তৃণমূলে যেতে চান লেবুও, শোরগোল জোটে
জোট-রাজনীতিতে ফের ছায়া ফেলতে চলেছে মালদহের গনি পরিবার! প্রয়াত বরকত গনি খানের ভাই এবং কংগ্রেসের তরফে রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য আবু নাসের খান চৌধুরী (লেবু) এ বার ‘শর্তসাপেক্ষে’ তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। তৃণমূলের টিকিটে রাজ্যসভায় যেতে ‘আগ্রহী’ বলে তিনি জোট-শরিককে জানিয়ে দিয়েছেন। ‘পদ পেলে’ তিনি যে কংগ্রেস ছাড়তে চান, প্রকাশ্যেই তা জানাতে দ্বিধা করেননি লেবুবাবু।
তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এখনও বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত ভাবে কিছু বলতে চাননি। লেবুবাবুকে দলে পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে হইচই করতেও তাঁরা নারাজ। সুজাপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের প্রতিমন্ত্রী লেবুবাবুর সঙ্গে তাঁদের কিছু ‘প্রাথমিক’ আলোচনা হয়েছে, এইটুকুই বলছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
তবে কয়েক দিন আগেই যে-হেতু গনি পরিবারের শাহনওয়াজ কাদরি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, তাই লেবুবাবুর এই ইচ্ছাপ্রকাশ ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ হয়ে উঠেছে। শাহনওয়াজ কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে গিয়েছিলেন দুই শরিকের মধ্যে কাজিয়া তুঙ্গে থাকার সময় এবং তৃণমূলের তরফে তাঁর দলে যোগদানকে মহাকরণ থেকে ‘প্রচার’ করা হয়েছিল। জোট-কাজিয়া আপাতত স্তিমিত হলেও টানাপোড়েন পুরোপুরি মেটেনি। সেই সময়েই লেবুবাবুর প্রস্তাব তৃণমূল শেষ পর্যন্ত মেনে নিলে কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া কী হয় এবং জোটের সমীকরণে তার কী প্রভাব পড়ে এই নিয়েই কৌতূহল তৈরি হয়েছে দুই দলেই।
তবে তিনি যে কংগ্রেস ছাড়তে চান, রবিবার কোতোয়ালির বাড়িতে বসে তা গোপন করার কোনও চেষ্টাই করেননি লেবুবাবু। এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, আমি তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে প্রস্তাব দিয়েছি। যদি একটা ভাল পদ পাই, তবে কেন যাব না? মুকুল রায়, সুব্রত বক্সীরা আমায় ডেকে পাঠিয়েছিলেন। ওঁদের সঙ্গে মৌখিক ভাবে সব কথা হয়েছে। তবে তৃণমূলের পক্ষ থেকে কোনও পাকা প্রস্তাব আসেনি।”
তৃণমূল নেতৃত্ব লেবুবাবুর মতো এত ‘উচ্চ কণ্ঠে’ কিছু বলছেন না। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুলবাবুকে এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, “আবু নাসের খান চৌধুরীর সঙ্গে আমার দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ওঁর তৃণমূলে যোগদানের ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনও আলোচনা হয়নি।” আর তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি ও দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ সুব্রতবাবু লেবুবাবুর দাবি অস্বীকার করেছেন। সুব্রতবাবুর বক্তব্য, “আমার সঙ্গে ওঁর কোনও কথা হয়নি।”
লেবুবাবুর বিবৃতিকে কেন্দ্র করে মালদহে অবশ্য শোরগোল পড়ে গিয়েছে প্রত্যাশিত ভাবেই। জোট শিবির সূত্রের খবর, ভাগ্নি শাহনওয়াজ কাদরির সঙ্গেই কলকাতায় তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন লেবুবাবু। ওই বৈঠকের পরেই শাহনওয়াজ তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। আর লেবুবাবু তৃণমূল নেতৃত্বকে প্রস্তাব দিয়েছেন, তাঁকে রাজ্যসভার সদস্য করা হোক। প্রসঙ্গত, আগামী এপ্রিলে এ রাজ্য থেকে রাজ্যসভার ৫টি আসনে নির্বাচন হওয়ার কথা। বিধানসভায় শক্তির বিচারে তার মধ্যে ৪টি আসন শাসক জোটের দখলে আসতে পারে। তবে এক জন সাংসদ নির্বাচনে যে হেতু ন্যূনতম ৪৯টি ভোট লাগবে, তাই কংগ্রেসের একার জোরে (৪২ বিধায়ক) কোনও আসন বার করা সম্ভব নয়।
জেলা তৃণমূলের তরফেও লেবুবাবুর দলে আসার আগ্রহের কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেছেন, “আমি জানি, আবু নাসের খান চৌধুরী তৃণমূলে ঢোকার ইচ্ছা প্রকাশ করে দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি তৃণমূলে এলে স্বাগত জানাব। এটা শুনে ভাল লাগছে, দেরিতে হলেও উনি বুঝেছেন কংগ্রেসে থেকে কোনও কাজ করা যাবে না!”
গনি-পরিবারে প্রতিক্রিয়া আপাতত দু’রকম। কংগ্রেস সাংসদ তথা প্রদেশ যুব কংগ্রেস সভাপতি মৌসম বেনজির নূরের কথায়, “শুনেছি, লেবুমামাও তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে ওই দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কে কোন দলে যাবেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার।” জেলার আর এক সাংসদ তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি আবু হাসেম খান চৌধুরির (ডালু) বক্তব্য, “দাদা তৃণমূলে যাচ্ছেন, এমন খবর আমার জানা নেই। মালদহে ফিরে দাদার সঙ্গে কথা বলব।”
কেন তিনি কংগ্রেস ছাড়তে চান, তার নানা কারণ দেখিয়েছেন লেবুবাবু। তাতে গত লোকসভা নির্বাচনে টিকিট না-পাওয়া থেকে মন্ত্রিত্ব নিয়ে ক্ষোভ, সবই প্রকট হয়েছে। তাঁর কথায়, “আমি চেয়েছিলাম আমাকে সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর দেওয়া হোক। সাচার কমিটির রিপোর্ট পড়ে দেখেছিলাম, ওই দফতরে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আমাকে তা দেওয়া হয়নি। আমাকে যে দফতর দেওয়া হয়েছে, তাতে মালদহ তথা উত্তরবঙ্গের জন্য কোনও কাজ করা যাবে না। এমন দফতরের মন্ত্রী থেকে কোনও লাভ নেই! কেবল লালবাতি ও পুলিশের এসকর্ট নিয়ে কী লাভ?” তবে দফতর বণ্টনে কংগ্রেসের কোনও ‘পছন্দ’ কাজ করেছিল, নাকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই দফতর ঠিক করেছিলেন, এই বিষয়ে লেবুবাবুর কাছ থেকে কোনও উত্তর মেলেনি।
গত লোকসভার টিকিট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে লেবুবাবু বলেছেন, “আমার বরাবরই ইচ্ছে ছিল সংসদে যাওয়ার। এআইসিসি আমাকে নানা ভাবে অপদস্থ করেছে। মসুকে (মৌসম) টিকিট দিয়ে দিল! কংগ্রেসের কিছু নেতা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলেন, যাতে সাংসদ হতে না পারি। সাংসদ হতে চেয়েছিলাম মালদহের জন্য কিছু করব বলে।” ডালুবাবু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হতে না-পারাতেও ‘দুঃখের অন্ত’ নেই তাঁর। লেবুবাবু বলেন, “কংগ্রেস তো আমাদের ভুলে গিয়েছে! আমাদের পরিবার কংগ্রেসের পরিবার। কংগ্রেস এখন কোতুয়ালিকে কোনও মর্যাদা দেয় না। ডালুকে মন্ত্রী করার জন্য কত বার সনিয়াজির (গাঁধী) কাছে গিয়েছি। আমাদের মর্যাদা দেওয়া হয়নি। কী দোষ করেছি আমরা? আমাদের কংগ্রেস বঞ্চিত করছে।”
কংগ্রেস ছেড়ে দেওয়া কোনও ‘অপরাধ’ (ক্রাইম) নয় বলে মনে করেন লেবুবাবু। তাঁর সাফ কথা, “কংগ্রেস আমার ধর্ম নয়। আমি এমন কোনও পরিকল্পনা নিইনি যে, আমাকে কংগ্রেসেই থাকতে হবে! গাঁধী পরিবারে বরুণ তো বিজেপি-র সাংসদ। সেখানে আমি দল ছাড়লে ক্ষতি কী!” তাঁর আরও বক্তব্য, “কংগ্রেস ও তৃণমূলের মতাদর্শের পার্থক্য নেই। তৃণমূল যে ভাবে বাংলাকে গড়তে চাইছে, আমিও সে ভাবেই মালদহকে গড়তে চাইছি। কিন্তু কিছুই করতে পারছি না। কাজ যদি করতেই না-পারি, তা হলে রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়া ভাল!”
কিন্তু তৃণমূল কি তাঁর ‘শর্ত’ মেনে তাঁকে দলে নেবে? লেবুবাবুর ‘মোক্ষম’ জবাব “ওরা যদি মনে করে আমি মালদহের সম্পদ (অ্যাসেট), বাংলার সম্পদ, তবে আমাকে দলে নেবে!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.