লগ্নির জগতে সকলের সমান সাফল্য আসে না। জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, তৎপরতা এবং কিছুটা ভাগ্যের উপর নির্ভর করে সাফল্য। আর প্রয়োজন কৌশল। খেলার মতো, সঞ্চয়ে সাফল্যের জন্যও জরুরি নিজস্ব কৌশল। বাজার এখন দ্রুত পরিবর্তনশীল। পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজের কৌশল পরিবর্তন না-করলেই বিপদ। তবে কিছু নিয়ম আছে, যা মেনে চললে ঝুঁকি বাগে রাখা যায় এবং দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে ভাল লাভও ঘরে তোলা যায়। আজ আমরা অভিজ্ঞতালব্ধ এমনই একটি নিয়মের তালিকা তৈরি করার চেষ্টা করব।
১) নিজের ঝুঁকি নেওয়ার সামর্থ্য সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা করুন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে আগে বিচার করুন লগ্নিযোগ্য তহবিলের কতটা আপনি সম্পূর্ণ সুরক্ষিত এবং কতটা ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্পে লগ্নি করবেন।
২) সঞ্চয় এবং লগ্নির অভ্যাস শুরু করা উচিত কর্মজীবন শুরু হওয়ার সময় থেকেই এবং তা ছেদহীন ভাবে চালিয়ে যেতে হবে গোটা চাকরিজীবন ধরেই। ছোট হলেও দীর্ঘমেয়াদে নিয়মিত সঞ্চয় ক্রমপুঞ্জিত সুদ-সহ গড়ে দিতে পারে এক বিরাট তহবিল। দীর্ঘমেয়াদে সুদ, সুরক্ষা এবং কর সাশ্রয়, সব দিক থেকেই পিপিএফ আদর্শ সঞ্চয় প্রকল্প।
৩) চড়া সুদের এই জমানায় লগ্নির একাংশ সরিয়ে আনুন স্থির আয় প্রকল্পে। এমন সব জায়গায় টাকা রাখুন, যেখানে আয় এবং সুরক্ষা সম্পর্কে নিশ্চিন্ত থাকবেন।
৪) সংস্থায় কর্মরত ব্যক্তিরা বাধ্যতামূলক জমা ছাড়াও অতিরিক্ত টাকা কাটাতে পারেন প্রভিডেন্ট ফান্ডে। এখানে দীর্ঘমেয়াদে সবার অলক্ষে তিল তিল করে জমে উঠতে পারে একটি অতিরিক্ত তহবিল। সঙ্গে পাওয়া যাবে করছাড় বাবদ সুবিধাও।
৫) সুদ যখন বাড়তে থাকে, তখন বাজার দর পড়ে সরকারি ও বেসরকারি বন্ড এবং ঋণপত্রের। ঠিক উল্টোটা হয় সুদের হার কমা শুরু হলে। ভারতে সুদের হার এখন শীর্ষে। এর পরেই হয়তো তা কমতে শুরু করবে। অর্থাৎ এখন বন্ড কিনলে অদূর ভবিষ্যতে তার দাম বাড়বে বলে আশা করা যায়।
৬) যাঁদের শেয়ারে লগ্নিতে আপত্তি নেই, তাঁদের অপেক্ষা করতে হবে সুযোগের জন্য। বাজার চড়া থাকলে লগ্নিযোগ্য তহবিল ছোট মেয়াদে ব্যাঙ্ক বা অন্যত্র রাখতে হবে। শেয়ার কিনতে হবে বাজারে মাঝারি থেকে বড় আকারের পতন হলে। যে বাজারে শুধুমাত্র বিক্রেতার ভিড় এবং ক্রেতার অভাব, সেই বাজারে একটু একটু করে লগ্নি শুরু করতে হবে। বাজার ওঠার লক্ষণ স্পষ্ট হলে পূর্ণ মাত্রায় লগ্নি করতে হবে বাছাই করা শেয়ারে। এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে, কোনও লগ্নিই চিরকালের জন্য নয়। অর্থাৎ বাজার যখন তেজী হবে, তখন সুযোগ বুঝে শেয়ার বিক্রি করে লাভ ঘরে তুলতে হবে। ভাল শেয়ার তেজী বাজারে বিক্রি করে তা আবার পড়তি বাজারে কেনা যেতে পারে। এক বছর ধরে রাখার পরে বিক্রি করলে লাভের উপর কোনও কর দিতে হবে না। এর আগে বিক্রি করলেও কর পড়বে মাত্র ১৫%।
৭) শেয়ার কেনাবেচায় যথেষ্ট জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা না-থাকলে মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে পরোক্ষ ভাবে অংশগ্রহণ করা যায় শেয়ার বাজারে। পড়তি বাজারে প্রতি মাসে নিয়মিত লগ্নি করা যেতে পারে সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান বা এস আই পি পদ্ধতিতে। যাঁরা বাজারের ওঠা-পড়ার পুরো ঝুঁকি নিতে চান না, তাঁরা ব্যালান্সড ফান্ডের দিকে ঝুঁকতে পারেন। অতি সাবধানীরা এই বাজারে লগ্নি করতে পারেন বন্ড ফান্ড বা ইনকাম ফান্ড অর্থাৎ ঋণপত্র নির্ভর ফান্ডে। প্রসঙ্গত, মিউচুয়াল ফান্ড থেকে প্রাপ্ত ডিভিডেন্ড পুরোপুরি করমুক্ত।
৮) বাজারে আসতে শুরু করেছে করমুক্ত বন্ড। উঁচু হারের করদাতারা এ ধরনের বন্ডে লগ্নি করে দীর্ঘমেয়াদে কর রেহাইয়ের ব্যবস্থা করতে পারেন। বাজারে নথিবদ্ধ হলে এই বন্ডের জন্য চড়া দামও পাওয়া যেতে পারে।
৯) স্বনিযুক্ত মানুষেরা এবং যে-সব সংস্থার কর্মীদের পেনশনের ব্যবস্থা নেই, তাঁদের উচিত দীর্ঘমেয়াদি কোনও পেনশন ফান্ডে যোগ দেওয়া। দীর্ঘমেয়াদে সঞ্চয় করা যায় পিপিএফ অ্যাকাউন্টেও।
১০) যাঁরা কোনও রকম ঝুঁকিতে জড়াতে চান না, তাঁরা সুদ কমার আগেই লম্বা মেয়াদের জন্য খুলতে পারেন রেকারিং ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট এবং নিয়মিত জমিয়ে যেতে পারেন সঞ্চয়ের একাংশ।
১১) ভবিষ্যতের হঠাৎ প্রয়োজন এবং বেড়ে ওঠা খরচের মোকাবিলার জন্য কোনও সুরক্ষিত প্রকল্পে নিয়মিত লগ্নির কথা ভাবতে পারেন অবসরপ্রাপ্ত এবং প্রবীণ নাগরিকেরাও। |