের শব্দমালা। শব্দ সংযোজনার দায়িত্বে ছিলেন পিটারই। ২০০৬-৭ নাগাদ কলকাতা শহরের শব্দ রেকর্ড করে রেখেছিলেন তিনি। সেগুলো এখানে কাজে লাগল। কেন কলকাতা? পিটারের মনে হয়েছে, কলকাতার আবহকে বাদ দিয়ে শুধু জার্মানিতে বসে রবীন্দ্রনাথকে বোঝা সম্ভব নয়।
সেই কলকাতাতেই এ বার তাঁদের রবীন্দ্র-পরিবেশনা। স্বভাবতই আলাদা উত্তেজনা পিটারের মনে। বসু পরিবারের সকলকেই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সুগত বসু ফোনে জানান, “জয়পুর থেকে রবিবারে কলকাতায় ফিরতে রাত হবে। তবে মা (কৃষ্ণা বসু) যাবেন।” |